২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

বাউফলে আ’লীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষে রণক্ষেত্র: সাংবাদিকসহ আহত ২৫

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:০৯ অপরাহ্ণ, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মো. জসীম উদ্দিন, বাউফল:: পটুয়াখালীর বাউফল শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনায় উত্তপ্ত বাউফল উপজেলা সদর। গত শনিবার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল, সংঘর্ষ, সড়ক অবরোধ, ১০ টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, একটি শিশুপার্ক ও একটি বসতঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে জাহিদুল ইসলাম নামের এক সাংবাদিকসহ দুই পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় এক পক্ষের একটি মামলা হয়েছে। তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে উপজেলা সদরে থমথমে অবস্থা অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দলীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার শুরু গত শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২ টা (২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর)। উপজেলা সদরের শেখ রাসেল মিনি ষ্টেডিয়ামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি,হাতাহাতি ও ফুলের তোরা ভাঙার ঘটনা ঘটে।
এক পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও স্থানীয় সাংসদ আ.স.ম ফিরোজ সমর্থিত। অপর পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাউফল পৌরসভার মেয়র মো. জিয়াউল হক সমর্থিত।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে রোববার সন্ধ্যার পর উপজেলা সদরে মেয়র পক্ষের উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান ওরফে হাসানের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি সোয়া সাতটার দিকে বাউফল পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে শেখ রাসেল মিনি ষ্টেডিয়ামের দক্ষিন পাশে রিকশা ষ্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে মিছিলটির ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। এতে সাংসদ পক্ষের নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও বাউফল পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি (একাংশ) ইব্রাহিম ফারুক (৫৭),উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য মো. হারুন অর রশিদ খান (৫০) এবং মেয়র পক্ষের বাউফল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইউসুফ রানা (২৫), মো. আরিফ (২২), মো. সিদ্দিকুল্লাহ (৪৫), মো. মেহেদীসহ (২৭) দুইপক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত এক সাংবাদিকসহ দুই পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় সাংসদ পক্ষের হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে রোববার রাতে মেয়র পক্ষের ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছেন।

এছাড়াও সাংসদ পক্ষ রোবারের সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদারের নেতৃত্বে বেলা ১১ টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং বাউফল থানার সামনের সড়কে গাছের গুড়ি ও টায়ার চালিয়ে তাঁরা সড়ক অবরোধ করে রাখে। মিছিল শেষে বাউফল থানার পূর্ব পাশে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে সমাবেশ স্থলে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উপস্থিত হয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় সাংসদ পক্ষ। এ কারণে প্রায় দেড় ঘন্টা পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। তখন দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, ওই প্রতিবাদ মিছিল থেকে হামলা চালিয়ে বাউফল থানার সামনে গোলাবাড়ি পর্যন্ত ১০ টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। ওই সময় হামলাকারীরা দোকানিদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।তাঁরা একটি প্রাইভেট ব্যাংকের এটিএম বুথে হামলা চালিয়েছে। তবে পাহারাদার সাটার আটকে ফেলায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
কয়েকজন দোকানি অভিযোগ করেছেন,পুলিশের সামনেই মিছিল থেকে তাঁদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছে, লুটপাট করা হয়েছে। পুলিশের নীরব ভূমিকার কারণে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।

এদিকে হামলা ও ভাঙচুরের ছবি তুলতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন দৈনিক দেশবার্তা পত্রিকার সাংবাদিক মো. জাহিদকে। এ সময় সাংবাদিক জাহিদকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিকরা হয়েছে।

সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়ার পর গতকাল দুপুর দুইটার দিকে থানার অদূরে উপজেলা সদরের শিশুবন শিশুপার্কে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। নাজিরপুর গ্রামে অবদুল গনির ঘরে হামলা চালানো হয়েছে। তাতে বাধা দিলে আবদুল গনিকে কুপিয়ে জখম করা হয়।
এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও সর্বত্র থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পৌরসভার মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। তাঁদের কোনো লোক হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত না।’

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বরিশালটাইমসকে বলেন,‘একটি মামলা হয়েছে। তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, পুলিশের সামনে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ সত্য না। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন