২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ, রাষ্ট্রপতিকে প্রস্তাবনা দেবে বিএনপি

Saidul Islam

প্রকাশিত: ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ, ৩০ আগস্ট ২০২১

বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ, রাষ্ট্রপতিকে প্রস্তাবনা দেবে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল >> বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে ব্যর্থ বলে আসছে বিএনপি। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে তারা জাতিকে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারেনি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তাই কয়েক মাস পর নতুন যে কমিশন গঠন হবে, সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেবে বিএনপি। এতে ইসি গঠন প্রক্রিয়া এবং কেমন ব্যক্তিদের দিয়ে তা গঠন করা উচিত- সে বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি- বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। যদি আগের পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়, আমাদের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আমরা চিন্তা করছি, সময়মতো রাষ্ট্রপতিকে আমাদের প্রস্তাব দেব।’

বিএনপি মনে করে, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেনি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও ছিল একই চিত্র। যার কারণে ভোটাররা নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এমন বাস্তবতায় গত মার্চে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও সরকারের অধীনে সব ধরনের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত আছে বিএনপি। দলটি এ-ও মনে করে, ভোট সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে

গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন। ক্ষমতাসীনদেরও প্রভাবমুক্ত হতে হবে। কিন্তু গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে, দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে ইসি নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারেনি। সবকটি নির্বাচনে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।

২০১৭ সালে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে বর্তমান কমিশন গঠন করা হয়। আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার একেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এই কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগেই নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নাম চূড়ান্ত করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের আগেও রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। পরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপেও বসেছিল, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তাতে অংশ নেন।

জানা গেছে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে ২০-দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ জোটের বাইরের বিরোধী রাজনৈতিক দলের কাছেও চিঠি দেবে বিএনপি। এই একটি ইস্যুতে সবাইকে এক টেবিলে এনে কমন প্রস্তাব দিতে চায় দলটি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে ২০ দলীয় জোটের নিবন্ধিত দলগুলোকে কমন নির্বাচন কমিশনের জন্য কমন নাম দিতে বলা হয়েছিল।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বিএনপি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। প্রস্তাবে বিএনপি সাবেক একজন প্রধান বিচারপতিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল, যারা নতুন নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করবেন। তাদের মধ?্য থেকে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।

নতুন কমিশনের বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হওয়ার পর সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নতুন নির্বাচন কমিশন ইস্যুটি অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নির্বাচন বিশেজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেন।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, এবারও রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেবেন। ২০১২ সালেও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার আগে সংবিধান সংশোধন করে কমিশন সদস্য বাড়িয়ে পাঁচজন নির্দিষ্ট করা হয়। একজন নারী সদস্য রাখার বিধানও যুক্ত করা হয়।

জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুবার সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এর বাইরে আরও দুবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু সেই আলোচনায় কমিশন গঠনে সব দল একমত হতে পারেনি।

এক নেতা বলেন, এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমেই কমিশন গঠন করা হবে। সার্চ কমিটিতে সবার নাম দেওয়ার সুযোগ থাকবে। কমিটি যাদের নাম সুপারিশ করবে, তাদের মধ্য থেকেই রাষ্ট্রপতি পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ দেবেন। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেন। তবে রাষ্ট্রপতিকে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়োগ দিতে হয়।

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, সার্চ কমিটি বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন গঠন মুখ্য নয়। মুখ্য হলো সরকারের ভূমিকা। যারা সরকারে থাকেন, তারা যদি কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেন এবং সহযোগিতা করেন তা হলে তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেন। আর এ জন্য প্রয়োজন নিরপেক্ষ সরকার। আওয়ামী লীগ তো সংবিধান সংশোধন করে নিরপেক্ষ বা কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা তুলে দিয়েছে। তারা তো কাজ করবেন দলীয় সরকারের অধীনে।

বিএনপি মনে করেন, ‘সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি আলাদা আইন করা দরকার। সংবিধানে আইনের কথা বলাও আছে। আইন যদি করা হয়, তখন তারা আইনের আলোকে কাজ করতে পারবেন। এখন যেটা হয় তারা সেটা পারেন না। তবে সেজন্য যোগ্যতা সম্পন্ন, সৎ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিও দরকার। কারণ স্বাধীনভাবে কাজ করার মানসিকতা ও যোগ্যতা থাকতে হয়।

তার মতে, ‘সার্চ কমিটি করে বা সর্বদলীয় করে কোনো লাভ নাই। কারণ, তারা দলীয় আনুগত্য করে। আর সার্চ কমিটি তো আইনে নেই। তাই সংবিধানে আইনের যে কথা আছে সেই আলোকে আইন করতে হবে। তাহলে আইনের আওতায় যোগ্য লোক নিয়োগ পাবেন। আইনে যোগ্যতার কথা বলা থাকবে।’

বিএনপির অপর এক নেতা বলেন, ইসিকে সরকার কীভাবে সহযোগিতা করবে তাও বলা থাকে। নির্বাচনের সময় পুলিশ বা প্রশাসন কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন তাও বলা থাকবে। কিন্তু একবার নিয়োগ করলেই তাদের আর অপসারণ করা যাবে না, তারা যা খুশি তাই করবেন, এটি ঠিক নয়। হাইকোর্টের বিচারপতিদের যেভাবে ইমপিচমেন্ট করা যায় তাদের সেভাবে করা যায়। তবে এ জন্য আইন করতে হবে।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন