২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বর্ষার শুরুতে বেতাগীতে জমজমাট চাঁইয়ের হাট

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:০১ অপরাহ্ণ, ২১ জুন ২০২০

হৃদয় হোসেন মুন্না, বেতাগী:: উপকূলীয় জেলা বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিভিন্ন বাঁজার ও বন্দরে ক্রেতা-বিক্রেতায় জমজমাট হয়ে উঠেছে চাঁইয়ের (বাঁশের তৈরি মাছ ধরার উপকরণ) হাট। বিষখালী, পায়রা ও সুগন্ধা নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে উপজেলার কৃষক, জেলে ও শ্রমিকদের মাঝে শুরু হয়েছে চাঁই দিয়ে মাছ ধরার ব্যস্ততা। প্রতি সপ্তাহের শনিবার ও বুধবারের হাটের দিন জমজমাট এই চাঁইয়ের হাট বসে।

বিষখালী নদীপাড়ের উপকূলীয় এ উপজেলা বর্ষা মৌসুমে দেশীয় মাছের জন্য বিখ্যাত। এ উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ২টি নদী এবং ১৩টি খাল। বর্ষা এলেই এ উপজেলার গ্রামের মানুষ চাঁই, বুছনা ও চড়গড়া, পোলো দিয়ে মাছ ধরার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

গতকাল শনিবার সরেজমিনে বেতাগী পৌরসভার সাপ্তাহিক হাট ঘুরে দেখা গেছে, খালের পাড়ের বিশাল অংশজুড়ে বসেছে এ হাট। বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা চাঁই বিকিকিনির জন্য হাটে ভিড় জমাচ্ছেন। বছরে চৈত্র থেকে শ্রাবণ এই ৫ মাস নদী ও খাল বিলে মাছ বেশি পাওয়া যায় বলে এই সময়কে চাঁইয়ের মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। হাটে বিভিন্ন ধরনের চাঁই বেচাকেনা হয়। এর মধ্যে খলনী, বুচনি, ময়ুরপঙ্খী, গোল চাঁইয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ফলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার এসব উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বিক্রেতারা ভ্যান বোঝাই করে এসব উপকরণ বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে আসেন। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ মাছ ধরার জন্য এসব উপকরণগুলো কিনতে এখানে ভিড় জমান। প্রতিটি খলনী চাঁই বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, বুচনি চাঁই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, ময়ুরপঙ্খী ১২৫ থেকে ১৫০ টাকা, গোল চাঁই ৬০ থেকে ১০০ টাকা। এ ছাড়াও চাঁইয়ের গড়া (বাঁশের তৈরি বেড়া) বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৪০ থেকে ৮০ টাকা। প্রতি হাটে এ বাঁজারে প্রায় হাজার খানেক চাঁইয়ের বেচাকেনা হয়।

চাঁই ব্যবসায়ী মিজান জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তার এলাকার অনেকেই এ ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে হাটবাজারে আগের মত চাঁইয়ের বেচাকেনা নেই। প্রতিটি চাঁই তৈরিতে ৪০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ হলেও এ বছর তেমন দাম পাচ্ছেন না।

চাঁইয়ের কারিগর সুজন বলেন, বর্তমানে বাঁশ ও সুতোর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় যে হারে চাঁইয়ের উৎপাদন খরচ বেড়েছে সে হারে দাম বাড়েনি ফলে তারা এখন আর এ ব্যবসায় তেমন একটা লাভ করতে পারছেন না। এ ছাড়া এ ব্যবসার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হয় না বলে বেসরকারি এনজিও ও স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে হয় তাদের। সেই ঋণ পরিশোধ করে যে সামান্য আয় থাকে তা দিয়ে পরিবার-পরিজনদের নিয়ে সংসার চালাতে বড়ই কষ্ট করতে হয় তাদের।

হোসনাবাদ ইউনিয়ন থেকে চাঁই কিনতে আসা হানিফ সরকার জানান, তিনি প্রতি বছরই চাঁই কিনে থাকেন। চাঁইতে চিংড়ি, পুঁটি, বাইল্যা, টেংরা সহ বিভিন্ন রকমের দেশি মাছ ধরা পরে। তিনি প্রতিদিন চাঁইয়ে যে মাছ পান তা কিছু অংশ পরিবারের জন্য রেখে বাকিগুলো বাঁজারে বিক্রি করে দেন।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন