২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ভোলায় চাঁদা না পেয়ে পৌরসভা কর্মচারীকে পেটালেন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ, ১৯ নভেম্বর ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ভোলা:: ভোলার লালমোহনে দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় পৌরসভার স্বাস্থ্য সহকারী মো. ইসমাইল হোসেন শাহজাদাকে মারধর করেছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক তানজীম হাওলাদার। বুধবার (১৮ নভেম্বর) সকালে লালমোহন পৌরসভার ওয়েস্টার্নপাড়া ব্রীজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা গুরুতর আহত শাহজাদাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে লালমোহন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন। এ ঘটনায় চাঁদাবাজির মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে শাহজাদার পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

আহত শাহজাদা বরিশালটাইমসকে জানান, লালমোহন পৌরসভার স্বাস্থ্য সহকারী মোঃ ইসমাইল হোসেন শাহজাদা পৌর ৮নং ওয়ার্ডের বাবুল হাওলাদারের কাছ থেকে ৮ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। ২০১৮ সালে ওই জমির দলিল দিয়ে পিলার স্থাপন করে মোঃ বাবুল হাওলাদার ক্রেতা শাহজাদাকে জমি বুঝিয়ে দেন। এসময় লালমোহন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মো. তানজীম হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন। জমি বুঝে পেয়ে সেখানে বালু পালানোর উদ্যোগ নিলে স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক তানজীম হাওলাদার ক্রেতা শাহজাদার কাছে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। সেই দাবিকৃত চাঁদা না দিলে জমিতে প্রবেশ করতে দিবে না বলে হুমকি দেয় তানজীম। হুমকির ভয়ে একপর্যায়ে শাহজাদা দাবিকৃত ১ লক্ষ টাকা তানজীমকে দিতে বাধ্য হয়। পরে সেখানে ওই জমি বালু ফেলে ভরাট করা হয়। এর কিছুদিন পর তানজীম তার স্ত্রীকে ১টি আইফোন কিনে দেওয়ার জন্য শাহজাদাকে প্রস্তাব দেয়। আইফোন কিনে না দিলে ওই জমিতে যেতে দিবে না বলে আবারও ভয়ভীতি দেখায় তানজীম। শাহজাদা নিরুপায় হয়ে দাবিকৃত আইফোন (যার মূল্য ৬০ হাজার টাকা) কিনে তানজীমকে দেন।

কিন্তু কয়েকদিন পর তানজীম আরও ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন শাহজাদার কাছে। তানজীম প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় শাহজাদা ৫০ হাজার টাকা দিয়ে দেন। তানজীম হাওলাদারের একের পর এক চাঁদা দাবির কারণে শাহজাদা ওই জমি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। সে জন্য জমির বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন শাহজাদা। তানজমী হাওলাদার বিষয়টি জানতে পেরে শাহজাদার কাছে পুনরায় আরও ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। দাবিকৃত চাঁদা না দিলে এই জমি বিক্রি করতে দিবে না বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তানজীম।

এই চাঁদা দাবির বিষয়টি শাহজাদা উপজেলার নেতাকর্মীদেরকে জানালেও তানজীম প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতে সাহস পায়নি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় বিভিন্নভাবে শাহজাদাকে হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করে তানজীম। প্রভাবশালী নেতা তানজীমের হুমকির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শাহজাদা ও তার পরিবার।

গতকাল বুধবার (১৮ নভেম্বর-২০) সকালে লালমোহন পৌরসভার স্বাস্থ্য সহকারী মোঃ ইসমাইল হোসেন শাহজাদা অফিসের উদ্দেশে রওনা দেন। শাহজাদা লালমোহন ওয়েস্টার্নপাড়া ব্রীজের সামনে আসলে তানজীম হাওলাদার তার গতিরোধ করে। এসময় তানজীম হাওলাদার তার দাবিকৃত ২ লক্ষ টাকা কেনো দিচ্ছে না জিজ্ঞাসা করে শাহজাদাকে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন। শাহজাদা জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তানজীম চলে যায়। পরে স্থানীয়রা শাহজাদাকে উদ্ধার করে লালমোন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গুরুতর আহত শাহজাদাকে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে শাহজাদার পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

আহত শাহজাদা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি বাবুল হাওলাদারের কাছ থেকে ৮ শতাংশ জমি ক্রয় করেছি। দলিল দিয়ে জমি মাপজোক করে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় তানজীম হাওলাদারও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তারপর থেকেই তানজীম আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে একের পর এক চাঁদা দাবি করে আসছেন। আমি প্রথম প্রথম তার দাবিকৃত চাঁদাগুলো পরিশোধ করি। একপর্যায়ে তার অত্যাচারে ওষ্ঠাগত হয়ে আমি ওই জমি বিক্রির জন্য বাউন্ডারী ওয়াল করার উদ্যোগ নিলে তিনি আমার কাছে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে অফিসে যাওয়ার পথে আমাকে এলোপাথারী মারধর করে। আমি তার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। আমি যাতে ওই জমি সুষ্ঠুভাবে বিক্রিয় করতে পারি সে জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে লালমোহন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মোঃ তানজীম হাওলাদার বলেন, ওই জমি নিয়ে ওয়ারিশদের মধ্যে পারিবারিক ঝামেলা রয়েছে। ওই জমির সমাধান না হতেই শাহজাদা জমি বিক্রি করে দেয়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। তার কাছে থেকে কোন চাঁদা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকসুদুর রহমান মুরাদ বরিশালটাইমসকে বলেন, এ ঘটনায় আমার কাছে এখন পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন