২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

ভোলায় প্রকাশ্যে উজাড় ঢালচরের বন: ট্রলার বোঝাই গাছ যাচ্ছে ইটভাটাতে

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২:২৫ অপরাহ্ণ, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ভোলায় প্রকাশ্যে উজাড় ঢালচরের বন: ট্রলার বোঝাই গাছ যাচ্ছে ইটভাটাতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: সরকার চরাঞ্চলের বনায়ন রক্ষায় জোরালো ভূমিকা রাখলেও প্রতিদিনই সংরক্ষিত বনের গাছ কেটে উজাড় করছে অসাধু চক্র। প্রকাশ্যে এমন বন উজাড়ের দৃশ্য চোখে পড়ছে ভোলার চরফ্যাশনের ঢালচরেও। প্রতিদিন বড় বড় ট্রলার বোঝাই কাঠ যাচ্ছে নিকটবর্তী বিভিন্ন ইটভাঁটাতে।

এদিকে প্রকাশ্যে সংরক্ষিত বন উজাড়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ মিলেছে স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তবে, বন বিভাগ কর্মকর্তাদের দাবি, স্থানীয় প্রশাসন এবং ইউপি চেয়ারম্যান জড়িত এই কাঠ চুরির সঙ্গে।

দ্বীপ জেলা ভোলার সর্ব দক্ষিণে চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনায় অবস্থিত ঢালচর ইউনিয়নটি। মেঘনার মাঝে জেগে ওঠা চর আর বন দেখে মন জুড়িয়ে যায় আগত পর্যটকদের।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত পর্যটক আসেন এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মনের খোরাক মেটাতে। এসব বনে রয়েছে হরিণ, শিয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির বিপন্ন পাখিসহ নানা ধরনের পশু-পাখির অভয়াশ্রম।

ঘন বনায়ন থাকায় ঝড় আর জলোচ্ছ্বাস থেকেও রক্ষা পাচ্ছে চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। চরের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই বনায়নই উজাড় করে ফেলছে স্থানীয় প্রভাবশালী এক চক্র, যেখানে সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

ঢালচর রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস, স্থানীয় অসাধু নিরব চৌকিদার, কাওসার ফরাজী, শরীফ সওদাগর, এলাহী, সবুজ, জসিম এবং রহিমসহ বেশ কয়েকজন অসাধু ব্যক্তি বনাঞ্চলের এই ধ্বংসসাধনে লিপ্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, গত ৫-৬ মাস ধরে প্রতিদিন ১২ থেকে ২০ জন মিলে এই বনের গাছ কাটার কাজ করছে। যার সচিত্র প্রমাণ মিলেছে ঢালচর বন বিভাগের অফিস সংলগ্ন বিশাল বনে ঢুকেই।

স্পিডবোটের শব্দ আর বনদস্যুদের সোর্সদের মাধ্যমে খবর পেয়ে দ্রুত বনের গভীরে ঢুকে যায় কাঠ পাচারকারীরা। তবে যাওয়ার সময় তারা গাছ কাটার করাত, জামা, জুতা আর খাবার পানি ফেলে যায়।

বনের ভেতর ঢুকতেই নজরে আসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কেটে ফেলে রাখা গাছের টুকরোগুলো। পুরো বনজুড়েই কেটে ফেলে রাখা হয়েছে গাছ আর গাছের গুড়ি। যা দেখার পরে যে কেউ বুঝতে পারবে কীভাবে গাছ কেটে উজাড় করা হচ্ছে বন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বনের গাছ কাটায় অংশ নেওয়া দুজন শ্রমিক জানান, ‘বনদস্যুদের সঙ্গে স্থানীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস জড়িত আছেন। বন বিভাগ জড়িত বলেই নিরাপদে গাছ কাটতে পারছে দস্যুরা।

বনের গাছ কাটার পর ট্রলারে বোঝাই করে চরফ্যাশনের বিভিন্ন ইটভাঁটায় যাচ্ছে বলেও জানান তারা। এ বিষয়ে ঢালচর রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাসের কাছে ফোন করে জানতে চাইলে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বিভিন্নভাবে অনুনয়-বিনয় করেন এই প্রতিবেদকের কাছে। এ ছাড়া সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য একাধিক ব্যক্তি নানাভাবে অনুরোধ এবং হুমকি প্রদান করেন।

অপরদিকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম কায়সার বলেন, যারা বন কাটছে, তারা কাদের লোক? এরা চেয়ারম্যান সালামের লোক, স্থানীয় প্রশাসনের লোক।

এরপর বন কাটার সঙ্গে তার রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস জড়িত আছেন এমন অভিযোগের কথা বলতেই তিনি রেগে গিয়ে তিনি বলেন, বন কাটা হচ্ছে আমি জানি, সব জানি। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি। কোনো লাভ হচ্ছে না।

এদিকে ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার বন কাটার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, প্রশাসন তদন্ত করলে আমি তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করব।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন