২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বিক্ষোভের আগুনে পুড়ছে ভারত

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:১৩ অপরাহ্ণ, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:: ভারতের লোকসভায় সোমবার পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিবিএ) য়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা দেশ। ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে। বিক্ষোভে অচল হয়ে পড়েছে আসাম, মনিপুর ও ত্রিপুরা রাজ্য।

আসামে ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি। এই নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছে প্রায় ১৯ লাখ মানুষ যাদের অধিকাংশই হিন্দু। এ নিয়ে আগে থেকেই রাজ্যটিতে ক্ষোভ বিরাজ করছিলো। এবার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের ঘটনায় সেই বিক্ষোভে যেন পেট্রোল ঢেলেছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে আসামের ডিব্রুগড়, জোড়হাটের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে সোচ্চার হন সাধারণ মানুষ। বঙ্গাইগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকাতেও সকাল থেকে চলছে বিক্ষোভ। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে চলছে অবরোধ। আসামের জোড়হাট, ডিব্রুগড়ের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট জনশূন্য। বন্ধ স্কুল-কলেজ ও দোকানপাট। সড়কে যানবাহন চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে মঙ্গলবার আসামে ১১ ঘণ্টার বনধ নর্থ-ইস্ট স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন বা এনইএসও-র। ওই বনধকে সমর্থন দিয়েছে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, এআইডিডব্লিউএ, এআইএসএফ, এআইএসএ এবং আইপিটিএ-র মত আরও ১৬টি সংগঠন।

বড় রকমের গোলযোগের আশঙ্কায় মঙ্গলবার পরীক্ষা বাতিল করেছে ওই রাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ৷ বনধকে ঘিরে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে আসাম প্রশাসন। রাজ্যের লখিমপুর ও সোনিতপুর জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

বিতর্কিত ওই বিল বাতিলের দাবিতে ত্রিপুরায় ১২ ঘণ্টার বনধ ডেকেছে আইপিএফটি। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করে গোটা উত্তর পূর্ব ভারতে বনধ ডাকে নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন সহ একাধিক ছাত্র সংগঠন। ত্রিপুরায় রেললাইনে চলছে বিক্ষোভ। বিখ্ষোভের কারণে ওই রাজ্যের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে বন্ধ রয়েছে। সব মিলিয়ে স্তব্ধ ত্রিপুরা।

বিক্ষোভ চলছে মনিপুর রাজ্যেও। এ রাজ্যের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে মণিপুর পিপলস এগেইনস্ট সিএবি (মানপ্যাক)। তবে সোমবার কেন্দ্রীয় সরকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি) শাসনের আওতায় আনার পর দলটি এই আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে অল মুরান স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এএমএসইউ) এখনও মণিপুরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। তাদের ডাকে মঙ্গলবার সকাল থেকে গোটা রাজ্যে চলছে বনথ। ফলে সেখানে বন্ধ রয়েছে সকল ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও স্কুল কলেজ। সড়কগুলোতে কোনো যানবাহন বা পথচারী নজরে পড়ছে না।

শুরু থেকেই এই বিলের বিরোধিতা করছে অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, আসাম এবং মেঘালয়ের মতো রাজ্যগুলো। যার ফলে ভারতের এই ছয় অঞ্চলে এই বিল কার্যকর হবে না বলে ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছেন মোদি সরকার। এরপরও থামছে না বিক্ষোভ।

এদিকে এই বিলের বিরোধিতা করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি এই বিলের বিরোধিতাকারী দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছেন।

দীর্ঘ সাত ঘণ্টা বিতর্কের পর সোমবার মধ্যরাতে ভারতীয় পার্লামেন্ট লোকসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) পাস করাতে সক্ষম হন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আগামী বুধবার রাজ্যসভায় বিলটি উত্থাপন করার কথা রয়েছে। ২৪৫ সদস্যের রাজ্যসভায় বিলটি পাসের জন্য ১২৩ ভোট লাগবে।

ধর্মের ভিত্তিতে আনীত ওই বিলে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সে দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু মুসলিম শরণার্থীদের বিষয়ে বিলে কিছু বলা হয়নি। এর অর্থ হচ্ছে, পার্শ্ববর্তী ওই তিন দেশ থেকে আসা মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনকে ভারতের নাগরিকত্ব দেয়া হবে না।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন