২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

বৈদিক যুগেও প্রচলিত ছিল মানব ক্লোনিংয়ের ধারণা!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:১২ অপরাহ্ণ, ১২ জুন ২০১৯

মানব ক্লোনিং হলো একজন মানুষের জিনগত প্রতিরূপ অন্য একজন তৈরির প্রক্রিয়া। এ পদ্ধতিতে মানব শিশু তৈরি করাই মানব ক্লোনিং নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে কোনও মৃত বা জীবিত ব্যক্তিকে পুনরায় সৃষ্টি করা যায় বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

কিন্তু, আধুনিক যুগের মানব ক্লোনিং-এর ধারণা কী বৈদিক যুগেও ছিল? হিন্দু পুরাণ, শাস্ত্র, মহাকাব্য জুড়ে ছড়িয়ে আছে এমন অনেক দৃষ্টান্ত, যেখানে মনে করা হয় ক্লোনিং-এর ধারণা প্রচলিত ছিল সেই যুগেও।

প্রাচীন ভারতের এক রাজার কথা যায়। ভীনার নামের ওই রাজা মহত্‍ হলেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠুর। বিশেষত বৈদিক ঋষি এবং তাঁদের ক্রিয়াকলাপের প্রতি মোটেও সহৃদয় ছিলেন না তিনি। তাঁর রাজত্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় সবরকম যাগযজ্ঞ। একদিন ঐশী ক্ষমতাবলে রাজা ভীনাকে হত্যা করেন এক ঋষি।

অতঃপর রাজাহীন ভীনার রাজত্বে দেখা দিল অরাজকতা। একপর্যায়ে ঋষিরা ভীনার দেহ থেকে নতুন করে রাজার জন্ম দিতে সম্মত হলেন। তাঁর উরু পুড়িয়ে জন্ম হলো বামন রাজা নিষাদের। ভীনার খারাপ দিকগুলো ছিল তাঁর মধ্যে। এই নিষাদের বংশধর হলেন মহাভারতের রাজা নল এবং একলব্য।

এরপর ভীনার ডান হাত আগুনে পুড়িয়ে জন্ম হলো পৃথুর। সদগুণসম্পন্ন পৃথু ৫০ বছর ধরে অভিভাবক থাকলেন জগত্‍সংসারের। তাঁর থেকেই এই গ্রহের নাম হলো পৃথ্বী বা পৃথিবী।

তারপর এলো রক্তবীজের কথা। ব্রহ্মার বরের অপব্যবহার করেছিলেন তিনি। রক্তবীজের প্রতি রক্তের ফোঁটা মাটিতে পড়েই জন্ম হতে লাগল আর একটি নতুন রক্তবীজের। স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল- তিন লোক জয় করে নিল রক্তবীজ। তাঁকে নিধন করতে জন্ম হলো কালীর। শক্তিরূপী কালী হত্যা করলেন রক্তবীজকে। রক্তবীজের দেহ থেকে সব রক্ত পান করে নিলেন কালী, যাতে এক ফোঁটা রক্তও ভূমি স্পর্শ করতে না পারে। এভাবেই লাগাম টানা হলো রক্তবীজের বিস্তারে।

এদিকে, রক্তবীজের রক্ত পান করার ফলে প্রলয় নৃত্য শুরু করলেন মা কালী। পরে তাঁকে থামাতে অবতীর্ণ হতে হলো মহাদেবকে।

এমন অস্বাভাবিক জন্মের বহু নিদর্শন রয়েছে রামায়ণ, মহাভারতেও। কৌরবদের শতপুত্রের জন্ম হয়েছিল একই ভ্রূণ থেকে। একটি মাত্র ভ্রূণ বিভিন্ন ঘি-পূর্ণ কলসে ভাগ করে রাখায় জন্ম হয় এক শ পুত্র এবং এক কন্যার।

আবার ধার যাক রামায়ণের কথা। বনবাসের শুরুতে রামচন্দ্রের সামনে অবতীর্ণ হন অগ্নিদেব। বলেন, অদূর ভবিষ্যতে রাবণরাজের সঙ্গে রামের যুদ্ধ অনিবার্য। তাই, বিপদ এড়াতে অগ্নিদেব মায়ার সাহায্যে সৃষ্টি করলেন ‘নকল সীতা’। সীতার সেই প্রতিমূর্তি বনবাসে থাকবেন রামচন্দ্রের সঙ্গে। বনবাস শেষে রেপ্লিকার বদলে আসল সীতাকে ফিরিয়ে দেবেন অগ্নিদেব।

বাল্মীকির রামায়ণ না হলেও, বিভিন্ন আঞ্চলিক রামায়ণ বলে, সীতার পাতালপ্রবেশ আসলে অগ্নিদেবের সীতাবদলের খেলা। অগ্নিপরীক্ষার সময়ে মায়ায় তৈরি সেই নকল সীতা প্রবেশ করেন পৃথিবীতে। আর রামচন্দ্র ফিরে পান তাঁর প্রকৃত সীতাকে। যদিও বাল্মীকি রচিত মূল রামায়ণে এই আখ্যান সেভাবে নেই।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রাচীন পুরাণে ক্লোনিং নিয়ে স্বতঃসিদ্ধ প্রমাণ নেই ঠিকই। কিন্তু ‘মায়ার জাল’ বলে যে কল্পনা রয়েছে, তার সঙ্গে ক্ষীণ হলেও যোগসূত্র রয়েছে বিভিন্ন কল্পবিজ্ঞানের। তখন হয়তো ছিল কল্পবিজ্ঞান, কিন্তু এখন তা ঘোর বাস্তব।

11 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন