২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

বিএনপির মনোনয়ন কিনলেন বকর সান্টু আলাল ও জামাল

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৫৯ অপরাহ্ণ, ১২ নভেম্বর ২০১৮

বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে বিএনপির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক ও বার কাউন্সিলের সাবেক উপ-সচিব অ্যাডভোকেট এস এম এ বকর। সোমবার (১২ নভেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে এস এম এ বকরের পক্ষে অ্যাড এস এম এম বকরের ছোট ভাই অধ্যাপক (অ্যাড) মিজানুর রহমান, অ্যাডভোকেট একে আজাদ, অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান, ও আডভোকেট. রায়হান মল্লিক নয়নসহ বিএনপি নেতারা কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এর পরপরই এ আসনে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতা এস সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল. সাবেক হুইপ শহিদুল হক জামাল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের পদচারনায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এদিকে বরিশাল-২ আসনে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট এস এম এ বকর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা বিরাজ করছে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহের খবরে উজিরপুর থেকে সাতলা আর বানারীপাড়া থেকে বিশারকান্দি প্রতিটি ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে বিএনপি কর্মী সমর্থকদের মাঝে অ্যাডভোকেট এস এম এ বকরকে নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। বিশেষ করে বিএনপির দুর্দিনে নেতা-কর্মীদের খোঁজ খবর নেওয়া ও হামলা মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের পাশে থাকা, আর্থিকভাবে সহায়তা এবং সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার জন্যই কমী- সমর্থকদের মধ্যে এ উৎসাহ বলে জানান তৃণমূলের বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী।

এছাড়া এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী অপর বিএনপি নেতা এস সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টুর বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ড, কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতি, ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন ও আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীদের পাশে না থাকাসহ বিএনপির দুর্দিনে ইচ্ছাকৃতভাবে ঢাকা কিংবা দেশের বাইরে অবস্থান করার কারণেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া নির্যাতিত নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর না নেওয়া ও আন্দোলন সংগ্রামে অংশ না করার কারণেই দিন দিন তার জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ধ্বস নেমেছে। আর সান্টুর এ ব্যর্থতাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন অ্যাডভোকেট এস এম এ বরক। অপর মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী নেতারা কেউই দুর্দিনে উজিরপুর বানারীপাড়ার কোন নেতাকর্মীর পাশে ছিলেন না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতাকর্মী।

স্থানীয় বিএনপি সূত্র জানায়, বিগত ২০০৯ নির্বাচনে বিএনপি নেতা এস সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু বিপুল ভোটের ব্যাবধানে আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম মনির কাছে হেরে যান। বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত উজিরপুর-বানারীপাড়ায় বিএনপির প্রার্থীর এমন পরাজয় মেনে নিতে পারেন নি বিএনপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এলাকা ছাড়েন এস সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু। এর পর থেকে তিনি মাঝে মধ্যে এলাকায় এলেও সরকার বিরোধী কোন আন্দোলন সংগ্রামে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিলো না।

এছাড়া সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে যারা হামলা মামলার শিকার হয়েছেন তাদের পাশে এসে দাড়াঁন নি তিনি। এমনকি শিল্পপতি হয়েও আর্থিক ভাবেও কোন নেতা কর্মীদের পাশে দাঁড়াননি সান্টু। শুধু আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে না থাকাই নয়, দুদির্নে মাঠে থাকা ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রæপিং সৃষ্টি করে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে পছন্দের লোকজনদের দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করে সব চেয়ে বেশি বিতর্কে জড়িয়েছেন সান্টু। সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ^াসের মৃত্যুর পর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ নেতাকর্মী বরিশাল এলেও বরিশাল অবস্থান করার পরও লাশ দেখতে আসেননি সান্টু।

যদিও ওই দিন তিনি বানারীপাড়া অবস্থান করে একটি ভুরিভোজ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এস সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টুর এ ধরনের কর্মকান্ডে তৃণমূলে যখন তিনি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন ঠিক তখনই দলের হাল ধরেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক ও বার কাউন্সিলের সাবেক উপ-সচিব অ্যাডভোকেট এস এম এ বকর। দীয় দিন ধরে তিনি কেন্দ্রীয় কিংবা স্থানীয় বিএনপির প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে তাদের মনোবল চাঙা করে চলেছেন। শুধু তাই নয়, হামলা মামলায় জর্জরিত বিএনপি নেতাকর্মীদের আর্থিক সহায়তা করে তাদের উৎসাহিত করছেন। এছাড়া কেন্দ্র ঘোষিত ও স্থানীয় বিএনপির প্রতিটি আন্দোলনে নেতাকর্মীদের সাথে সামিল হয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, সান্টুর সেচ্ছাচারিতায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ওষ্ঠাগষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বানারপাড়াবাসী তার বিকল্প নেতৃত্ব চায়।

অ্যাডভোকেট এস এম এ বকরের মতো নেতা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেলে বিএনপি নেতাকর্মীরা অবশ্যই তার বিজয় সু-নিশ্চিত করতে কাজ করবে। তবে সান্টু প্রার্থী হলে বিএনপির নেতাকর্মীরাই তাকে বর্জন করবে বলেও মন্তব্য করেন এ বিএনপি নেতা। এদিকে মনোনয়পত্র সংগ্রহ করা কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাবেক হুইপ শহিদুল হক জামাল দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় অবস্থান করেননি। এমনকি দুর্দিনে কোন নেতা-কর্মীর খোঁজ-খবর কিংবা তাদের পাশে দাড়াননি। এ কারণে এদের নিয়ে বিএনপির নেতা কর্মীদেরমধ্যে কোন আলোচনা কিংবা আগ্রহ নেই।

মনোনয়নপত্র সংগ্রহের বিষয়ে অ্যাডভোকেট এস এম এ বকর বলেন, তিনি দীর্ঘ দিন ধরে দলের জন্য কাজ করছেন। হামলা মামলা ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। নেতাকর্মীদের নামে দায়ের হওয়া মামলা পরিচালনার পাশাপাশি তাদের মামলার খরচ যোগাতে আর্থিক ভাবে সহায়তা করছেন তিনি। এছাড়া উজিরপুর বানারীপাড়ায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন তিনি। এ কারনে আসন্ন নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে। বিএনপির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনি আশাবাদী দল তাকে মূল্যায়ন করবে। বিএনপির মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটের ব্যাবধানে বিজয়ী হবেন বলেও আশাবাদী এ বিএনপি নেতা।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন