১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বাকেরগঞ্জে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে অভিযোগ: ১২ দিনেও হয়নি তদন্ত

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:০৪ অপরাহ্ণ, ২৪ মার্চ ২০২৩

বাকেরগঞ্জে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে অভিযোগ: ১২ দিনেও হয়নি তদন্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাকেরগঞ্জ:: দুই মাসের জন্য গত ১ মার্চ থেকে নদী ঘেরা বরিশালের অভয়াশ্রমে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও সরকারি খাদ্যসহায়তা পায়নি জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নের কার্ডধারী তালিকাভুক্ত অধিকাংশ জেলে।

দুর্গাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের হানিফ তালুকদারের গাফিলতির কারণে চাল পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন প্রায় অর্ধশতাধিক কার্ডধারী জেলে। সরকারি বরাদ্দের চাল পাওয়ার দাবিতে জেলেরা গত ১৩ মার্চ সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা পায়নি।

অভিযোগ রয়েছে, দুর্গাপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মল্লিক সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ৪০ কেজি চাল নেওয়ার জন্য আমাদের প্রত্যেক তালিকাভুক্ত জেলের কাছে এক হাজার করে টাকা দাবি করেন। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় আমিসহ ইউনিয়নের অর্ধশত কার্ডধারী তালিকাভুক্ত জেলেদের সরকারি বরাদ্দের চাল দেওয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চাল পরিমাপে কম দিয়ে কালোবাজারে বিক্রয়ের উদ্দেশেই চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউনে প্রায় ২০০ বস্তা চাল জমিয়ে রাখেন। অথচ পরিষদের গোডাউনে চাল জমা রেখেও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে গত ১২ মার্চ ও ১৯ মার্চ ডিও নেওয়া হলেও হলতা খাদ্যগুদাম থেকে দুর্গাপাশা পরিষদের গোডাউনে কোনো প্রকার চাল আসেনি।

জনপ্রতি ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ থাকলেও দেওয়া হয়েছে ৩২ কেজি থেকে ৩৫ কেজি চাল। ৪০ কেজি চালের বিপরিতে তিন মাস অন্তর ৪ বারের জন্য নেওয়া হচ্ছে প্রত্যেক জেলে পরিবারের কাছ থেকে ১২০০ টাকা। চাল আনতে গিয়ে প্রত্যেক জেলেদের গুনতে হচ্ছে আরও ১০০ টাকা। যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভুত।

চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার সরকারি চাউল চুরিতে ঘাঁটি ঘেরে বসেছে খাদ্য বিভাগে। সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রয়েছে হলতা খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি এমনকি পরিচ্ছন্ন কর্মী পর্যন্ত। ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে চোরাকারবারি পাকাপোক্ত করতে সুকৌশলের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

উপজেলা প্রশাসন সহ টপ টু বটম কব্জায় রেখে ওসিএলএসডি উম্মে কুলসুম ও চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার সরকারের চাউল চুরি করে লুট পাট করছে লাখ লাখ টাকা। চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার গরিবের চাউল চুরি সহ নানান রকম অপকর্ম করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাহায্যের মাধ্যমে রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাহিরে।

সূত্রমতে, ওই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভুতভাবে প্রত্যেক জেলে পরিবারের কাছ থেকে প্রথম দফায় ১২০০ টাকা ও পরবর্তীতে চাল নেওয়ার সময় খরচ বাবদ আরও ১০০ টাকা করে আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।

ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান ১২০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেন, যাতায়াত খরচ বাবদ প্রত্যেক সুফলভোগীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। সিন্ডিকেট করে সরকারি বরাদ্দের চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে দুর্গাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার বলেন, আমার নাম ব্যবহার করে কোন ইউপি সদস্য টাকা আদায় করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গত ১২ মার্চ সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, দুর্গাপাশা ইউনিয়নের সেনেরহাট বাজারের ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউনে প্রায় দুইশ’ বস্তা চাল মজুদ করে রাখা হয়েছে। বিষয়টি জানতে কৌশলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রুবিনা আক্তারের সাথে মোবাইল ফোনে ওই ইউপির চেয়ারম্যান পরিচয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওসিএলএসডি উম্মে কুলসুমের সাথে কথা বলে দ্রত চাল গোডাউন থেকে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন। বিষয়টি যেন সাংবাদিকরা টের না পায় সে বিষয়েও তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।

পরবর্তীতে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রুবিনা আক্তার বিষয়টি ওসিএলএসডি’র সাথে কথা বলে সমন্বয় করার জন্য অনুরোধ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, গোডাউন থেকে ডিও ছাড়া অগ্রিম চাল দেওয়া ঠিক হয়নি। ডিও ছাড়া অগ্রিম চাল দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসিএলএসডি উম্মে কুলসুম সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেননি।

এ ব্যাপারে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সজল চন্দ্র শীল বলেন, ডিও কিংবা আমার স্বাক্ষর ছাড়া গোডাউন থেকে চাল নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চেয়ারম্যান কর্তৃক চাল চুরি ঘটনার অভিযোগ দায়ের করার ১২ দিনেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত তো দূরের কথা চেয়ারম্যানের চোরাইকৃত চাল উদ্ধারেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি উপজেলা প্রশাসন।

অপরদিকে, গত ২২ মার্চ অবৈধ চাল বৈধতা ঘোষণা দিয়ে হানিফ তালুকদার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় চাল বিতরণের করেন। বিতরণ করাকালীন সময়ের ভিডিও ধারন করতে গেলে জেলে পরিবার আবুল মাঝি পুত্র গনি বেপারীকে সঞ্জয় পাথর, মহম্মদ খালেক, লিটন সিকদার, মোহাম্মদ কালামসহ বেশ কয়েকজন মিলে হানিফ তালুকদারের নেতৃত্বে অতর্কিত হামলা চালায়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সজল চন্দ্র শীল বলেন, জেলেদের লিখিত অভিযোগের তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশক্রমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে শীঘ্রই।’

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন