১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

শিরোনাম

বিএনপির গণসমাবেশ: পুলিশের তল্লাশি, আ.লীগ কর্মীদের মহড়া

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২:৩৫ পূর্বাহ্ণ, ০৯ ডিসেম্বর ২০২২

বিএনপির গণসমাবেশ: পুলিশের তল্লাশি, আ.লীগ কর্মীদের মহড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বিএনপির ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশকে ঘিরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মহড়া দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, পল্টন মোড়, যাত্রাবাড়ী, বাবুবাজার ব্রিজ, কল্যাণপুর, মিরপুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও নীলক্ষেতসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের মহড়া ছিল চোখে পড়ার মতো। আদালতেও মিছিল করেছেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা।

রাজধানীর প্রবেশদ্বারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পাহারা বসিয়েছে পুলিশ। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী ও সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও অবস্থান করতে দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ আটটি পয়েন্টে পাহারা বসিয়ে অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগের নগর ও থানা, ওয়ার্ড নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরা। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিএনপির নৈরাজ্যের প্রতিবাদে মিছিল সমাবেশ করছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে মাঠে নেমে অবস্থান নিয়েছে সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। এরই অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের পরিবর্তে মহানগর নাট্যমঞ্চে সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। তবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ৭৫টি ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারা বসিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার নিজেদের মহড়ার ছবি ফেসবুকে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন লিখেন, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজ।

আমাদের লাশের মিছিলের ওপর দিয়ে, পোড়া মানুষের ভয়ার্ত চিৎকার আর রোনাজারির ওপর ভর করে, জনগণকে ভয় দেখিয়ে যারা হত্যার রাজনীতি কায়েম করতে চায়, তাদের এই বাংলার মাটি থেকে মূলোৎপাটন করতে হবে।

এদিকে সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা, সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং দুই সিটি মেয়রের যৌথসভা বসেছে।

এখানেও আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে বিএনপির সমাবেশ। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা, থানা, ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থায় থাকবে।

ষড়যন্ত্রের চোরাগলি দিয়ে বিএনপি সরকার হটানোর চেষ্টা করছে। আক্রান্ত হলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। আমরা সরকারি দল, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। আমাদের যেন কোনো বদনাম না হয় আক্রমণকারী হিসেবে।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও মহড়া দিয়েছে পল্টন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা।

এ ছাড়া রাজধানীর প্রবেশদ্বারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সতর্ক পাহারা বসিয়ে চলছে পুলিশি তল্লাশি। এ সময় আশপাশে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের মহড়া দিতে দেখা গেছে।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি, বিএনপি একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী দল। তাই জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় ঢাকার প্রবেশমুখেও সতর্ক পাহারা রয়েছেন নেতাকর্মীরা।

নগরবাসীর জানমাল রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি আটটি এলাকাকে ভাগ করে পাহারা দেওয়া হচ্ছে। পাহারা দেওয়া হবে টিমভিত্তিক। স্থানীয় নেতারা ওই টিমের দায়িত্বে থাকবেন।

রাজধানীর আটটি পয়েন্টের মধ্যে রয়েছেÑডেমরা-যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, উত্তরা-আজমপুর-বিমানবন্দর, সদরঘাট-সোয়ারীঘাট-বাবুপুরা ব্রিজ, গাবতলী-আমিনবাজার, কমলাপুর রেলস্টেশন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার প্রবেশমুখ, ফার্মগেট, মহাখালী, আশুলিয়া, আবদুল্লাপুর এলাকা ও তুরাগ থানা।

বিএনপির ১০ ডিসেম্বর সমাবেশকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বিএনপি বা ছাত্রদলের প্রবেশ ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মোড় ও হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, মধুর ক্যান্টিন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), দোয়েল চত্বর, পলাশী মোড়, শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকা ও নীলক্ষেত পয়েন্টসহ কয়েকটি স্থানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এ সময় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতেও দেখা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের সাবেক ভিপি সাইফুল্লাহ আব্বাছী অনন্ত বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সে জন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা ক্যাম্পাসে সর্তক অবস্থান নিয়েছি।

জানা গেছে, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ মোকাবিলায় ১০ ডিসেম্বর ভোর থেকেই রাজধানীর ওই আটটি পয়েন্টে পাহারা দেওয়ার নির্দেশ আগে থেকেই দেওয়া হয়েছে কিন্তু বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর থেকেই এই পাহারা আরও জোরদার করা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এলাকাভিত্তিক মহড়া দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা।

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ১২৯টি ওয়ার্ড এবং ৫০টি থানা এলাকায় অবস্থান নিচ্ছেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আর মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ৭৫টি ওয়ার্ড ও ২৪টি থানা আর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ৫৪টি ওয়ার্ড ও ২৬টি থানায় দলের নেতাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের থানাগুলোর সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তাদেরকে সমন্বয় করছেন। ডেমরার প্রবেশপথ সুলতানা কামাল সেতুর পাশে অবস্থান নিয়েছেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল।

তিনি বলেন, জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এবং সড়কে নৈরাজ্য প্রতিরোধে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা মেনে আমরা ভোর থেকেই ডেমরা চৌরাস্তায় নেতাকর্মীদের নিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে অবস্থান নিয়েছি।

গেন্ডারিয়া থানার ইস্টার্নক্যাব ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, আমরা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নির্দেশে বিএনপি-জামায়াতের অপতৎপরতা রুখতে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে অবস্থান নিয়েছি।

এ ছাড়া পল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সতর্ক অবস্থান নেয় যাত্রাবাড়ী থানার অন্তর্গত ৪৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। এতে উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কৌশিক আহমেদ জসিম, ৪৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ৪৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফ উদ্দিন, ৬৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা এনামুল ইসলাম এনাম, ৪৯ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কৃষক লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক হাসান মাহমুদ অপু ও নজরুল ইসলাম নিপু, ৪৮ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল কবির রাজু, ৪৯ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সজীব হোসেন ও আকলিমা বেগমসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, দেশবাসী দেখেছে, ১০ ডিসেম্বর তাদের গণসমাবেশের আগেই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা কীভাবে সহিংসতা করেছে। এক পথচারীরও মৃত্যু হয়েছে।

এখন থেকে আমরা রাজধানীতে বিএনপির কোনো কর্মীকে ঢুকতে দেব না। ইতিমধ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে আমাদের নেতাকর্মীরা রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়েছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা পাড়া, মহল্লায়, ওয়ার্ড, ইউনিটে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

বিএনপি-জামায়াতকে কোনোভাবে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করতে দেওয়া হবে না। তারা যদি জনগণের জানমালের কোনো ধরনের ক্ষতি করে, আমাদের নেতাকর্মীরা জবাব দেবে।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন