২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বাল্যবিবাহ রোধে জনপ্রতিনিধিরা ভূমিকা রাখতে পারেন: এমপি শাওন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:০৯ অপরাহ্ণ, ১০ এপ্রিল ২০২১

বাল্যবিবাহ রোধে জনপ্রতিনিধিরা ভূমিকা রাখতে পারেন: এমপি শাওন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক,  তজুমদ্দিন >> বাল্যবিবাহ একজন মেয়ের জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপুষ্ট ও প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম, অধিকার বঞ্চিত করাসহ নানা ধরণের ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয় একজন বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েকে। অন্যদিকে একজন শিক্ষিত মা কখনোই তার সন্তানকে বাল্যবিবাহ দিবেন না। সেজন্য নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি, বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন করার কোন বিকল্প নেই। এছাড়া বাল্যবিবাহ রোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিশেষ করে উপজেলা ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সক্রিয় ভূমিকা রাখা, স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর হওয়া, ভূয়া জন্ম নিবন্ধন বন্ধ করা, স্কুলগুলোর ভূমিকা রাখা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটিগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কোস্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি এসব কথা বলেন।

কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত “শিশু বিয়ের প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ” শীর্ষক এই ভার্সুয়াল সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- লালমোহনের উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন, তজুমুদ্দিনের উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, তজুমুদ্দিনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পল্লব কুমার হাজরা, লালমোহনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান, লালমোহন উপজেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রাসেলুর রহমান, ইউনিসেফ বরিশাল বিভাগের ফিল্ড অফিস প্রধান এ এইচ তৌফিক আহমেদ প্রমূখ। ভোলা জেলার চারটি উপজেলায় পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের যুগ্ম পরিচালক ইকবাল উদ্দিন। এছাড়া সভায় আরো বক্তব্য রাখেন লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মিয়া, ফরাসগঞ্জের চেয়ারম্যান মো. মুরাদ হোসেন, লালমোহনের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হাছান রিপন, রমাগঞ্জের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফা, শম্ভুপুরের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রমূখ।

দেশে বাল্যবিবাহ হার ৫১.৪% হলেও ভোলায় এই হার ৬০.৪% যা উদ্বেগজনক। কন্যাশিশুর নিরাপত্তার অভাব, অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, কন্যাসন্তানকে গুরুত্ব না দেয়া, শিশু সুরক্ষা হটলাইনের ব্যবহার না করা, আইন শৃংখলা বাহিনী ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির সক্রিয় ভূমিকা না থাকা ইত্যাদি এই অঞ্চলে বাল্যবিবাহ অব্যাহত থাকার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে মহামারী কভিড ১৯ এর কারণে স্কুল থেকে ঝরে পড়া বাল্য বিবাহ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। আর বাল্যবিবাহের কারণে বেড়েছে নারী নির্যাতন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার-চেয়ারম্যানদের সম্পৃক্ততা ছাড়া কোন বাল্যবিবাহ হয় না বলে তৌফিক আহমেদ দাবি করেন। তিনি মেম্বার-চেয়ারম্যানদের তার এলাকায় কোন বাল্যবিবাহ ঘটলে জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মোশাররফ হোসেন দুলাল বলেন, তজুমুদ্দিনের কিছু চরে বাল্যবিবাহ বেশি হয়। সেজন্য অত্র অঞ্চলগুলোতে বাল্যবিবাহ রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এমপি মহোদয়ের সহযোগিতা কামনা করেন। আল নোমান বাল্যবিবাহ রোধে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটিগুলোকে সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দেন। এছাড়া মেয়েদের উপবৃত্তির পরিমাণ ও আওতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন।

মো. রাসেলুর রহমান বলেন, ভোট ব্যাংক কমে যাবে বলে অনেক সময় স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানগণ বাল্যবিবাহ রোধে এগিয়ে যান না। স্থানীয় মেম্বারদের আড়ালে কোন বাল্যবিবাহ হয় না। অনেক সময় আইন-শৃংখলা বাহিনীর লোকজন বিয়ে হওয়ার পর খবর পান। দ্রুত খবর দেওয়ার জন্য তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সহযোগিতা কামনা করেন। পল্লব কুমার হাজরা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটিগুলোকে সক্রিয় করা এবং সভায় কার্যলিপি তার বরাবর নিয়মিত পাঠানোর অনুরোধ করেন। আল নোমান বিভিন্ন কমিটিগুলোর সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি অভিভাবকদের নিয়ে নিয়মিত সভা আয়োজন, সচেতনতামূলক কার্যক্রম, বাল্যবিবাহের খবর পাওয়ামাত্র তা বন্ধে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।

আবুল কাশেম মিয়া বলেন, আমার এলাকার কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সহযোগিতায় অনেকগুলো বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি। গণসচেতনতার কোন বিকল্প নাই। মিজানুর রহমান বলেন, বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি। আমরা সবাই এর বিরুদ্ধে কাজ করছি। আমরা বাব-মাকে সচেতনতার পাশাপাশি কাজীদেরকেও সচেতন করছি। রেজাউল করিম চৌধূরী বলেন, ভোলা অঞ্চলে নারীর ক্ষমতায়নে কোস্ট দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে। সেই কাজের ধারাবাহিতায় বাল্যবিবাহ রোধে সরকারের সাথে বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে একযোগে কাজ করতে অঙ্গিকারবদ্ধ। সেই লক্ষ্যে কোস্ট ভবিষ্যতেও তার কর্মকা- অব্যাহত রাখবে।

গবেষণাপত্রে বাল্যবিবাহ বন্ধে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি সুপারিশমালায় বলা হয়-স্থানীয় প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদকে সক্রিয় করা, গ্রামে গ্রামে কমিটি গঠন, নিরাপত্তা বৃদ্ধি, উপবৃত্তির আওতায় আনা ও টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি, ভূয়া জন্ম নিবন্ধন বন্ধ করা, রেজিস্টার্ড কাজী ছাড়া বিবাহ পড়ানো বেআইনী মর্মে প্রচারণা চালানো ইত্যাদি।

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন