২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ঝালকাঠি এলজিইডি প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:৪৭ অপরাহ্ণ, ১০ এপ্রিল ২০২১

ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ, তবুও বহাল ঝালকাঠি এলজিইডি প্রকৌশলী

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল >> ঝালকাঠি এলজিইডি প্রকৌশলী রুহুল আমিনের কর্মক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির ফিরিস্তি এবার যাচ্ছে খোদ প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে। পছন্দসই ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়া এবং সংক্ষুব্ধদের কৌশলে শায়েস্ত করাসহ বহুমুখী অভিযোগে বিদ্ধ এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন সৈয়দ খায়রুল হাসান বাবু নামের এক ঠিকাদার। স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত যুব বয়সি এই ঠিকাদারও প্রকৌশলীর দ্বারা প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছেন। বাবুর প্রাপ্ত কাজ প্রকৌশলী পছন্দের একজনকে পাইয়ে দিতে একের পর এক নাটকীয়তার জন্ম দেন এবং এতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় ঠিকাদারকে শেষ পর্যন্ত আইনি জটিলতায় ফেলার ব্যর্থ চেষ্টাও করেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা কেন্দ্রীয় এক আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপের কারণে তার সেই মিশন বাস্তবায়ন না হলেও শেষত্বক কৌশলী পদক্ষেপ রেখে সাড়ে ৪ কোটি টাকা মূল্যের সড়ক সংস্কার কাজটি নিয়ে জল ঘোলা কম করেননি। কাজটি পছন্দের ঠিকাদার ‘সিফাত এন্টারপ্রাইজ’র মালিক নবীনকে যিনি কী না সেকেন্ড লোয়েস্ট ছিলেন তাকে দিতে সক্ষম হন। এনিয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হলে প্রকৌশলীর এই অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্যাদী খুঁজতে শুরু করে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। যদিও পরবর্তীতে এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা যায়নি। অভিযোগকারী বাবু ঝালকাঠি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ১ নং গাভারামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত সৈয়দ জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, প্রকৌশলী রুহুল আমিনের পূর্বের কর্মস্থল কুড়িগ্রামেও এই ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০১৭ সালের শেষ দিকে এনিয়ে পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হলে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি করে। এর পরেই তাকে ঝালকাঠিতে বদলি করা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

ঝালকাঠির একটি সূত্র জানায়, প্রকৌশলী রুহুল আমিন এই জেলায় যোগদানের কয়েক মাস পরেই নানান অনিয়ম-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ২০২০ সালের শেষের দিকে ফেরদৌস মোরশেদ রয়েল নামের এক ব্যক্তি নিজ এলাকার সড়ক সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন এবং এতে প্রকৌশলীর যোগশাজশ দাবি করে জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন। জানা যায়, এতে প্রকৌশলী ক্ষুব্ধ হলে বিপরিতে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করে সেই সংস্কার কাজের ঠিকদার। এতসব অভিযোগের পরেও প্রকৌশলী রুহুল আমিনের অনিয়ম-দুর্নীতি চলছেই।

সৈয়দ খায়রুল হাসান নামের ঠিকাদার জানান, স্থানীয় ভীরমহল টু হিমানন্দকাঠি পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও ৮টি কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের দরপত্র ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি আহ্বান করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকার মূল্যের কাজটি পছন্দের এক ঠিকাদারকে পাইয়ে দিতে তিনি নানান কৌশল অবলম্বন করেন। কাজটি পেতে ‘এমএস মাহাবুব ট্রেডার্স’র বাবুসহ তিন ঠিকাদার সিডিউল জমা দেন। এমএস এমএম এন্টারপ্রাইজ এবং এমএম মহিউদ্দিন আহম্মেদ নামের দুটি প্রতিষ্ঠান সেখানে অংশগ্রহণ করলেও ত্রুটির কারণে তাদের বাদ দেওয়া হয়। ফলে সর্বোচ্চ দরদাতা মাহাবুবু ট্রেডার্স পাওয়ার কথা থাকলে তা নিয়ে সরকারের রাজস্ব কম দেখিয়ে পুনরায় দরপত্র আহবান করেন প্রকৌশলী। কিন্তু সেখানে হয়েছে আরেক অনিয়ম।

দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহবানেও ‘এমএস মাহাবুব ট্রেডার্স’সহ ৫টি ঠিকদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। কিন্তু এতে ‘মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘মহিউদ্দিন আহম্মেদ’ সর্বোচ্চ দরদাতা হলেও ত্রুটির কারণে বাদ পড়ে যায়। ফলে এবারও প্রথম সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে কাজটি ‘মাহাবুব ট্রেডার্স’ পাওয়ার আইনত বৈধতা থাকলেও তাকে নানান অজুহাতে প্রকৌশলী অপেক্ষা করতে বলেন। এবং কয়েক মাস পরে কাজটি আরও ১৪ লাখ টাকা কমে পছন্দসই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ‘সিফাত এন্টারপ্রাইজ’কে অনেকটা গোপনে দিয়ে দেন। কাজ পাওয়ার পরে তা বঞ্চিত হয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সৈয়দ মাহাবুব ট্রেডার্স’র প্রতিনিধি সৈয়দ খায়রুল হাসান বাবুর সাথে তিক্ততায় একপর্যায়ে তাকে শায়েস্তা করতে কৌশলী পথে হাটেন প্রকৌশলী রুহুল আমিন।

বাবুর অভিযোগ, কাজটি তাকে দেব, দিচ্ছি করে ৫ মাস পার করে দেওয়ার পরে ‘সিফাত এন্টারপ্রাইজ’কে দেওয়া হয়। এবং তাকে কোনো মতে টলাতে না পেরে সর্বশেষ প্রকৌশলী রুহুল আমিন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে ব্যবহার করে থানায় একটি চাঁদাবাজির অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করাসহ নানান ভাবে হয়রানি শুরু করেন। যদিও এই অভিযোগটি পুলিশের তদন্তে মিথ্যে প্রমানিত হয়। প্রকৌশলীর সেচ্ছাচারিতার কারণে বাবুর ১৪ লাখ টাকা প্রে-অর্ডারে আটকে আছে। বিপরিতে তিনি এই টাকার সুদ গুনছেন।

বাবু জানান, প্রকৌশলীর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের ফিরিস্তি তাঁর রাজনৈতিক অভিভাবক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আমুর হোসেন আমুকে অবহিত করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। এবং পুলিশকে তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং একই মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বেশ কয়েকজনকে অভিযোগ আকারে অবহিত করেন।

এতে কোনো প্রতিকার না পেয়ে প্রকৌশলীর অতীত কর্মস্থলের বিতর্কিত কর্মকান্ড তুলে ধরে এবার পুরো ফিরিস্তি প্রধানমন্ত্রী জানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন ঠিকাদার সৈয়দ খায়রুল হাসান।

এসব বিষয়ে জানতে প্রকৌশলী রুহুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। এবং অতীত কর্মস্থলে কোনো দুর্নীতি নেই বলে দাবি করাসহ বিগত সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ভিত্তিহীন উল্লেখ করেন।

এই কর্মকর্তার সাথে কথা শেষ করার কয়েক মিনিটের মাথায় রাজধানী থেকে এক ব্যক্তি ফোন করে এ প্রতিবেদকের কাছে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন এবং সংবাদটি প্রকাশ বন্ধ রাখতে বিনীত অনুরোধ রাখেন। ফলে বোঝার অপেক্ষা রাখে না যে ঝালকাঠি এলজিইডিতে কী হচ্ছে।

এদিকে সৈয়দ মাহাবুব এন্টারপ্রাইজের সৈয়দ খায়রুল হাসান জানান, প্রে-অর্ডার আটকে থাকার কারণে তিনি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, হচ্ছেন। এতে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা দাবি করে আইনের আশ্রয় নেবেন।’

কর্মস্থলে অনিয়ম-দুর্নীতি করে প্রকৌশলী রুহুল আমিনের রাতারাতি কোটিপতি ও গাড়ি-বাড়ির মালিক বনে যাওয়া নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন আসছে পরবর্তী পর্বে।’

9 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন