বৃষ্টির পানিতে পঁচে যাচ্ছে বাদাম, দিশেহারা চাষি
আকতারুজ্জামান সুজন, চরফ্যাশন:: ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে প্রায় এক সপ্তাহ বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানি খেতে জমে যাওয়ায় পচে যাচ্ছে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় চিনাবাদাম। তাই বাধ্য হয়ে অপরিপক্ব বাদাম তুলছেন কৃষকেরা। অপরিপক্ব বাদাম পঁচে যাওয়ায় চাষি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টিপাতে উপজেলার বেশির ভাগ জমিতে পানি জমে রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার নিচু এলাকায় রবিশস্যের খেত পানিতে ডুবে যায়। এতে অপরিপক্ব চিনাবাদাম পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চরফ্যাশন উপজেলায় ৮৫ হাজার ১৯২ হেক্টর আবাদি ও ৩ হাজার ৩৩৭ হেক্টর অনাবাদি জমি রয়েছে। আবাদি জমির মধ্যে এ বছর ৭ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে চিনাবাদাম চাষ করা হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে জমিতে পানি জমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চিনাবাদামের। এতে কৃষকের মাথায় হাত।
উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের চর যমুনা গ্রামের কৃষক সালাউদ্দিন (৩৫) বলেন, ‘গত বছর এক একর জমিতে চিনাবাদাম চাষ করেছিলাম। ভালো ফলন হওয়ায় এবার তিন একর জমিতে চাষ করি। পোকামাকড়ের আক্রমণের পরও এবার ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টিতে প্রায় সব খেতেই পানি জমেছে। পানিতে পচে যাওয়ার ভয়ে প্রায় অর্ধেক জমির অপরিপক্ব বাদাম তুলে ফেলছি। লাভের পরিবর্তে এবার লোকসান গুনতে হবে।’
একই এলাকার কৃষক মো. মিরাজ (২৭) বলেন, ‘বাদাম চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। গত বছর ৩০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছিলাম। আর বাদাম বিক্রি করেছি ৮০ হাজার টাকার। তাই গত বছর লাভ হওয়ায় এ বছর আরও ২০ শতাংশ জমিতে চিনাবাদাম চাষ করি। এতে মোট খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। শতাংশপ্রতি খরচ ২ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু বৃষ্টির পানি জমে আমার খেতের বাদাম নষ্ট হচ্ছে। তাই অপরিপক্ব বাদাম তোলা শুরু করেছি। পরিপক্ব হলে বেশ লাভবান হতাম।’
চরফ্যাশন বাজারের আড়তদার আবদুল কাইয়ুম মিয়াজি বলেন, ‘আমার আড়তে চর মাদ্রাজের মাঝি বাড়ির বাছেদ মাঝি, ফারুক মাঝি, জামাল আহন, আবদুল্লাহপুর এলাকার রফিক হাওলাদার, নূরনবি ডাক্তার, নিলকমল ইউনিয়নের চর যমুনা গ্রামের আবুল কালাম, মো. মিরাজসহ ২৫-৩০ জন চাষি বাদাম বিক্রি করেন। তাঁদের রবিশস্য চাষের জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকা দাদন দেওয়া হয়। তাঁরা রবিশস্য চাষ করে আমার আড়তে বিক্রি করেন। পর্যায়ক্রমে দাদনের টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু এবার অতিবৃষ্টিতে কৃষকদের ফসল নষ্ট হয়েছে। এবার দাদনের টাকা উঠবে না বলে মনে হয়।’
চরফ্যাশন উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ঠাকুর কৃষ্ণ বলেন, ‘চরফ্যাশন উপজেলায় বারি চিনাবাদাম ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ চাষ হয়েছে। বাদাম চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। তাই কৃষকেরা এবার বাদাম চাষ বেশি করেছেন। গত বছর বাদামের চাষ হয়েছিল প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার ৭ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে চীনা বাদাম চাষ হয়েছে। গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে পানি জমে অনেক খেতের বাদাম নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হবে। তবে বৃষ্টি না হলে আগামী ১০ দিন পর পরিপক্ব বাদাম তোলা যেত।’
বিভাগের খবর, ভোলা