২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

বাবার হাতে নির্যাতিত শিশুকন্যা, ভিডিও করলেন সৎমা

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৭:৫২ অপরাহ্ণ, ৩০ মে ২০২৩

বাবার হাতে নির্যাতিত শিশুকন্যা, ভিডিও করলেন সৎমা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ছয় বছরের শিশু স্বর্ণা ঘরের সামনে বসে খেলছিল। হঠাৎ লাঠি হাতে বাবা ইকবাল মিয়াকে এগিয়ে আসতে দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত স্বর্ণা কিছু বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল।

বাবা এসে ‘তুই কথা কেরে কইছত’ বলেই তাকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। এক পর্যায়ে পা দিয়ে গলা চেপে ধরেন। এ সময় স্বর্ণা কান্না করে শুধু বলছিল– ‘আর কইতাম না’ ‘আর কইতাম না’।

মেয়ের এমন করুণ আকুতিও বাবার মন গলাতে পারেনি। স্ত্রীর ওপর ক্ষোভ থেকে সন্তানের ওপর ১০ মিনিট ধরে চলে শারীরিক নির্যাতন। আর নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করেন সৎমা। পরে এই ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয় প্রবাসে থাকা স্বর্ণার মা হালিমা বেগমের কাছে।

শিশু সন্তানের ওপর বাবার এমন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর শহরের শিমুলতলী বাগরাইট মহল্লায়। গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এ ঘটনা ঘটে। এক মিনিট পাঁচ সেকেন্ডের ভিডিওটি স্বর্ণার মা হালিমা ফেসবুকে পোস্ট করলে রোববার সন্ধ্যার দিকে তা ভাইরাল হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রথম স্ত্রীর ওপর প্রতিশোধ নিতে বিনা কারণে পরিকল্পনা করে ইকবাল (৩৬) এ ঘটনা ঘটান। আর ইকবালের সহযোগী ছিলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী রাবেয়া বেগম (২৮)। ইকবাল ও রাবেয়াকে ধরতে পুলিশ রাতেই তার বাড়িতে অভিযান চালায়।

তবে দু’জনের কাউকেই পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা জানান, ফেসবুকে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী গা-ঢাকা দিয়েছেন। ইকবালের গ্রামের বাড়ি বাগরাইট গ্রামে। পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান। হালিমা ও ইকবালের দাম্পত্য জীবন ১৫ বছরের। কিন্তু হালিমাকে প্রায় প্রতিদিনই মারধর করতেন ইকবাল।

নির্যাতন সইতে না পেরে দুই বছর আগে ইকবালকে ছেড়ে সৌদি আরব পাড়ি জমান হালিমা। চার সন্তান থেকে যায় বাবার কাছেই। বড় সন্তান পারভিন বেগম (১৪) ঢাকায় কাজ করে।

দ্বিতীয় সন্তান টুম্পা বেগম (১২) বাড়িতে বাবার সঙ্গে থাকে। তৃতীয় সন্তান জয় মিয়া (১০) মাদ্রাসায় থেকে পড়াশোনা করে। চার সন্তানের মধ্যে স্বর্ণা সবার ছোট। ঘটনার দিন চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এসে স্বর্ণাকে ইকবালের নির্যাতন থেকে রক্ষা করে।

প্রতিবেশীরা জানান, হালিমা চলে যাওয়ার পর ইকবাল দ্বিতীয় বিয়ে করেন। প্রবাস থেকে হালিমা সন্তানদের জন্য প্রতি মাসে টাকা পাঠাতেন। কিন্তু ইকবাল তাতে সন্তুষ্ট হতেন না।

বরং সন্তানদের লালন-পালন ব্যয় মেটাতে টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেন তিনি। কিন্তু হালিমা রাজি হননি। এতে হালিমার প্রতি ইকবালের ক্ষোভ তৈরি হয়। এ ক্ষোভ থেকেই স্বর্ণাকে নির্যাতনের পরিকল্পনা করা হয়।

ইকবাল-হালিমার দ্বিতীয় সন্তান টুম্পা সাংবাদিকদের জানায়, তার বাবা সব সময় ভাইবোনদের মারধর করেন। ঠিকমতো খেতে পর্যন্ত দেন না। সৎমাও তাদের মারধর করেন।

ইকবাল ও রাবেয়ার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এদিকে ভিডিওটি দেখার পর কটিয়াদী থানা পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ।

কটিয়াদী থানার ওসি এস এম শাহাদাত হোসেন জানান, ইকবালকে ধরতে অভিযান চলছে। ইউএনও খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান জানান, ভিডিওটি তার নজরে এসেছে। ইকবালকে শাস্তির আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। শিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন