২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

বাবাকে পাগল বানানোর চেষ্টায় সন্তানরা!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:০২ অপরাহ্ণ, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

অনেক কষ্ট করে সন্তানদের বড় করেছি। সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ পাঠিয়েছি। সেই আদরের সন্তানদের হাতে বেধড়ক মার খেতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি।  কথাগুলো বলছিরেন আবুল কালাম বাবুল নামের ৬৫ বছরের একজন বাবা।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর তোপখানা রোডের এশিয়া হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আবুল কালাম বাবুল জানান, শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভে জন্মদাতা বাবাকে পিটিয়ে আহত করতে দ্বিধাবোধ করেনি তার সন্তাররা। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হলেও পাগল বানিয়ে সম্পত্তি হাছিলের চেষ্টা করেছে তার সন্তাররা। এতেও কাজ না হওয়ায় তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ওই সম্পত্তি দখলের ষড়যন্ত্র করছে সন্তানরা।

সংবাদ সম্মেলনে আবুল কালাম বাবুল বলেন, কখনো ভাবিনি নিজের সন্তানদের বিরুদ্ধে এভাবে সংবাদ সম্মেলন করতে হবে। কিন্তু তাদের হাত থেকে বাঁচার তাগিদে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তা কামনা করছি।

বাবুল বলেন, তিনি পুরান ঢাকার একজন ব্যবসায়ী। তার দুই ছেলে ও এক রয়েছে। অনেক কষ্ট করে বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসা ও সম্পত্তি রক্ষা করেছেন। ভাই বোনদের মধ্যে বাবার সম্পত্তি ভাগ হওয়ার পর নিজের অংশ নিয়ে বেশ চলে যাচ্ছিলো তার। বড় ছেলে আশিক কালাম ওরফে শিহাব একজন ক্যামিস্ট। মেয়ে নওরিন সাবা কালামকে লন্ডনে লেখাপড়া করেছে। ছোট ছেলে দেশের একটি নাম করা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ছে।

এই ব্যবসায়ী বলেন, অনেক কষ্ট করে প্রতিটি সন্তানকে লালন-পালন করেছেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের মা সোফিয়া কালাম ও মামাদের প্ররোচনায় পড়ে নিজের বাবার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাদের দাবি, বাবার পুরো সম্পত্তি তাদের নামে লিখে দিতে হবে। তারা ওই সম্পত্তি বিক্রি করে লন্ডনে বাড়ি কিনবে।

বাবুল বলেন, আমার কষ্টে গড়ে তোলা অর্থ ও পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সন্তানরা। নানা ধরনের অত্যাচার নেমে আসে তার ওপর। বছরের পর বছর এই অত্যাচার চলে আসলেও সামাজিক সম্মানের ভয়ে তিনি কাউকে কিছু বলেননি। নিজেকে বাঁচাতে এড়িয়ে চলেছেন। কিন্তু গত ১৮ অক্টোবর রাতে তার ১৩ নম্বর পরীবাগের বাসায় ঘটে যায় নির্মম ঘটনা।

আবুল কালাম বাবুল বলেন, ওই রাতে তার বড় ছেলে আশিক, স্ত্রী সোফিয়া ও দুই শ্যালক সম্পত্তি লিখে দিতে চাপ সৃষ্টি করে। তিনি দিতে না চাইলে ছেলে আশিক তার মা ও মামাদের সহযোগিতায় তার কলার চেপে ধরে বেধড়ক কিলঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে সবার মারধরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। এরপর তার হাত-পা বেঁধে তাকে একটি মাইক্রোবাসে তোলা হয়। যখন তার জ্ঞান ফিরে তখন তিনি নিজেকে তেজগাঁও-এর একটি প্রাইভেট মানসিক হাসপাতালের সামনে আস্কিার করেন। ওই সময় আশিক ও তার সহযোগিরা কিছু সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলে। না করায় পুনরায় তাকে বেধড়ক মারধর করে কয়েকটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে আসে।

বাবুল আরও বলেন, ওই হাসপাতালে ৩৩ দিন ধরে বন্দী ছিলেন তিনি। কিন্তু শরীরে সার্বক্ষণিক ওষুধ প্রয়োগ করায় তিনি বুঝতে পারেননি ৩৩ দিন কেটে যায়। এরপর মধ্যে কালামের ভাই বোন ও ব্যবসায়ীক ম্যানেজার তার খোঁজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা জানতে পেরে বাবুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খালেদ মাসুদ মজুমদারের কাছে যান। পরে তারা থানায় জিডি করে আদালতে যান। আদালত বাবুলকে ওই হসপিটাল থেকে উদ্ধার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে গত ২২ নভেম্বর তেজগাঁও থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আদালতে পেশ করে। পরে ব্যবসায়ী বাবুল নিজেকে সুস্থ প্রমাণ করে নিজ জিম্মায় চলে আসেন।

বাবুল আরও বলেন, বর্তমানে তিনি মুক্ত হলেও সন্তান, তাদের মা ও মামাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কারণ তারা হুমকি দিয়ে বলছে, ‘এবার ধরতে পারলে আর বাচিয়ে রাখব না, সোজা উপরে পাঠিয়ে দেব’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম বাবুলের ছেলে আশিককে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন