২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

বিরল প্রজাতির চিচিঙ্গা চাষে কলেজ শিক্ষকের সফলতা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:০০ অপরাহ্ণ, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

বিরল প্রজাতির চিচিঙ্গা চাষে কলেজ শিক্ষকের সফলতা

সীমান্ত হেলাল, মনপুরা >> দূর থেকে দেখলে অনেকটা সাপের মতো। আপাতদৃষ্টিতে চোখে ধরা দেয় সবুজাভ কোন লম্বা লাঠি। আসলে এটা কোন সাপ কিংবা লাঠির কথা বলছি না। বলছি; ১০ ফুট লম্বা বিরল প্রজাতির একটি মৌসুমী ফসলের কথা। কেউ বলে রেখা, কেউ বলে কিচিন্দা, কেউ বলে কিচিঙ্গা। বইয়ের ভাষায় যাকে বলা হয় চিচিঙ্গা।

ঠিক সেরকমই এক বিরল প্রজাতির চিচিঙ্গা ফসল ফলেছে ভোলার মনপুরা উপজেলায়। একটি চিচিঙ্গা দিয়েই যে কোন পরিবারের এক বেলার তরকারি রান্না হয়ে যায়। ঠিক এরকম বিরল প্রজাতির চিচিঙ্গা চাষের সন্ধান পাওয়া গেছে ভোলার মনপুরা উপজেলার মনোয়ারা বেগম মহিলা কলেজের এক প্রভাষকের বাড়ির আঙিনায়। যা ইতোমধ্যেই সাড়া ফেলেছে উপজেলার পেশাদার কৃষকসহ সর্বমহলের মাঝে।

করোনাকালিন মহাদূর্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক উৎপল মন্ডল তার বাড়ির আঙিনায় শুরু করেন মৌসুমি ফসল চাষাবাদ। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সম্পূর্ন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত ফসল চাষ করে তিনি অনেকটাই সফলতা পেয়েছেন। নিজের পরিবারের দৈনন্দিন তরকারির চাহিদা মিটিয়ে এখন বাজারেও বিক্রি সম্ভব বলে জানান তিনি।

যদিও ব্যবসায়িকভাবে নয়; মূলত শখের বসেই মাত্র দু’টি চিচিঙ্গার বীজ বপন করেন তিনি। খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় অবস্থিত শশুড় বাড়িতে বেড়াতে গেলে তার শশুড় ৪ টি বীজ উৎপল মন্ডলকে উপহার দেন। তার শশুড় ভারতের চেন্নাই থেকে এই বিরল প্রজাতির চিচিঙ্গার বীজ নিয়ে আসেন।

উচ্চফলনশীল এই ফসলের চাষাবাদ প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রভাষক উৎপল মন্ডল জানান, আমার শশুড়ের উপহার দেয়া ৪ টি বীজ এনে তারমধ্যে দু’টি বীজ বপন করি আমি। বীজ বপনের এক সপ্তাহের মধ্যেই অঙ্কুর বের হয়। তিন সপ্তাহের মধ্যে মাচাং দিয়ে গাছকে পরিচর্যা করতে থাকি। ৭ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যেই গাছে ফুল দেখা দেখা দেয়। ফসল হওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে চিচিঙ্গা দ্রুত বড় হয়ে ১০ ফুট লম্বা হয়ে যায়। তবে ফসল পাকা পর্যন্ত ১৫ ফুট লম্বা হয়।

তিনি আরও জানান, এই বিরল প্রজাতির চিচিঙ্গা গাছ ৯ থেকে ১০ মাস সময় পর্যন্ত জীবিত থাকে। জীবিত সময়ে একেকটি গাছ থেকে ১০ মন পর্যন্ত চিচিঙ্গা ফসল ফলানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

যেহেতু কোন প্রকার রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের প্রয়োগ নেই তাই উপজেলা কৃষি অফিসের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। তবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন কন্টেন্ট দেখে চাষাবাদ সম্পর্কে ধারনা নিয়ে তিনি এসব গাছের পরিচর্যা করছেন। ইন্টারনেটে দেখে গাছের উচ্চফলনশীন ‘থ্রীজি’ কাটিং দিয়েছেন বলে জানান তিনি। তাছাড়া নিজেই লিকুইড প্রাকৃতিক সার তৈরি করে গাছের পরিচর্যায় ব্যবহার করছেন।

এছাড়াও পোকা মাকড় থেকে রক্ষায় ফসলের গায়ে পলিথিন জড়িয়ে দিয়ে গড়ে তুলেছেন সুরক্ষা বলয়।

ব্যবসায়িকভাবে চাষাবাদের ক্ষেত্রে প্রভাষক উৎপল মন্ডল বলেন, এই প্রজাতির হাইব্রিড চিচিঙ্গা চাষাবাদ করে কম খরচে কম পরিশ্রমে সহজে বেশি লাভবান হবেন পেশাদার কৃষকরা। তাই ব্যবসায়িকভাবে চাষাবাদের জন্য পেশাদার কৃষকদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন