২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:২৫ পূর্বাহ্ণ, ০৫ অক্টোবর ২০২২

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: জাতীয় গ্রিডে হঠাৎ করে ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ বলতে পারছেন না কেউ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা কারণে গ্রিডে বিপর্যয় হতে পারে। এ সংকট মানবসৃষ্ট বলেও আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

২০১৪ সালে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর বিদ্যুৎ খাতে অনেক উন্নয়ন করা হয়, তাই এমনটা হওয়ার কথা নয়। জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে একটি কমিটি গঠন করবে বিদ্যুৎ বিভাগ।

অন্যটি করবে তৃতীয়পক্ষ থকে। দুইটি কমিটি বিভ্রাটের কারণ খুঁজে বের করবে। এছাড়া জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের কারন অনুসন্ধানের ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে পিজিসিবি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৪ সালের ব্ল্যাক আউটের পর করা সব সুপারিশ মানা হয় নি। সঞ্চালন প্রক্রিয়া এখনো পুরোপুরি ডিজিটাল হয়নি। এই কারণেই এই বিপর্যয়। এ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরে একবার কোনো কারণে অল্প সময়ের জন্য গ্রিডে বিপর্যয় হতে পারে। এটা স্বাভাবিক। গত সেপ্টেম্বরে একবার হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) হয়েছে তার চেয়ে বেশি। এটা স্বাভাবিক নয়।

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) দুপুর ২টা ৫মিনিটে জাতীয় গ্রিডের ইস্টার্ন গ্রিড ফেল করায় দেখা দেওয়ায় রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ অঞ্চলসহ বেশ কিছু এলাকায় ৪ থেকে ৮ ঘণ্টার অধিক সময় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।

এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। অফিস, আদালত, বিমানবন্দর, হাসপাতাল, কল-কারখানা, রেলের টিকেট ক্রয়, বস্ত্রখাতের উৎপাদন ও সেবায় বিঘ্ন ঘটে। বিদ্যুৎ না থাকায় চরম পানি সংকট দেখা দেয়। অনেক এলাকায় গ্যাসের সংকটও দেখা দেয়।

কি কারণে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয় তা জানাতে পারেনি বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কেউ। জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

এর মধ্যে একটি কমিটি গঠন করবে বিদ্যুৎ বিভাগ। অন্যটি করবে তৃতীয়পক্ষ থকে। দুইটি কমিটি বিভ্রাটের কারণ খুঁজে বের করবে। এছাড়া জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানের ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে পিজিসিবি।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নানা কথা শোনা যাচ্ছে, এটা স্যাবোটাজও হতে পারে। অনেকেই বলছেন, একটা গ্রিডে বিপর্যয় হলে জাতীয় গ্রিড এমনভাবে ফল করার কথা নয়। এর পেছনে অন্য কারণ থাকতে পারে। তদন্তে আসল কারণ বেরিয়ে আসবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রিডে সমস্যা হলেও তার তীব্রতা নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি রয়েছে। যেমন, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে গ্রিডের সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত করা যায়, যাতে গ্রিড বন্ধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গ্রিড থেকে বিযুক্ত হয়ে যাবে।

এর ফলে গ্রিড বন্ধ হলেও কেন্দ্রটি বন্ধ হবে না। গ্রিড মেরামতের সঙ্গে কেন্দ্রটি আবার গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। এই ব্যবস্থায় প্রাথমিক ব্যয় বেশি। কিন্তু গ্রিডে সমস্যার কারণে কখনোই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না।

মঙ্গলবারের জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৪ সালে জাতীয় গ্রিডে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় তা ঠেকাতে উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তাই এমন বিপর্যয় হবার কথা না। তদন্তে প্রকৃত কারণ উঠে আসবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, বিদ্যুৎব্যবস্থায় গ্রিড একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর অঙ্গ। গ্রিড বন্ধ হয়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটার অনেক কারণ আছে।

অতি পুরনো ও জরাজীর্ণ সঞ্চালন লাইনে (গ্রিড) যদি তার ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হয়, তাহলে গ্রিডের সার্কিট পুড়ে বিপর্যয় ঘটতে পারে।

সঞ্চালন লাইনে যদি ছিদ্র দেখা দেয়, তা থেকে স্পার্ক করে গ্রিড বন্ধ হতে পারে। বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ফ্রিকোয়েন্সিতে হেরফের হলে গ্রিড বন্ধ হতে পারে।

বড় কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র হঠাৎ বন্ধ হয়ে জাতীয় গ্রিড ফেল করতে পারে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হলে এমনটা হতে পারে। উৎপাদন ও চাহিদার সমন্বয়ে ভুল হলে এমনটা হতে পারে। এমন আরও অনেক কারণ রয়েছে।

এমনকি চালু বা সক্রিয় অবস্থায় সঞ্চালন লাইনে কোনো পাখি বসলে কিংবা কোনো গাছ বা গাছের ডালপালা ভেঙে পড়লেও গ্রিড বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এর যেকোনো একটি কারণের প্রয়োগ যত তীব্র হবে, বিপর্যয়ও হবে তত ব্যাপক। তবে যেকোনো দেশের জাতীয় গ্রিডের একটি প্রধান অংশ (ব্যাকবোন) থাকে। তার সঙ্গে যুক্ত থাকে একাধিক আঞ্চলিক গ্রিড।

সে বিভক্তিগুলো আবার এক সুতায় গাঁথা থাকে। এর মধ্যে এমন কারিগরি ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে জাতীয় গ্রিডের কোনো আঞ্চলিক অংশে উক্ত যেকোনো কারণে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে বা বন্ধ হয়ে গেলে সম্পূর্ণ গ্রিড বন্ধ হবে না। তবে ব্যাকবোন বন্ধ হওয়ার কোনো কারণ ঘটলে তার প্রভাব সর্বব্যাপী হয়।

তিনি বলেন, বছরে একবার অল্প সময়ের জন্য গ্রিডে বিপর্যয় হলে সেটা মানার মতো। তবে একাধিকবার হলে বুঝতে হবে কোথাও ত্রুটি আছে।

অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন তার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘বিদ্যুৎ ব্যবস্থার এত উন্নয়নের পরও এমন বিপর্যয় মেনে নেওয়া কঠিন। কারণ বিদ্যুতের সঙ্গে পানিও জড়িত। দুটিই আমাদের জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।’

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ব্ল্যাক আউটের পর ন্যাশনাল লোড ডেচপাস সেন্টারসহ (এনএলডিসি) গোটা দেশের বিদ্যুৎব্যবস্থা ও স্ক্যাডা চালুসহ এমনভাবে ঢেলে সাজানো ও উন্নয়ন করা হয়।

ফলে, ব্ল্যাক আউট হবার কোনো অবকাশ নেই বললেই চলে। এটা বিদ্যুৎ বিভাগের সবাই জানেন। এর কারণ যথাযথভাবে উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে সিস্টেমকে আরও ডেভেলপ করতে হবে।

জানতে চাইলে পাওয়ার সেল বিভাগের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আজ কেন এই ঘটনা ঘটেছে সেটি এখনও আমরা জানতে পারিনি।

তদন্ত করার আগে এটি বলা সম্ভব নয়। তবে ফ্রিকোয়েন্সিতে গরমিল হলেই এটি হতে পারে। ফ্রিকোয়েন্সিতে গরমিল নানা কারণে হয়।

কোথাও সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিলে বা হুট করে কোথাও থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে এমন হতে পারে। গ্রিড লাইনের কোনো একটি অংশ কোথাও বিকল হয়ে গেলেও এটি হতে পারে

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন