২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বাবুগঞ্জে দিনমজুরের জমি দখল করে প্রতিপক্ষের মার্কেট

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:২৯ অপরাহ্ণ, ১৯ জুন ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: আদালতের দুইটি নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও তা উপেক্ষা করে বাবুগঞ্জে এক দিনমজুরের রেকর্ডিয় জমি দখল করে পাকা মার্কেট ভবন নির্মাণ করছে প্রভাবশালী প্রতিপক্ষরা। স্থানীয় থানা পুলিশ ম্যানেজ করে দিনরাত চলছে ওই বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ। জমির রেকর্ডিয় মালিক অসহায় দিনমজুর হওয়ায় কারণে তাকে জমির কাছে গেলেই মারপিট করে রামদা’ নিয়ে ধাওয়া করছে প্রতিপক্ষরা। আইনি আশ্রয় পেতে থানায় গেলেও উল্টো চরম দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিচ্ছেন ওসি। তবে এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিষয়টি অস্বীকার করলেও এমন গুরুতর অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাবুগঞ্জের চাঁদপাশা কিসমত মৌজার ৫৪২ নং বিএস খতিয়ানে বটতলা প্রধান সড়কের পাশে ৭৯২৬ দাগের ৯ শতাংশ জমি আশ্রিত দিনমজুর আবদুস সালামের নামে ১৯৭৯ সালে দানপত্র দলিল করে দেন নিঃসন্তান সিরাজ সিকদার। ২০০২ সালে মাঠ জরিপে দখলস্বত্ত¡ রেকর্ড পান সালাম গংরা। রেকর্ড মোতাবেক দিনমজুর সালাম এতদিন ভোগদখল করলেও বাবুগঞ্জ-লাকুটিয়া প্রধান সড়কের পাশে বটতলা বাজারে হওয়ায় বর্তমানে ওই জমি মূল্যবান হয়ে যায় দাতা সিরাজ সিকদারের ভাই মেয়াজান সিকদারের ওয়ারিশদের কাছে। মেয়াজান সিকদারের ছেলে শামসু সিকদার, মতিন সিকদার এবং তাদের ছেলে সাইফুল ইসলাম খোকন, লিটন সিকদার, রিপন সিকদার ও রাজিব সিকদারের নেতৃত্বে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পেশিশক্তির জোরে ওই জমি দখল করে মার্কেটের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। দিনমজুর সালাম তার রেকর্ডিয় সম্পত্তি দখলের প্রতিবাদ জানালে তাকে বেদম মারপিট করে রামদা’ নিয়ে প্রকাশ্য বাজারে ধাওয়া করে প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল তিনি বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪/১৪৫ ধারায় নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে একটি মামলা দায়ের করেন (এমপি কেস নং-৮২/২০১৯)।

এছাড়াও বিরোধীয় জমির ওই একই ৭৯২৬ দাগে নির্মাণ কাজ বন্ধের জন্য একই ধারায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আরেকটি মামলা (এমপি কেস নং-৮৬/২০১৯) দায়ের করেন মেয়াজান সিকদারের ওয়ারিশ মানিক সিকদার। আদালত দুটি মামলাই আমলে নিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধের নিষেধাজ্ঞা জারি করাসহ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এয়ারপোর্ট থানার ওসিকে নিদের্শ দেন। ওসি মাহবুবুল আলম আদালতের ওই নির্দেশনা পাওয়ার পরে গত ১৬ ও ২০ এপ্রিল বিবাদীদের কাজ বন্ধ রাখার জন্য এএসআই অতুল দাসের স্বাক্ষর করা দায়সারা দুটি নোটিশ পাঠান। তবে প্রভাবশালী শামসু সিকদার, মতিন সিকদার এবং তাদের ছেলে সাইফুল ইসলাম খোকন, লিটন সিকদার, রিপন সিকদার ও রাজিব সিকদার নির্মাণ কাজ বন্ধ না করে উল্টো মামলার বাদী সালাম ও স্বাক্ষী আইয়ুব আলীকে মারপিটসহ তাদের অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে এলাকাছাড়া করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দিনমজুর সালাম ও তার ভাই কালাম অভিযোগ করে বলেন, এসব ঘটনা আমরা এয়ারপোর্ট থানায় জানালে ওসি সাহেব সালিশ মীমাংসার নামে কালক্ষেপন করে তাদের নির্মাণ কাজ চলমান রাখেন। গত দুই মাসে আমরা মোট ৬ বার থানায় গিয়ে নালিশ জানালেও প্রতিপক্ষরা ক্ষমতার জোরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে তাদের ভবন নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখেন।

সর্বশেষ গত ১৪ জুন সন্ধ্যায় বরিশাল জজকোর্টের অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলামকে নিয়ে এয়ারপোর্ট থানায় গেলে ওসি মাহবুবুল আলম আমাদের সঙ্গে চরম অসদাচরণ করেন এবং পরদিন শনিবার তিনি নিজেই ওই জমি মেপে দেখবেন বলে জানান। শনিবার ওসি নিজেই একজন সার্ভেয়ার ও থানার মনোনীত কাদের মেম্বারসহ থানার একজন এএসআই পাঠিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞার ওই জমি মাপজোখ করে আমাদের কিছু না জানিয়ে প্রতিপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়ে আসেন। পুলিশের সহযোগিতায় মাপের পরে ওই জমিতে খুঁটি পুঁতে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এবং পরদিন রোববার তারা ওই নির্মাণাধীন ভবনের প্রথম তলার ফ্লোর ঢালাই করে উল্লাস প্রকাশ করেন।

বর্তমানে তারা পুলিশের নেপথ্য সহযোগিতায় রামদা’সহ প্রকাশ্যে দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আদালতের ওই ডবল নিষেধাজ্ঞা জারি করা সম্পত্তিতে বীরদর্পে বহুতল মার্কেট ভবন নির্মাণ করে যাচ্ছেন এবং মরে গেলেও আমাদের আর থানামুখী না হওয়ার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন ওসি বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী দিনমজুর আবদুস সালাম। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বরিশাল জজকোর্টের অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম বলেন, দিনমজুর সালাম হতদরিদ্র হওয়ার কারণে আদালতের ডবল নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে না। প্রতিপক্ষরা প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী হওয়ায় সেখানে টাকার জোরে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। আদালতের নির্দেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উল্টো আসামীদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।

এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়ারপোর্ট থানার ওসি মাহাবুবুল আলম সাংবাদিকদের জানান, আদালতের দুটি নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই আলাদা আলাদা নোটিশ জারি করে বিবাদীদের কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুই পক্ষকে থানায় ডেকে সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করে তারপরে আদালতের অনুমতি নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ কাজ করলে তিনি দায়ী হবেন। সেই দায় পুলিশের নয়। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ২ মাস কীভাবে সেখানে নির্মাণ কাজ চলছে এবং আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ কী ভূমিকা রেখেছে-এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি ওসি।

এদিকে ওই ভবন নির্মাণ কাজের ব্যাপারে অভিযুক্ত শামসু সিকদার ও সাইফুল ইসলাম খোকন জানান, তাদের পৈত্রিক জমিতে আশ্রিত সালাম আদালতে ভুয়া মামলা করে নির্মাণকাজে বাঁধা দিচ্ছেন। তাই নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এয়ারপোর্ট থানার ওসি তাদের জমি মেপে দিয়েছেন এবং কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।’

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন