২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বিউটিশিয়ানকে তুলে নিয়ে ৩ পুলিশ কর্মকর্তার নিপীড়ন!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:২৮ অপরাহ্ণ, ২২ জানুয়ারি ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: চট্টগ্রামে দিন-দুপুরে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এক নারীকে নিপীড়ন ও আটকে রেখে ৬ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে চান্দগাঁও থানার তিন পুলিশ কর্মকর্তা এবং পুলিশের দুই সোর্সের বিরুদ্ধে।

তারা ওই নারীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে এ সব টাকা হাতিয়ে নেয়।

ঘটনার শিকার ওই নারী মঙ্গলবার সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়াও অভিযোগ দিয়েছেন উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) বরাবরে।

ঘটনার শিকার হামিদা বেগম পেশায় একজন বিউটিশিয়ান।

যাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন চান্দগাঁও থানার এসআই আফসার উদ্দিন রুবেল, এএসআই মোহাম্মদ মুসা, এএসআই শংকর, পুলিশের সোর্স আনোয়ার হোসেন বেচু ও সেকান্দর আলী।

অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) শ্যামল কুমার নাথ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযোগ তদন্ত করার জন্য চান্দগাঁও থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছি।’

নির্যাতনের শিকার ওই নারী সাংবাদিকদের জানান, তার বাসা চান্দগাঁও থানার পূর্ব ষোলশহর বাড়ইপাড়া এলাকায়। ঈদগাঁও বউবাজার এলাকায় ‘এক্সক্লুসিভ’স নিউ স্টাইল’ নামে তার একটি বিউটি পার্লার রয়েছে। শ্বশুরবাড়ি বোয়ালখালীতে। তার স্বামী ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার চার মাস বয়সী একটি শিশু সন্তান রয়েছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে ভাড়া বাসা থেকে বের হন তিনি। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে পৌঁছলে চান্দগাঁও থানার এসআই আফসার উদ্দিন রুবেল, এএসআই শংকর ও এএসআই মুসা তার গাড়ির গতিরোধ করে। এরপর তাকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ চান্দগাঁও থানায় নিয়ে যান পুলিশ কর্মকর্তারা।

থানায় নেয়ার পর সিএনজি অটোরিকশা থেকে নামিয়ে থানার সামনে থাকা একটি কালো কাচের নোহা মাইক্রোবাসে তুলে বসিয়ে রাখে। এরপর তার বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসাসহ নানা অভিযোগ এনে এসআই রুবেলসহ অন্যরা তার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন।

পুলিশের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ তাকে মাইক্রোবাসে করে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারে নিয়ে একটি ইয়াবার প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। টাকা না দিলে ইয়াবা মামলায় চালান দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়। একই সঙ্গে তার ওপর যৌন নিপীড়ন চালায়।

ওই নারী নিরুপায় হয়ে কান্নাকাটি করে তার ছোট বোন জেসমিন আক্তারকে ১০ লাখ টাকার জন্য ফোন দেন। জেসমিন ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা জোগাড় করে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকার একটি ফিলিং স্টেশনের সামনে আসেন।

জেসমিন সাংবাদিকদের বলেন, এএসআই শংকরের হাতে তিনি ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা তুলে দেন। এসআই রুবেলসহ তারা টাকাগুলো গুনে নেন। এরপর তারা আরও চার লাখ টাকা দাবি করেন। বাকি ৪ লাখ টাকার জন্য একটি খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়া হয়। ওখান থেকে তার বোনকে ছেড়ে দেয়া হয়।

ওই নারী সাংবাদিকদের জানান, চান্দগাঁও থানা পুলিশের সোর্স আনোয়ার হোসেন বেচু দীর্ঘ দুই বছর যাবৎ বিউটিশিয়ানকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় বেচু। তাতেও কাজ না হওয়ায় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে তাকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল।

জানা গেছে, আনোয়ার হোসেন বেচু প্রতারক চক্রের সদস্য। চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৫ সালের ১৮ মে রাঙ্গুনিয়া থানা এলাকা থেকে নকল সোনার বারসহ তাকে একবার গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় তৎকালীন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই শাহাদাত হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

এসআই আফসার উদ্দিন রুবেল অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৫ ডিসেম্বর অন্য একটি মামলার তদন্তের কাজে কক্সবাজারে ঈদগাঁও এলাকায় ছিলাম। অন্য দুই এএসআই আমার টিমে কাজ করে। হয়তো তারা এ সব করার কারণে আমি টিম লিডার হিসেবে আমাকেও জড়ানো হয়েছে।’

চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক নারীকে নির্যাতন ও ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে এ ব্যাপারে আমরা অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছি। এর পেছনে অন্য কোনো কাহিনী আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।’

0 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন