২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বেতাগীতে উপেক্ষিত করোনা স্বাস্থ্যবিধি, জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:০৬ অপরাহ্ণ, ০৯ আগস্ট ২০২০

হৃদয় হোসেন মুন্না, বেতাগী :: বরগুনার বেতাগীতে দিন দিন বাড়ছে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা। প্রথম দিকে শুধু সাধারণ মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেলেও পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। ফ্রন্ট লাইন ফাইটার হিসেবে বেতাগীতে করোনা যুদ্ধে নিয়োজিত থাকা চিকিৎসক, পুলিশ সদস্য, ডিএসবি সদস্য, স্বাস্থ্য সহকারীসহ শহর ছেড়ে কোথাও যাননি এমন ব্যক্তিরাও এখন করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হলেও কোথাও যেন তার বালাই নেই। মানুষের হালচাল দেখে মনেই হয় না করোনা মহামারি নিয়ে তারা ভীত সন্ত্রস্ত। জনজীবন যেন এখন প্রায় স্বাভাবিক!

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও করোনা ইউনিটের দায়িত্বে থাকা ডা. রবীন্দ্রনাথ সরকার জানান, রবিবার (০৯ আগস্ট) পর্যন্ত উপজেলায় মোট শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৫৪ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২ জন। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য সহকারী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানসহ মোট ৪০ জন সুস্থ হয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত মোট ৩৯৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর ভিতর গত ১৭ এপ্রিল উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামে প্রথম কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম আক্রান্ত ওই ব্যক্তি বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান। প্রথম দিকে শুধু বেতাগীর বাইরে থেকে আসা লোকজনের মধ্যেই করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। কিন্তু এখন যারা শনাক্ত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই কোন ট্রাভেল হিস্টোরি (ভ্রমণ) নেই। তাঁরা স্থানীয়ভাবেই সংক্রমিত হয়েছেন।

পৌর বাজারসহ আশপাশের হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শুরুর দিকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও এখন মানুষের মধ্যে কমেছে সচেতনতা। অধিকাংশ মানুষের মুখেই নেই মাস্ক। অনেকে আবার সঠিক নিয়মে মাস্ক না পরে তা নাক-মুখের নিচে নামিয়ে রাখছেন। কেউবা মাস্ক পকেটে নিয়ে ঘুরছেন। মুখে মাস্ক না থাকায় কেউ দোহাই দিচ্ছেন, দম বন্ধ হয়ে আসে, কিংবা ভুলে বাসায় রেখে এসেছি। এমনকি ‘আল্লাহর দোহাই’ দিয়েও অনেকে ঢাকতে চাইছেন নিজের অসচেতনতা। সামাজিক দূরত্ব দূরে ঠেলে ভিড় করা হচ্ছে বিভিন্ন দোকানপাটে, গাদাগাদি করে বসা হচ্ছে মাহেন্দ্র ও ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যানে। বাজার, হোটেল, রেস্টুরেন্টে ও অন্যান্য প্রায় সব ক্ষেত্রেই ফিরে আসছে সংক্রমণের আগের পরিবেশ। পুরো শহর এখন লোকে লোকারণ্য। গ্রামের মোড়ের চায়ের দোকানগুলোতে মাস্ক ছাড়াই বসে আড্ডা দিচ্ছেন অসচেতন মানুষ।

গতকাল রবিবার উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়ন থেকে পৌর শহরে বাঁজার করতে আসেন হানিফ সরকার। মুখে মাস্ক নেই ষাটোর্ধ্ব হানিফ সরকারের। কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘হায়াত যখন শেষ হইবো তখন এমনিতেই মরতে হইবো। এত কিছু করে কোনো লাভ নাই। আল্লায় যখন নিবো তখন এমনিতেও যাইতে হবে। করোনা তো খালি উছিলা।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজীব আহসান বরিশালটাইমসকে জানান, ‘মাইকিং করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। অহেতুক বাড়ি থেকে বের না হওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হচ্ছে’।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন