২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বাবার কাছে জামার বায়না করেছিল লামহা: তার আগেই চলে গেল মোরসালিন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৫১ অপরাহ্ণ, ২২ এপ্রিল ২০২২

বাবার কাছে জামার বায়না করেছিল লামহা: তার আগেই চলে গেল মোরসালিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: হুমাইয়া ইসলাম লামহার বয়স সাত বছর। প্রতিদিন সকালে বাবা যখন কাজে যেতেন, গলা জড়িয়ে ধরে নানা বায়না করত সে। রাতে বাবা ফিরলে কোনো কথা না বলে তাকিয়ে থাকত। আদরে, দুষ্টুমিতে মান ভাঙাত বাবা। বাবার কাছে একটা বায়না ছিল তার। ঈদে আকাশি রঙের একটি জামা কিনে দিতে হবে। বাবা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার সেই বাবাই হয়ে গেছেন দূর আকাশের তারা।

নিউ মার্কেট এলাকায় সংঘর্ষে আহত মোরসালিন গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার কালাইনগর গ্রামে। দুই সন্তানের বাবা মোরসালিন থাকতেন রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের ভাড়া বাসায়। গতকাল সেখানে তাঁর লাশ নিয়ে যাওয়ার পর বাবা-মেয়ের এসব আবদারের সব গল্প বিলাপ হয়ে ফিরছিল মা আর স্বজনদের মুখে।

পরিবারের সদস্যরা জানায়, গত মঙ্গলবার সকালে কামরাঙ্গীর চরের পশ্চিম রসুলপুরের ভাড়া বাসায় থেকে মোরসালিন যখন কর্মস্থল নিউ মার্কেট এলাকায় যাচ্ছিলেন, লামহা সেদিনও বাবাকে ঈদের নতুন জামার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বাবা আর ফিরবেন না লামহার কাছে।

গতকাল ঢাকা মেডিক্যালের মর্গ থেকে মোরসালিনের লাশ যখন কামরাঙ্গীর চরের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন একটিও কথা বলেনি লামহা। অঝোর ধারায় তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। পাশে লামহার মায়ের কোলে থাকা লামহার চার বছর বয়সী ভাই আমির হামজা জিজ্ঞাসা করে, ‘মা, বাবা কই, বাবা আইছে?’ বাবা নেই, কোনো দিনই আর ফিরবেন না; এটা এখনো বোঝে না হামজা।

বাসায় লাশ পৌঁছানোর পর কান্নার রোল পড়ে। অবোধ ছেলের প্রশ্নের জবাবে মোরসালিনের স্ত্রী অনি আখতার আহাজারি করতে করতে বলতে থাকেন, ‘তোমার বাবা তো আইছে লাশ হয়ে, সে আর কথা কইব না। সে আর আইব না রে বাবা…সে আর আইব না!’

অনি আখতার জানান, মাসে ৯ হাজার টাকা বেতনে স্বামী মোরসালিন নিউ মার্কেট এলাকার নিউ সুপারমার্কেটের ‘হাটবাজার’ নামের দোকানে কাজ করতেন। বেতনের ওই টাকা দিয়েই চলত তাঁদের সংসার। স্বামীকে হারিয়ে এখন ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে তিনি কোথায় যাবেন, জানেন না। দুই সন্তানের ভবিষ্যৎই বা কী হবে তা-ও জানেন না।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিন গত মঙ্গলবার আহত হন মোরসালিন। পরে তাঁকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাখা হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোরে মারা যান তিনি।

ভাইয়ের শোকে অনেকটা পাথর হয়ে গেছেন মোরসালিনের বড় ভাই নূর মোহাম্মদ। হাসপাতাল মর্গের বাইরে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘ভাই রে, কী কমু বুঝতে পারছি না। গরিবের জীবনের কোনো দাম নাই। ’

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন