১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

ভাণ্ডারিয়ায় ১০ টাকা সঞ্চয়ে সূর্যমুখী তেল উৎপাদন

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৬:৪৮ অপরাহ্ণ, ৩১ মে ২০২৩

ভাণ্ডারিয়ায় ১০ টাকা সঞ্চয়ে সূর্যমুখী তেল উৎপাদন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: গ্রামের নিম্ন আয়ের লোকদের নিয়ে ভেজালমুক্ত সূর্যমুখী চাষ করে তা থেকে তেল উৎপাদন করে সফল হয়েছেন ‘আমাদের পথচলা’ নামক একটি পল্লী সংগঠন।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে দেশ বিদেশে বিষমুক্ত খাঁটি তৈল সরবারহ দিতে পারবে বলে সংগঠনের উদ্যোক্তারা জানান। সরেজমিন জানা গেছে, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর শিয়ালকাঠী প্রত্যান্ত গ্রামের শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত।

মহামারি করোনার সময়সহ বিভিন্ন সময় গ্রামের কৃষকদের ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দেহে নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দিচ্ছে। ঠিক তখনই এলাকার ভাণ্ডারিয়া ফ্রেন্স মেডিকেল হলের পরিচালক শিক্ষিত যুবক রফিকুল ইসলাম মিলন সিকদার চিন্তায় পড়ে যায়।

তিনি চিন্তা ও গবেষণা করে দেখেন ভেজাল তেল সেবনের জন্যই এই নানান রোগ দেখা দিচ্ছে। তাই তিনি ২০২১ সালে এলাকার কৃষকদের নিয়ে গঠন করে ‘আমাদের পথচলা’ নামক সংগঠন।

উদ্যোগ নেন কৃষকদের থেকে দৈনিক ১০ টাকা সঞ্চয় নিয়ে খাঁটি তেল সরবারহের। শুরু করেন সূর্যমুখী ও শরিষার চাষ। সেই ফসলের বীজ দিয়ে নিজস্ব মেশিনে খাঁটি তৈল উৎপাদন করে সমিতির সদস্যদের মধ্যে বিক্রি করেন তিনি। বর্তমানে এ সংগঠনের দেড়শত সদস্যদের সঞ্চয় দাড়িয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা।

তিনি আরো জানান, প্রথম দিনই ৮০ জন কৃষক সদস্য হন। পরে তারা দৈনিক ১০ টাকা সঞ্চয় শুরু করেন। সঞ্চয়ের টাকায় ২০২২ সালের শুরুর দিকে প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি বীজ ভাঙ্গার মেশিন কিনে আনেন।

তেল দিয়ে গ্রামের সবাই এখন নিত্য প্রয়োজনীয় রান্নার কাজে ব্যবহার করছে। সূর্যমুখী ও সরিষার উচ্ছিষ্ট অংশ দিয়ে গো খাদ্য খৈল তৈরি এবং কৃষি পণ্যতে ব্যবহার করেন এলাকার চাষিরা।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে জনা যায়, প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ৬০ কোটি মানুষ ভেজাল দূষিত খাদ্য গ্রহণে অসুস্থ হয়। এই অসুস্থ মানুষদের মাঝে ভেজাল খাদ্যের কারণে মারা যায় প্রায় ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ।

এ ছাড়া দূষিত খাদ্য গ্রহণের কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সি ৪৩ শতাংশ শিশু আক্রান্ত হয়। যাদের মধ্যে মারা যায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিশু। বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও অন্দোলনের (পবা) এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের কারণে প্রতিবছর দেশে ৩ লাখ লোক ক্যানসারে, ২ লাখ লোক কিডনি রোগে, দেড় লাখ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়েরা জন্মদান করেন প্রায় ১৫ লাখ বিকলাঙ্গ শিশু।

উত্তর শিয়ালকাঠী গ্রামের কৃষক নাসির হাওলাদার বলেন, রফিকুল ইসলাম মিলনের চিন্তা ছিল কীভাবে গ্রামের কৃষকদের অবস্থার উন্নতি করা যায়। ২০২১ সালের শুরুতে মিজান মার্কেট নামক স্থানে তিনিসহ গ্রামের কয়েকজন কৃষকদের নিয়ে এক সভায় মিলিত হন। সভায় জরুরি ভিত্তিতে গ্রামের কৃষকদের ডাকা হয়।

সকলের সমর্থনে সেদিন গঠন করা হয়েছিলো আমাদের পথচলা সংগঠনটি। সুস্বাস্থ্য ও আলোর পথ দেখাচ্ছে ‘আমাদের পথচলা’ নামক এই সংগঠন। কৃষক শহিদুল শিকদার বলেন, ‘মিলন সিকদারের হাত ধরে এলাকার কৃষকদের স্বাস্থ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। ভেজাল মুক্ত তৈল উপহার দিয়ে কৃষকদের মাঝে অন্যরকম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

আমাদের পথচলার সফলতা দেখে গ্রামের তরুণ ও যুবকরা কৃষি কাজে নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছেন। সংগঠনের পরামর্শ পেয়ে অনেক কৃষক ঘুরে দাড়িয়েছে। ‘আমাদের পথচলা’ সংগঠনের উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম মিলন সিকদার বলেন, আমার পেশা ওষুধের ব্যবসা। আমি ছোটবেলা থেকেই কৃষি নিয়ে কাজ করি।

কৃষকদের পাশে থাকতে এবং তাদের সঙ্গে কাজ করতে সংগঠনটি গঠন করেছি। আমাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যগুলো বিষমুক্ত। এই সংগঠনের মাধ্যমে সকল মানুষকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে চাই। সরকারি সহযোগিতা পেলে আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে দেশ বিদেশে ভেজাল মুক্ত তেল উপহার দিতে পারবো ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় সূর্যমুখী চাষাবাদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। অন্য ফসলের তুলনায় এটা খুব লাভজনক। আমাদের পথচলা সংগঠনের মাধ্যমে কৃষকেরা ১০ টাকা সঞ্চয় করে ৬ একর জমিতে সূর্যমূখীর চাষ করেছে খাঁটি তেল উৎপাদন করছে। এটা একটি ভালো উদ্যোগ। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন