২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বসতবাড়ি থেকে উৎখাত আতঙ্কে বরিশালের ১৯ পরিবার

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:০০ অপরাহ্ণ, ১২ আগস্ট ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: ক্রয়সূত্রে ৩৮ বছর ধরে ভোগ দখলীয় বসতবাড়ি থেকে ১৯টি পরিবারকে উৎখাতের জন্য নিজ বাড়িতে দাফন করতে দেয়া হয়নি ত্যাগী ও নির্যাতিত যুবলীগ নেতার লাশ। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার আশোকাঠী গ্রামের।

স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির হুমকির মুখে অবশেষে যুবলীগ নেতা মোঃ আসাদুজ্জামান কাবুল সরদারকে গণকবরে দাফন করা হয়েছে। এনিয়ে স্থানীয় প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে দীর্ঘদিন থেকে বসতবাড়ি করে ভোগ দখলীয় ১৯টি পরিবারের শেষ সম্বল থেকে উৎখাত করার জন্য নানা অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবার সকালে ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৯৮২ সালে ওই গ্রামের মৃত তৈজদ্দিন সরদারের স্ত্রী চাঁনবরু বিবি আশোকাঠী মৌজায় জেএল ১৩৮, এসএ খতিয়ান ১৭০ ও ২২৪ (২১৬, ২২৬, ২২৭ ও ২২৮ নং দাগের) তিন একর সম্পত্তি একই এলাকার আব্দুল লতিফ হাওলাদার গংদের কাছ থেকে সাব-কবলা দলিল মূলে ক্রয় করে ভোগদখল করে আসছেন (দলিল নং-৩১৪২)। ১৯৯২ সালে ওই সম্পত্তির মধ্য থেকে একটি অংশ সরকার ভিপি সম্পত্তি বলে দাবি করেন। এরপর একই বছর চাঁনবরু বিবি গৌরনদী সহকারী জজ আদালতে ভিপি অবমুক্তির জন্য মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৫৯/১৯৯২)। মামলায় একই বছর চাঁনবরু বিবি দোতরফা ভাবে ডিক্রিপ্রাপ্ত হন এবং আদালত উক্ত সম্পত্তি ভিপি তালিকা থেকে বাতিল করে যাবতীয় প্রসেসিং অবৈধ ঘোষণা করেন।

সূত্রে আরও জানা গেছে, পরবর্তীতে জমির মালিক চাঁনবরু বিবি ওই জমি বিভিন্ন সময়ে সাব কবলা, হেবা ও দানপত্র করেন। সে অনুযায়ী ১৯টি পরিবার দীর্ঘদিন থেকে পৃথক দাগ ও খতিয়ানে বসতবাড়ি নির্মাণ করে ওই জমি ভোগ দখল করে আসছেন। এরই মধ্যে ২০১০ সালে জমির মালিক চাঁনবরু বিবি মৃত্যুবরণ করেন।

২০১২ সালে ওই তিন একর সম্পত্তির মধ্য থেকে এক একর ৮৩ শতক জমি ভিপি (ক) তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯টি পরিবার মিলে বরিশাল অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৪২৪/১২)। ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালত দোতরফা ভাবে ওই ১৯টি পরিবারের পক্ষে রায় ঘোষণা করেন এবং ভিপি অবমুক্তির আদেশ প্রাপ্ত হয়। এরইমধ্যে সরকার পক্ষ আবার রায়ের বিরুদ্ধে বরিশাল প্রথম অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে আপিল করেন। ফলে বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, আপিল মামলা চলমান থাকা অবস্থায় স্থানীয় প্রভাবশালী ওই মহলটি বিভিন্ন প্ররোচনায় দীর্ঘদিন থেকে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীদের বাগিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে ওই জমির মধ্যে থাকা তাদের বসতভিটে থেকে উৎখাতের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ওই জমির মধ্যে থাকা একটি পুকুর সম্পূর্ন বে-আইনিভাবে লিজ প্রদান করা হয়েছে।

ভুক্তভোগি সালেহা বেগম বলেন, গত কয়েকমাস পূর্বে তার স্বামী মোশারফ সরদার মৃত্যুবরণ করলেও তাকে বসতবাড়িতে দাফন করতে দেয়া হয়নি। নিজের বসতবাড়িতে স্বামীকে দাফন করার জন্য দুই সন্তানকে নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু তাতেও কোন সুফল হয়নি। উল্টো এক প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদেরকে লাঞ্ছিত করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি তার ভাসুর পুত্র ত্যাগী ও নির্যাতিত যুবলীগ নেতা আসাদুজ্জামান কাবুল সরদার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে তাকেও নিজ বাড়িতে দাফন করতে দেয়নি ওই প্রভাবশালী মহল।

অসহায় ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্যরা প্রভাবশালীদের হাত থেকে তাদের একমাত্র সম্বল নিজেদের ভিটেমাটি রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ সহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন