১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

শিরোনাম

ভালোবাসা দিবসের জনককে গলাকেটে হত্যা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:১৮ অপরাহ্ণ, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন :: প্রায় ১৭৫০ বছর আগে হয় প্রাণদণ্ড, সন্ত ভ্যালেন্টাইনের মাথার খুলি ও দেহাবশেষ এখনও সযত্নে সংরক্ষিত। কে ছিলেন সন্ত ভ্যালেন্টাইন? তার পরিচয় নিয়ে আছে বিস্তর দ্বন্দ্ব এবং একাধিক মত। ইতিহাসে একাধিক সময়ে বিভিন্ন প্রসঙ্গে এসেছে তার কথা। তার পরিচয় খোঁজার আগে দেখে নেয়া যাক ‘ভ্যালেন্টাইন’ শব্দের উৎস।

লাতিন শব্দ ‘ভ্যালেন্টাইনাস’-এর অর্থ সুযোগ্য বা শক্তিশালী। রোমান ক্যাথলিকদের নথি অনুযায়ী, দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শতক অবধি খ্রিস্টধর্মের অন্তত এক ডজন সন্তের নামের পাশে যুক্ত হয়েছে ‘ভ্যালেন্টাইন’ উপাধি। তাদের অনেকেই রাজরোষে প্রাণ দিয়েছিলেন। তাই ঠিক কার জন্য ভ্যালেন্টাইন ডে পালিত হয়, তা নিয়ে অনেক জটিলতা দেখা দেয়। ৮২৭ খ্রিস্টাব্দে এই উপাধি এসেছে একজন পোপের নামের পাশেও। তবে তার সম্বন্ধে বেশি তথ্য পাওয়া যায় না।

যাকে কেন্দ্র করে আজকের ভ্যালেন্টাইনস ডে উদ্‌যাপন হয়, তিনি ২৭০ খ্রিস্টাব্দে মারা যান। ত্রয়োদশ শতকের একটি নথি অনুযায়ী, সন্ত ভ্যালেন্টাইনকে রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লদিয়াস প্রাণদণ্ড দিয়েছিলেন। কারণ তিনি খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী জুটিদের বিয়ে করে ঘর বাঁধতে সাহায্য করছিলেন।

সম্রাট দ্বিতীয় ক্লদিয়াস বিশ্বাস করতেন, অবিবাহিত তরুণদের দিয়ে শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী গড়া যায়। ফলে তিনি তার সাম্রাজ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ করে দেন।

সম্রাটের এই নির্দেশ ভালোভাবে নেননি সন্ত ভ্যালেন্টাইন। তিনি গোপনে বিয়ে দিতে থাকেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের। তার এই বিরুদ্ধাচরণে ক্ষিপ্ত ক্লদিয়াস প্রাণদণ্ডের নির্দেশ দেন। সম্রাটের নির্দেশে মস্তকছেদ করে সন্ত ভ্যালেন্টাইনকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়।

আবার আরও একটি নথি বলছে, মধ্যযুগে ইতালির তার্নি শহরের বিশপকেও প্রাণদণ্ড দিয়েছিলেন দ্বিতীয় ক্লদিয়াস। দুটি ঘটনার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকায় অনেকে মনে করেন, এই বিশপ আর রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লদিয়াসের বিরুদ্ধে গিয়ে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী তরুণ তরুণীদের বিয়ে দেওয়া সন্ত ভ্যালেন্টাইন একই ব্যক্তি।

তৃতীয় শতকের ১৪ ফেব্রুয়ারি বা তার কাছাকাছি কোন এক দিনে রোমের শহরতলিতে হত্যা করা হয়েছিল সন্ত ভ্যালেন্টাইনকে। প্রেমের দূত এই সন্তের মাথার খুলি এখনও সংরক্ষিত এবং ফুল দিয়ে সুসজ্জিত রোমের কোসমেদিয়ানের ব্যাসিলিকা অফ সান্তা মারিয়া।

উনিশ শতকের গোড়ায় এই অঞ্চলে খননে একটি নরকঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল। কঙ্কালের সঙ্গে উদ্ধার হওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিস পরীক্ষা করে অনেক গবেষকের মত, এটি সন্ত ভ্যালেন্টাইনের দেহাবশেষ। তারপর সেটিকে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

উদ্ধার হওয়া কঙ্কালের খুলি সান্তা মারিয়ার ব্যাসিলিকায় সজ্জিত থাকলেও অন্য অংশগুলি আছে চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের বিভিন্ন গির্জায়।

প্রথমে ভ্যালেন্টাইন ডে ছিল আত্মাহুতির দিবস। পরে মধ্যযুগে এর সঙ্গে প্রেমের মেলবন্ধন করান জিওফ্রে চসার। তার রচনাতেই প্রথম এই দিনের সঙ্গে যুক্ত হয় প্রেমের অনুসঙ্গ। ক্রমে সেই ধারণা জনপ্রিয় হয়। এখন তো ভ্যালেন্টাইনস ডে আর প্রেম অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

এখনও অবধি সন্ত ভ্যালেন্তাইন পরিচয়ে একজনই সাধিকার সন্ধান পাওয়া যায়। কোথাও আবার তার নাম সন্ত ভ্যালেন্টিনা। ৩০৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে তাকে প্রাণদণ্ড দেয়া হয় প্যালেস্তাইনে। তাই ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চ বছরে দু’বার, ৬ জুলাই এবং ৩০ জুলাই ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করে।

খ্রিস্টধর্মের প্রসারের আগে পৌত্তলিক যুগেও শীতের শেষে বসন্তের শুরুতে একটি পার্বণ উদ্‌যাপনের রীতি ছিল। প্রাচীন রোমান সভ্যতায় মধ্য ফেব্রুয়ারি ছিল উর্বরতার ঈশ্বর ফনাস-এর দিন। সেই পার্বণে গ্রামের অবিবাহিত যুবকরা একটি বাক্স থেকে চিরকুট তুলত। তাতে লেখা থাকত কুমারী মেয়েদের নাম। যে যুবক যে তরুণীর নাম তুলবেন, তারা সে দিন থেকে প্রেমের জুটি বলে বিবেচিত হবেন। মাঝে মাঝে এ সম্পর্ক পৌঁছত বিয়ে অবধিও।

খ্রিস্ট ধর্মের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পরে পঞ্চম শতাব্দীতেও এই রীতি প্রচলিত ছিল। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে এই লোকাচার বিলুপ্ত হয়ে যায়। ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের মতে, প্রাচীন সভ্যতার উর্বরতার উৎসবও বিলীন হয়ে যায়।

ভালোবাসা ও প্রেমের প্রতীক লাল গোলাপ। এখানেও বহমান প্রাচীন সভ্যতার রীতি। রোমান সভ্যতার প্রেমের দেবী ভেনাস। কথিত, তার এবং যুদ্ধের দেবতা মার্সের ছেলে হলেন কিউপিড। ভেনাসের প্রিয় ফুল লাল গোলাপ। দেবীর প্রিয় ফুল ও ছেলে দুজনেই প্রেমপার্বণ উদযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন