২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

বাউফলে বিধি লঙ্ঘন করে দুই কনিষ্ঠ শিক্ষক দুই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:০৬ অপরাহ্ণ, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১

বাউফলে বিধি লঙ্ঘন করে দুই কনিষ্ঠ শিক্ষক দুই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে!

মোঃ জসীম উদ্দিন, বাউফল >> পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দুটি কলেজে বিধি লঙ্ঘন করে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন দুই কনিষ্ঠ শিক্ষক। এর মধ্যে একজন আছেন ১২ বছর আরেকজন আড়াই বছর ধরে। ওই কলেজ দুটির মধ্যে একটি হল কাছিপাড়া মো. আব্দুর রশিদ মিয়া ডিগ্রি কলেজ। অপরটির নাম কালাইয়া ইদ্রিস মোল্লা ডিগ্রী কলেজ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকুরির শর্তাবলী অনুযায়ী, কলেজের অধ্যক্ষের পদ শূন্য হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে উপাধ্যক্ষ/জ্যেষ্ঠতম পাঁচজন শিক্ষকের মধ্য হতে যে কোনো একজন দায়িত্ব পালন করবেন এবং দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে অধ্যক্ষ নিয়োগের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাছিপাড়া মো. আব্দুর রশিদ মিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অবদুল খালেক ২০০৯ সালের ১৪ অক্টোবর অবসরে যান। বিধি অনুযায়ি উপাধ্যক্ষ এসএম কবির হোসেন দায়িত্ব পাওয়ার কথা। না হয় জ্যেষ্ঠতম পাঁচজন শিক্ষকের মধ্য হতে যে কোনো একজন দায়িত্ব পাওয়ার কথা। কিন্তু জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে দায়িত্ব দেওয়া হয় ১৮ তম শিক্ষক মো. গোলাম সরওয়ারকে। সেই থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৬ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গোলাম সরোয়ার নিজেকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর স্নাতকোত্তরের জাল সনদের কারণে নিয়োগ কমিটি তাঁকে নিয়োগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ কারণে অধ্যক্ষ পদে কাউকে আর নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ওই নিয়োগ পরীক্ষায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম সরোয়ার বলেন,‘কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছেন বলে তিনি দায়িত্বে আছেন। আর তিনি কৃষি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। তাঁর স্নাতকোত্তরের সনদ সঠিক বলে তিনি দাবি করেন।’

এদিকে কালাইয়া ইদ্রিস মোল্লা ডিগ্রী কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি লঙ্ঘন করে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন পদার্থ বিভাগের প্রভাষক মো. জাকির হোসেন।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে,ওই কলেজে অধ্যক্ষ,উপাধ্যক্ষ ও ৮ জন সহকারী অধ্যাপকসহ ৩৮ জন শিক্ষক ছিলেন। এর মধ্যে অধ্যক্ষ মধু সূদন সরকার ২০১৯ সালের ১ জুলাই অবসর গ্রহণ করেন। বিধি অনুযায়ি কলেজটির উপাধ্যক্ষ মো. আকতার হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পাবেন।

কিন্তু কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ওই দিনই কলেজ পরিচালনা কমিটি ২৭ তম কনিষ্ঠ শিক্ষক জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। কলেজটি স্থানীয় সাংসদ আ.স.ম ফিরোজের বাবার নামে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন স্থানীয় এমপি আসম ফিরোজ। অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়া জাকির হোসেন হলেন স্থানীয় এমপি’র ভাইয়ের মেয়ের জামাই।

২৭ নম্বর শিক্ষক হওয়ার পরেও কিভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মো. জাকির হোসেন বলেন,‘আমাকে কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলতে কাকে বুঝিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সভাপতি মহোদয়।

দুটি কলেজেরই পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন স্থানীয় এমপি আসম ফিরোজ। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন,‘কলেজের স্বার্থে সব শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে এবং যাঁকে দিয়ে কলেজ ভালো চলবে তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

অপরদিকে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে উপজেলা সদরের ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন মো. মশিউর রহমান তালুকদার। তিনটি কলেজেরই বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল আমিন। তিনি বলেন, ‘আমি সম্প্রতি এ উপজেলায় যোগদান করেছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ি খুব শিগগির অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’

 

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন