২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশে এসে অপরাধে জড়াচ্ছে বিদেশি ফুটবলাররা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:৩৭ অপরাহ্ণ, ০৬ জানুয়ারি ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: বাংলাদেশে সম্প্রতি ৭ হাজার ইয়াবাসহ দুইজন বিদেশি ফুটবলারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মহানগরীর শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে প্রথমে ঘানার নাগরিক দুইজনকে গ্রেপ্তার করে বাকুলিয়া থানা পুলিশ। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তীতে বাংলাদেশি ফুটবলারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনায় বাংলাদেশে খেলতে আসা বিদেশি ফুটবলারদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় চলে এসেছে।

বাকুলিয়া থানা পুলিশ জানিয়েছে গ্রেপ্তারকৃত দুই ঘানার নাগরিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং গ্রেপ্তার সাবেক বাংলাদেশ ফুটবলারকে চারদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বাফুফে বলছে, তাদের ডাটাবেজে বিদেশি ফুটবলারদের নামের তালিকায় ঘানার ওই দুই জনের নাম নেই। আর গ্রেপ্তারকৃত বাংলাদেশি ফুটবলার কয়েক বছর আগেই অবসর নিয়েছেন।

বিদেশি ফুটবলারদের তথ্য কীভাবে যাচাই করা হয়?

বাফুফের সাধারণ সম্পাদক মোঃ. আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘ফিফার একটা নিয়ম রয়েছে। ওই নিয়ম কানুন মেনে, আগে যে দেশ থেকে সে বাংলাদেশে এসেছে, মানে রিলিজিং কান্ট্রি, প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফুটবলের নিয়ম কানুন মেনে সে এসেছে কিনা সেটা আমাদের দেখার বিষয়। তাদের ‘পি’ ক্যাটাগরির ভিসা দরকার হয়। তার ভিসা রয়েছে কিনা, ইমিগ্রেশন অফিসের আনুষ্ঠানিকতা এগুলো দেখে ক্লাবের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা তাদের খেলতে দেই। আমাদের সম্পর্ক খেলার সাথে। তারপরেও আমি গ্রেপ্তারকৃতদের ব্যাপারে তথ্য চেয়েছি।’

ফুটবলারদের চুক্তি শেষ হয়ে গেলে কী হয়?

বিদেশি খেলোয়াড়দের চুক্তি শেষ হয়ে গেলে তারা অনেকেই নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পরছেন বলে অভিযোগ। বাংলাদেশের ফুটবল ক্লাবগুলোতে অনেকদিন ধরেই আফ্রিকানদের ভাড়ায় খেলতে নেয়ার একটা প্রচলন রয়েছে। তবে প্রিমিয়ার লিগেই তাদের সংখ্যা বেশি। প্রিমিয়ার লিগের ১৩ টি ক্লাবে বিদেশি খেলোয়াড়ের সংখ্যা ৬৬ জন। এদের একটি বড় অংশ আফ্রিকার দেশগুলো থেকে এসেছেন।বাংলাদেশে কাছাকাছি সময়ে বেশ কিছু অপরাধে আফ্রিকান নাগরিক সহ বিদেশিরা গ্রেপ্তার হয়েছেন।

মোঃ. আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে যখন তাদের চুক্তি শেষ হয়ে যায় বা ক্লাব তাদের বাদ দিয়ে দেয়, আমাদের পক্ষ থেকে ক্লাবগুলোকে বলা রয়েছে তারা যতদিন বৈধ ভিসা রয়েছে তারপরে যেন তারা বাংলাদেশে না থাকতে পারে সেটা যেন তারা নিশ্চিত করে। এটা আমরা সবসময় ক্লাবগুলোকে বলি।’

তবে তিনি বলেন, ‘তাপরও দেখা যায় অনেকেই মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও থেকে যান এবং এভাবে যারা থাকে, এই বিভিন্ন ইস্যুগুলো তাদের মাধ্যমেই সংগঠিত হয়। যে কারণে বাংলাদেশ পুলিশ, ইন্টেলিজেন্স তাদের সাথে আমাদের যৌথ একটি মিটিং হয়েছিলো এবং যৌথ একটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে বাফুফে, ক্লাব, ইমিগ্রেশন সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করবো যাতে আমরা সবাই মিলে এগুলো আমরা কমব্যাট করতে পারি।’

বাংলাদেশে বিদেশি খেলোয়াড় অনেক সময় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিদেশ থেকে আসা এসব খেলোয়াড়দের ফুটবলার হিসেবে তেমন কোন খ্যাতি নেই। ফুটবলের মৌসুমে তারা জেলা পর্যায় এমনকি গ্রামেও খেলতে যান। এমন অভিযোগ রয়েছে যে, দুই দেশের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশের কিছু ক্লাবের সাথে খেলোয়াড়েরা অল্প সময়ের জন্য ট্রায়াল দিতে আসেন। কিন্তু তারা আবার ফিরে গেছেন কিনা সেদিকে সবসময় নজরদারি করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিদেশি ফুটবলাররা সেই সুযোগটা নেয়।

বিদেশিদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সক্ষমতা আছে কি?

বাংলাদেশে কাছাকাছি সময়ে বেশ কিছু অপরাধে আফ্রিকান নাগরিক সহ বিদেশিরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, বিশেষ করে অর্থ জালিয়াতি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে। এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য গ্রেপ্তার হয়েছেন ইউক্রেনের নাগরিক। বিদেশিদের গতিবিধির উপরে কতটা নজরদারি করে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী?

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘কোনো বিদেশি আসলে ভিসা নিয়েইতো আসে। ভিসার সময়েই তো সে আসে। কোনো ক্রিমিনাল অ্যক্টিভিটিতে যদি জড়িত থাকে তাহলে ভিসা দেয়ার সময়ই যাচাই করা হয়। আর এখানে আসার পর যদি কিছু করে, এখানে লক্ষ লক্ষ বিদেশি আছে সবাইকে কী মনিটর করা সম্ভব? নির্দিষ্ট কোন অভিযোগের খবর পেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। দরকারে তাদের নিজের দেশে প্রত্যর্পণ করা হয়।’

বাংলাদেশে কত বিদেশি রয়েছেন তার সঠিক হিসেব পাওয়া যায় না। অনেকেই ভ্রমণ ভিসা নিয়েই কাজ করছেন বা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও রয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ অনেক দিনের। বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিদেশিদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কতটা সক্ষম?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে ইমিগ্রেশনে যারা রয়েছেন তারা শুধু এন্ট্রি পয়েন্টগুলোতে কাজ করেন। বিদেশি নাগরিক যদি আমরা বলি তাদের ট্র্যাক করার জন্য আলাদা কোন ইউনিট পুলিশে নেই। যেমনটা অনেক দেশে আছে। যেমনটা অনেক দেশে এলিয়েন পুলিশ রয়েছে। আর আমাদের ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট যেটা আছে তাদের বড় ফোকাস হচ্ছে টেরোরিজম।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে পুলিশের অনেক চাপ। নাগরিকদের অনুপাতে পুলিশের সংখ্যা অনেক কম। তাছাড়া পুলিশের এতটা স্কিল বা প্রযুক্তি নেই যে বিদেশিদের গতিবিধি, তারা বাংলাদেশে ঢুকে কার সাথে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে সেগুলো ট্র্যাক করা তাদের জন্য মুশকিল।’

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন