২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ শিকার করছে ভারতীয় জেলেরা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ, ০২ আগস্ট ২০২২

বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ শিকার করছে ভারতীয় জেলেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: ইলিশের ভরা মৌসুম। অথচ বঙ্গোপসাগরে জাল ফেলে ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের জেলেরা। ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৩ জুলাই মধ্যরাত থেকে সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ইলিশ ধরা না পড়ায় হতাশ হয়ে ঘাটে ফিরছে তারা। জেলেদের অভিযোগ, এখনও ভারতের জেলেরা আমাদের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং ভারতে একই সময়ে অবরোধ না দিলে আমাদের জেলেরা ইলিশে মার খেতেই থাকবে।

কাক্সিক্ষত ইলিশ ধরা না পড়ায় অভাব-অনটন আর হতাশার মধ্যে দিন পার করছে পাথরঘাটার প্রায় ২২ হাজার জেলে পরিবার। বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ট্রলার, নৌকা ও জাল কিনে নদীতে নেমেছেন পরিবারের কর্তারা। মাছ ধরা না পড়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না তারা। একই সঙ্গে জেলেদের ঋণ ও দাদন দিয়ে বেকায়দায় পড়ে গেছেন এনজিও এবং ব্যবসায়ীরাও।

দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে বরগুনার পাথরঘাটা (বিএফডিসি) মৎস্য ঘাটে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ শিকার করে ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। এসব ট্রলারে অল্প পরিমাণ মাছ ধরা পড়েছে। এত দিন হাঁকডাক ছিল না অবতরণকেন্দ্রটিতে। মাছ ধরা না পড়ায় এখনও প্রাণ ফেরেনি মৎস্য বন্দরটির। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরাও। বন্দরে অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। দুয়েক ঝুড়ি মাছ ঘাটে আনা হলেও নেই হাঁকডাক। কারণ এ সময়ে যে পরিমাণ মাছ অবতরণকেন্দ্রে আসার কথা তার তিন ভাগের এক ভাগও ইলিশ কেনাবেচা নেই এখানে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ইলিশের খোঁজ না মিললেও পূর্ব-দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে কিছু ইলিশের দেখা মিলছে। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলেরা সেদিক থেকে মাছ শিকার করে আনলেও ডাকাতির কবলে পড়ে সব খোয়াচ্ছেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা। জেলেরা বলেন, দুই মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ শিকার করতে যান তারা। ভরা মৌসুমে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়ার কথা থাকলেও এখন নদী ও সমুদ্রে ইলিশের দেখা নেই। সারা দিন জাল বেয়ে খরচের টাকা উঠছে না, ফিরছেন খালি হাতে। অনেকেই এনজিও ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইলিশ বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবেন ভাবছিলেন; কিন্তু ইলিশ না পাওয়ায়, দেনা শোধ করতে পারছেন না। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে তারা।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্র আড়তদার সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন জোমাদ্দার বরিশালটাইমসকে জানান, নদীতে ইলিশ না থাকায় জেলেরা যেমন অভাবে রয়েছেন, তেমনি তারাও হতাশায় রয়েছেন। জেলেদের কাছে দাদনের অনেক টাকা পড়ে আছে। নদীতে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলেরা নতুন করে আরও টাকা ধার নেওয়ার জন্য প্রতিদিন ছুটে আসছেন; কিন্তু দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মাছ না থাকায় কর্মচারীদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে।

এদিকে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বরিশালটাইমসকে বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী ও সমুদ্রে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। ভারতের জেলেদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও ভারতের জেলেরা আমাদের জলসীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং ভারতে একই সময়ে অবরোধ না দিলে আমাদের জেলেরা ইলিশে মার খেতেই থাকবে। দেশি জেলেদের রক্ষা করতে এ ব্যাপারে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার (অপু) বরিশালটাইমসকে জানান, নিষেধাজ্ঞার পর তিন-চার দিন ইলিশ ধরা পড়লেও হঠাৎ ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা। কেন ইলিশ ধরা পড়ছে না তা বলা যাচ্ছে না। তবে বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী ও সমুদ্রে ইলিশের পরিমাণ বাড়তে পারে। আগস্টের মাঝামাঝি সময় নদীতে ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হবে। তখন নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন