নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: স্বজন হারানোর দুঃখে ছলছল করছে পরিবারের চোখ। শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে ব্যস্ত সবাই। আত্মীয় স্বজনও আসতে শুরু করেছে। সাদা কাপড়ের প্যান্ডেলও প্রায় শেষ। এমন সময় হঠাৎ ফোন এলো হাসপাতাল থেকে। ওপাশ থেকে বলতে শোনা গেল, ‘আপনার রোগী সুস্থ হয়ে গিয়েছে, অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে’।

ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বারাসাতে।

বারাসাতের জি এন আর সি হাসপাতালের ফোন পেয়ে চিরতরে হারিয়ে যাওয়া মানুষকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ প্রকাশ কীভাবে করতে হয় বুঝতে পারছিলেন না পরিবার। আনন্দে কেঁদে ফেলে তারা। অপেক্ষা করতে থাকে অ্যাম্বুলেন্সের।

তবে বিশ্বাস করতে বেগ পেতে হয় তাদের। কারণ, হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে তার সৎকার করেছিল ছেলে। নিয়ম কানুনের মধ্য দিয়েই সন্তানরা মনকে বুঝিয়েছে বাবা আর নেই। মৃত ব্যক্তি আর ফিরে আসে না। তাকে আর ছুঁয়ে দেখা যায় না। কিন্তু এই কঠিন পরিস্থিতি নিমেষে মিথ্যা হয়ে যাওয়াতে ছলছলে চোখে, হাসি ফুটেছে ব্যানার্জি পরিবারের।

বারাসাতের এক হাসপাতালে গত ১১ নভেম্বর ভর্তি করা হয় শিবনাথ ব্যানার্জিকে। ১৩ নভেম্বর হাসপাতাল থেকে বলা হয় মৃত্যু হয়েছে শিবনাথের। কিন্তু, করোনা বিধি মেনে দূর থেকে দেখানো হবে মৃতকে, হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে দাহ করা হবে। তাই হয়।

এই ঘটনার সমান্তরালে চলতে থাকে আরও একটি ঘটনা। মোহিনী মোহন গোস্বামী পরিবারকে ফোন করে ওই সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল জানায়, তাদের রোগী ভাল হচ্ছে। রোজই ফোন করে খবর নেয় পরিবার।

ফোনের ওপার থেকে প্রত্যেকবারই জানানো হয়, রোগী একটু একটু করে ভালো হচ্ছে। পরিবার ভাবতে বসেছিল, করোনাকে প্রায় জয় করেই নিয়েছেন মোহিনি মোহন গোষ্বামী। কিন্তু ঘটনা বাঁক খায় শুক্রবার (২০ নভেম্বর)।

হঠাৎ হাসপাতাল থেকে গোস্বামী পরিবারে ফোন করে বলা হয়, রোগী সুস্থ বাড়ি ফিরছে। অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার পর রোগী অ্যাম্বুলেন্সের চালককে বলেন বিরাটি যাব, গোষ্বামী পরিবার বলেন পলতা। এরপরই তারা দেখেন রোগী তাদের নয়।

এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সত্য উদঘাটন হয়। ১৩ নভেম্বর যিনি মারা গিয়েছিলেন তিনি হলেন মোহিনী মোহন গোস্বামী। অন্যদিকে, গোস্বামী পরিবারকে যে রোগীর সুস্থ হওয়ার খোঁজ দেওয়া হচ্ছিল তিনি ছিলেন করোনা জয়ী শিবনাথ বাবু।

ঘটনার পর, করোনা মৃত্যু বিভ্রাট নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট তলব স্বাস্থ্য ভবনের। ৩ জনের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই গাফিলতির জন্য দোষীদের চিহ্নিত করে কড়া শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানা যাচ্ছে।