২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বাবুগঞ্জে ফেরদৌসি বেগম শিশুকল্যাণ বিদ্যালয়ের উদ্বোধন, একটি স্বপ্নের শুভ সূচনা…

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:১৬ পূর্বাহ্ণ, ১৮ আগস্ট ২০১৯

বাবুগঞ্জে ফেরদৌসি বেগম শিশুকল্যাণ বিদ্যালয়ের উদ্বোধন, একটি স্বপ্নের শুভ সূচনা…

✪ আরিফ আহমেদ মুন্না ॥ মহীয়সী এক গৃহবধূ সবসময় চাইতেন গ্রামের দরিদ্র-অসহায়-বঞ্চিত মানুষের জন্য কিছু করতে। তিনি ভেবেছিলেন যদি তাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হয় তবে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত করতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই তিনি একটি স্কুল গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখলেন। নিজের স্বামীকে ইচ্ছার কথা জানালেন। তার স্বামীও যে ছিলেন জনবান্ধব আরেক মহান মানুষ। তাই প্রিয়তমা স্ত্রীর স্বপ্ন পুরণ করতে নেমে পড়লেন যুদ্ধে। স্কুলের জন্য নিজের চাকরি জীবনের তিলতিল সঞ্চয় দিয়ে রাজধানীর অদূরে কেনা একখন্ড জমি বিক্রি করে দিলেন। অতঃপর সেই শহুরে জমি বিক্রির টাকা দিয়েই গ্রামে কিনলেন ২১ শতক জমি এবং সেখানে গড়ে তুললেন একটি স্কুল। তবে নিজের কষ্টার্জিত অর্থে স্কুলটি করলেও সেটা নিজের গ্রামে না করে নির্মাণ করলেন গিয়ে আরেক ইউনিয়নের আরেকটি প্রত্যন্ত গ্রামে। যেখানে প্রায় ৪ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ছিল না কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ‘ইতিহাসে একদা স্ত্রীর প্রতি চরম ভালোবাসায় সম্রাট শাহজাহান গড়েছিলেন তাজমহল আর এদিকে স্ত্রীর প্রতি পরম ভালোবাসায় তিনি গড়লেন একটি বিদ্যালয়’।

বাবুগঞ্জের উত্তর রহমতপুর গ্রামে ‘ফেরদৌসি বেগম শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়’ গড়ে ওঠার নেপথ্য গল্পটা ছিল ঠিক এমনই। এভাবেই ২০১৫ সালে উপজেলার উত্তর রহমতপুর গ্রামে শুরু হওয়া একটি স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন হয়েছে। ব্যক্তিগত অর্থায়নে তৈরি হওয়া স্কুলটি আজ রূপ লাভ করেছে পাকা ভবনে। সেখানে পাঠদান চলছে ২ শতাধিক শিশু শিক্ষার্থীর। শনিবার ওই ফেরদৌসি বেগম শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন করা হয়েছে। তবে মোঘল ইতিহাসের সম্রাজ্ঞী মমতাজের মতোই স্বপ্নপুরণের সেই মহেন্দ্রক্ষণটি দেখে যেতে পারেননি বিদ্যালয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা ফেরদৌসি বেগম। স্বপ্নের বিদ্যালয়ের বর্ণিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিষাদময় কণ্ঠে সেই স্মৃতিচারণই করেছেন ফেরদৌসি বেগমের জীবনসঙ্গী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. দেলওয়ার হোসেন।

শনিবার (১৭ আগস্ট) উপজেলার উত্তর রহমতপুর গ্রামে নবনির্মিত ওই ফেরদৌসি বেগম শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের শুভ উদ্বোধন করেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ও অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। বাবুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজিত হাওলাদারের সভাপতিত্বে বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বরিশাল জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান, বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক এস.এম ফারুক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল লতিফ মজুমদার ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এস.এম খালেদ হোসেন স্বপন। প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন ও শামীমা নার্গিসের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী সুধী সমাবেশে এসময় আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মোস্তফা কামাল চিশতি, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অতিরিক্ত সচিব মো. দেলওয়ার হোসেনের কন্যা মারিয়াম হোসেন ভাবনা, শিক্ষার্থী অভিভাবক দীপক মজুমদার প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য অতিথিদের মধ্যে এসময় উপস্থিত ছিলেন বাবুগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুসরাত জাহান খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল মান্নান হাওলাদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মৃধা আকতারুজ্জামান মিলন, ইঞ্জিনিয়ার শাহরিয়ার আহমেদ শিল্পী, মুলাদী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন, বরিশাল বিমানবন্দর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আরিফ আহমেদ মুন্না, বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদক মাসুদ আহমেদ খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মফিজুর রহমান পিন্টু, যুবলীগ সম্পাদক মাসুদ করিম লাবু, ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম, এইচ.এম ইউসুফ আলী, মোক্তার হোসেন, প্রভাষক মনিরুজ্জামান খোকন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন, চাঁদপাশা ইউপি সদস্য জাকির হোসেন প্রমুখ। ওই বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় ২০১৫ সালে ব্যক্তিগত অর্থায়নে ফেরদৌসি বেগম শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শুরু করেন বাবুগঞ্জের চাঁদপাশা ইউনিয়নের ডিক্রিরচর গ্রামের কৃতি সন্তান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. দেলওয়ার হোসেন। রহমতপুর ইউনিয়নের উত্তর রহমতপুর গ্রামে প্রায় ৪ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় তিনি সেখানেই নিজ উদ্যোগে জমি কিনে ওই বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণ করেন। বিদ্যালয়টি নির্মিত হওয়ার ফলে উপজেলার উত্তর রহমতপুর গ্রামের প্রায় ৫০০ শিশু শিক্ষার্থী একযোগে শিক্ষালাভের সুযোগ পাবে। বর্তমানে ওই ফেরদৌসি বেগম শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক ও ২ জন কর্মচারিসহ প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। নিজের এলাকা বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় এবং যথোপযুক্ত স্থানে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নির্মাণের জন্য প্রতিষ্ঠাতা অতিরিক্ত সচিব মো. দেলওয়ার হোসেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। নিজ অর্থায়নে স্ত্রীর নামে ১১২ ইনডেক্স নম্বরের এই স্কুলটি নির্মাণ ছাড়াও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হওয়ার পরে সরকারি অর্থায়নে বাবুগঞ্জসহ বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষার বিকাশ ও মানোন্নয়নে প্রায় অর্ধশতাধিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে প্রত্যক্ষ অবদান রাখেন বাবুগঞ্জ উপজেলার এই মহৎপ্রাণ কর্মবীর। #

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন