২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বাউফলে স্বনির্ভরের ফাঁদ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৫৫ অপরাহ্ণ, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাউফলে স্বনির্ভরের ফাঁদ

মো. জসীম উদ্দিন, বাউফল:: পটুয়াখালীর বাউফলে অগ্রাণী ব্যাংকের অর্থায়নে বেসরকারি সংস্থা স্বনির্ভর বাংলাদেশ এনজিও’র দেয়া ক্ষুদ্র লোনের টাকা পায়নি অসহায় সদস্যরা। তবে তাদের নামে লোনের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমানে সেই ঋণের বোঝা ও মামলার আতঙ্কে এলাকা ছাড়া অসহায় প্রায় অর্ধশত পরিবার। বাউফল সদর ইউনিয়নের হোসনাবাদ কেন্দ্রে লোন বিতরণের ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটেছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, প্রায় পনের বছর আগে অগ্রাণী ব্যাংকের বাউফল শাখা স্বনির্ভর এনজিওকে ক্ষুদ্র লোনের জন্য অর্থায়ন করে। এই অর্থ দিয়ে স্বনির্ভরের ক্ষুদ্র লোন দেয়ার কথা ছিলো অসহায় শতাধিক পরিবারকে। সেই অসহায় পরিবার গুলো ওই লোনের টাকা হাতে পায়নি কিন্তু তাদের নামে লোনের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমানে সেই লোন পরিশোধের জন্য অগ্রাণী ব্যাংক চাপ প্রয়োগ করলে বিপাকে পরে যায় মানবেতর জীবনযাপন করা এই পরিবারগুলো। মামলার ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে ভুক্তভোগী অনেক পরিবার। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্বনির্ভরের ততকালীন মাঠকর্মী নাজমা বেগম তাদেরকে সদস্য করে ও তাদের লোন দেয়ার কথা বলে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি ও ছবি নেয়। পরবর্তীতে তাদের ব্যাংকের নিচে যেতে বলে এবং সেখানে তাদের সাক্ষর রেখে তাদের পাঠিয়ে দেয়া দেয়া হয়৷ প্রথমদিকের অল্প কিছু সদস্য একবার লোন পেয়ে পরিশোধ করলেও দ্বিতীয় বার পুনরায় তাদের নামে লোন নেয়া হয়েছে তাদের অজান্তেই। ঘটনার দীর্ঘ বছর পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পরিবার গুলোকে চাপ সৃষ্টি করলে তারা জানতে পারে তাদের নামে লোন হয়েছিলো। অভিযোগ রয়েছে অধিকাংশ সদস্যকে এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে নিয়ে সদস্য করা হয়েছে। সদস্যের তালিকায় নাম রয়েছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীর। আবার অনেকের নামের সাথে ছবির ও সাক্ষরের মিল নেই।

ভুক্তভোগী মদনপুরা ইউপির রওসন আরাকে সদর ইউপির হোসনাবাদ কেন্দ্রে সদস্য করা হয়। রওসন আরা জানান, নামজা বেগম তাকে সদস্য করার কথা বলেন এবং লোন দেয়ার আশ্বাস দেন। এরপর তার থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি ও ছবি নেন এবং পরে তাকে বাউফল অগ্রাণী ব্যাংকের নিচে ডাকেন। সেখানে গেলে একটি স্বাক্ষর রেখে অপেক্ষা করতে বলা হয়। সকাল গড়িয়ে বিকেল হলে তাদেরকে বলা হয় চলে যেতে, লোন হবে না৷ সম্প্রতি তিনি জানতে পারেন ব্যাংক মোটা অংকের টাকা পাবে তার কাছে।

ভুক্তভোগী হানিফ হাওলাদার বলেন, আমার বাড়িতে স্বনির্ভরের কেন্দ্র ছিলো। তখন একটি লোন নিয়েছিলাম, সেটি পরিশোধও করে দিয়েছি। তবে সম্প্রতি অগ্রাণী ব্যাংকের আইও আব্বাস সাহেব আমাকে ফোন দিয়ে জানায় আমার নামে লোন আছে, টাকা দিতে হবে। তখন আমি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে জানালে আব্বাস সাহেব আমাকে বলেন, ” আপনার নামে লোন আছে এবং অনেক বছর হয়ে গেছে। টাকা না দিলে আপনার নামে মামলা হয়ে যাবে। ” আমি আদৌ এই লোনের ব্যাপারে কিছুই জানি না। মামলার ভয়ে এখন এলাকা ছেড়ে ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করছি।

ভুক্তভোগী মদনপুরা ইউপির লিপি বেগম বলেন, আমার নামে ১০ হাজার টাকা লোন দেখানো হয়েছে। আমি এই লোনের বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে ব্যাংক এখন আমার কাছে তিনগুণ টাকা দাবি করছে।

স্বনির্ভরের ততকালীন সময়ের মাঠ কর্মী নাজমা বেগম বলেন, আমি এখন এনজিওর (স্বনির্ভর) চাকুরী করি না। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই।

অগ্রাণী ব্যাংকের বাউফল শাখা ম্যানেজার আরিফ রশিদ বলেন, স্বনির্ভরের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা দেওয়ার লক্ষে স্বল্প সুদে লোন দেওয়া হয়েছিল। সেখানে আমরা শুধু সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছি। তবে সারাদেশেই স্বনির্ভরের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে।’

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন