২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

ভালোবাসা দিবস বালজাক -হানস্কা প্রেম এবং প্রেমিকের আত্মসম্মান!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:৫৪ অপরাহ্ণ, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

১৮৩৩ খৃষ্টাব্দ। পোল্যান্ডের পরমা সুন্দরী ধনীকন্যা উপযাচক হয়ে প্রেম নিবেদন করেন ভবঘুরে এক তরুণের
প্রতি। অনেকটা দারিদ্রতার যাঁতাকলে পিষ্ট। সাড়া মিললো তরুণীর পক্ষে। অনিন্দ্য সুন্দরের পূজারি থেকে
প্রেমিকবনে গেলেন উদভ্রান্ত তরুণটি। দেখাদেখি, চোখাচোখি গড়ালো প্রেমকাব্যে। মানে দুজনের মধ্যে শুরু হলো
পত্র চালাচালি। গড়িয়ে গেলো এভাবেই দুটি বছর। বর্ণাঢ্য পরিবারের কন্যা তরুণীটি নিঃসঙ্কোচে প্রস্তাব দিয়ে
প্রেমিক তরুণটির দিকে হাত প্রসারিত করলো। কিন্তু নির্বিকার নিস্তব্ধ, থমকে দাঁড়ালো প্রেমিকমন। কেননা নিজে
ছন্নছাড়া। আর তরুণী ধনী কন্যা। মাথা হেট করে বউয়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠা! না তরুণের পক্ষে তা কি করে
সম্ভব? পত্রের মাধ্যমে প্রেমিকাকে অপেক্ষা করতে বললেন। প্রিয়তমার মাথায় বাজ পরলো। ছন্দ হারা হলো
দুজনের পথচলায়। বন্ধ হলো দেখাদেখি, চোখাচোখি এমনকি পত্রচালাচালিও। তাই বলে কি সবাই শেষ? মায়াপ্রপঞ্চ
প্রাণ কী করে রং বদলায়? কিন্তু দুজনের মধ্যকার বিরতিটা বিরক্তির হয়ে উঠলো। পরিণত হলো কষ্টে। আবার
শুরু হলো পত্র চালাচালি। দূর ভীত হলো বিব্রত অনুভূতি। পত্রলিপিতে আত্মসম্মান বজায় রেখে ভালোবাসা ব্যক্ত
হতে বাকলো মনের অকৃত্রিম অর্ঘ দিয়ে। প্রেমিক দূর হতেই প্রিয়তমাকে সম্মান করতেন দেবীর মতো। প্রেমিক
বন্ধুদের সাক্ষী রেখে প্রিয়তমাকে প্রতিশ্রুতি দিলেন, "যেদিন অর্থকড়ি উপার্জন করে তোমার সমপর্যায়ে পৌঁছাতে
পারবো, সেদিনই আমাদের বিয়ে হবে, তোমার বাড়িতে জামাই সেজে পরগাছা হয়ে আত্মসম্মানবোধ হারাতে
পারবো না।" তরুণ প্রেমিকটির লেখালেখি করে অর্থকড়ি উপার্জন হলো তাঁর প্রথম এবং শেষ অবলম্বন, যা
অবশ্যই চ্যালেঞ্জের। নিশিরাত কখন সকাল হয়ে বিকালে গড়িয়ে পড়েছে তা তাঁর লেখনীর ঝোঁক আঁচ করার
সুযোগ পেতো না। এভাবেই মাত্রা অতিক্রম করে বছরের পর বছর। প্রিয়তমাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি তার পরিবারের
সমকক্ষ হওয়ার প্রতিশ্রুতি। তরুণীটির বাবা -মা বারবার সুযোগ্য সম্পদশালী পাত্র ঠিক করে ফেলে। কিন্তু কন্যা
সুদৃঢ় অবস্থানের কারণে বাবা মার সে প্রয়াস ব্যর্থ হয়ে যায়। দিকভ্রান্ত ও প্রচন্ড অহংবাদী এক তরুণের হাতে
তাঁদের একমাত্র সন্তান আদুরে কন্যাকে বাবা – মা ইবা কি করে তুলে দেন? পরিবারের অবাধ্য হয়ে তরুণীটি মনের
সাগরে তরী ভাসিয়ে অপেক্ষার পাল তুলে দিলেন দেবতুল্য প্রেমিকের পানে। অপেক্ষায় যুদ্ধে এভাবেই পার হয়ে যায়
একুশ বছর। অবশেষে অন্ধকার আলোয় উদ্ভাসিত হতে থাকলো। এরই মধ্যে ৮৫টি উপন্যাস রচনা করে সাহিত্য
কর্মে লেখক নিজের অবস্থান ও সুবিশাল অস্তিত্ব ঘোষণা করলেন। অর্থাগমনের মাত্রা তুঙ্গে পৌঁছে গেলো। গ্রন্থ
লিখেই ধনী হয়ে ওঠা যায়, তা প্রমাণ করে দিলেন ইতিমধ্যে চুলে পাকন ধরা তরুণ থেকে পরিণত বয়সে পৌঁছা
সেই তরুণটি। এবার প্রিয়তমা দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের পালা। প্রিয়তমাকে পত্রযোগে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হলো।

আলাপ করে সকল বন্ধুকে নিয়ে বিয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণ করলেন। প্রেমিকার সমমর্যাদায় পৌঁছার সেই জয়
প্রেমিকের বয়সটা কেও লুকিয়ে রেখেছিলো। আমরা বন্ধুরা ঘটা করে বিয়ের উৎসব করবো -এমন প্রত্যয় পেলো
বিখ্যাত হয়ে ওঠা প্রেমিক। পোল্যান্ড ছাপিয়ে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়লো তাঁর নামডাক। তাঁর বিক্রিত গ্রন্থ থেকে
রয়্যালটি আসছিলো বন্যার স্রোতের মতো। প্রেমিকের গৌরবে প্রেমিকা সয়ং গরবিনী। যদিও তাঁর পাকন ধরেছে
চুলে। দুজনের কন্ঠও ভারক্য হয়ে গেছে। তাতে কি দুজনের স্বপ্ন আর প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান রেখে মিলন তো
হচ্ছে। আর এই পর্বেই জুটলো প্রেমিকের জীবনের সবচেয়ে বড় মর্মান্তিক ঘটনা। যা শেষ পরিণতি। রাজকন্যার
সঙ্গে বাজি ধরে যেন সমুদ্রতল থেকে মাণিক্য তুলে আনলেন বটে, কিন্তু নিজে আর বাঁচলেন না। বীরের জয় ও
পরাজয় এখানেই। প্রেমিকার জন্য নিজের মর্যাদা রক্ষার জন্য অর্থযুদ্ধে নেমে জয় পেলেন, কিন্তু জয় হলো না
জীবনযুদ্ধে। হার মানতে হলো তাঁকে। বিয়ে হচ্ছিল মহা ধুমধামে। কিন্তু বউ নিয়ে ঘরে ফিরতে পারলেন না।
ফিরলো তাঁর লাশ। সম্মান প্রতিপত্তি পরে থাকলো নির্জীব হয়ে। খ্যাতি, অর্থ আর সুন্দরী প্রিয়তমা বউকে একাকী
রেখে চলে যান না ফেরার দেশে। সেই প্রেমিক আর কেউ নন, তিনি অনরে দ্য বালজাক। পোল্যান্ড বা ফরাসী
ঔপন্যাসিক বালজাক বিশ্বসাহিত্যের বিস্ময়কর এক প্রতিভা। বালজাক সম্পর্কে বিশ্ববরেণ্য মনীষী ভিক্টর উগো
বলেছিলেন, " বালজাক হলেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক প্রতিভানদের মধ্যে অন্যতম। প্রিয়তমা বউ
হানাস্কা তাঁর মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা একটি প্রশ্নেরই প্রকাশ করেছিলেন, "অর্থ উপার্জনে অমানবিক পরিশ্রমে
আমার প্রিয়তম বালজাকের শরীর প্রতিশোধ নিয়েছে, তবু প্রেম, তবুও ভালোবাসা বেঁচে থাক অনন্তকাল। শুভ
ভালোবাসা দিবস। অফুরূণ শুভেচ্ছা ভালোবাসা দিবসে – ভালোবাসাবাদীদের প্রাণে প্রাণে, আর অশেষ শ্রদ্ধা –
মহাপ্রয়াণে যাওয়া প্রেমবাদীদের আত্মার প্রতি।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন