১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ভোলায় নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারদের কয়েক কোটি টাকা নিয়েে উধাও

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:২৭ অপরাহ্ণ, ০৩ মার্চ ২০১৯

ভোলায় স্থানীয় সরকার শাখা (এলজিইডির) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন ঠিকাদারদের কয়েক কোটি টাকার কমিশন নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক ঠিকাদার। বিভিন্ন প্রজেক্টের বিল পাইয়ে দেওয়ার জন্য কমিশন নামে ‘ঘুষ বাণিজ্য’ করেছেন এ নির্বাহী প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন। গত বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে তিনি কর্মস্থল অনুপস্থিত আছেন বলে জানা যায়।

তার উচ্চ ও বিলাসী জীবন যাত্রায় পিষ্ট হয়েছেন কয়েক ডজন ঠিকাদার। বিমান ছাড়া চলাচল করতেন না এ ‘ঘুষখোর’ কর্মকর্তা। টাকা ছাড়া কথা বলাই যেন অনর্থক, বিএনপিপন্থী এ কর্মকর্তার কাছে। এযাবৎ ভোলাতে ৩ বছর কর্মজীবনে প্রায় ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অসদুপায় অবলম্বন করে। জানুয়ারি মাসে ভোলা প্রজেক্টের ২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ফান্ড এর বিপরীতে প্রতিটি বিলের ওপর ৫ শতাংশ কমিশনে প্রায় ২ কোটি টাকা নিয়েছেন তিনি এমন অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও অন্যান্য প্রজেক্টের জন্য নগদ ঘুষ নিয়েছেন এমন প্রমাণ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ভোলার চরফ্যাশনসহ কয়েকটি থানায় তার নিজস্ব বলয় তৈরি করে তাদের মাধ্যমে নিম্নমানের কাজ করে সরকারের উন্নয়ন কাজে পুকুর চুরি করেছেন তিনি। এককথায় ভোলায় রামরাজত্ব কায়েম করেছেন এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো, সাখাওয়াত হোসেন।

এ অবৈধ টাকায় ঢাকাতে রিয়েল স্টেট, রিসোর্ট-সহ চলছে তার কয়েক শত কোটি টাকার ব্যবসা। নিজের বেলায় ষোলআনাই পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কাজের বিলে তিনি সই করেন না। ভালো মানের কাজ করলেও নগদ টাকার পাশাপাশি দামি ফোনসহ বিভিন্ন উপঢৌকন আদায় করতেন ঠিকাদারদের কাছে থেকে। তবে রাতে বাসায় বসে ফাইলে সাইন করে তার পছন্দের বিএনপিপন্থীদের আলাদা সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার এ পুকুর চুরি দুর্নীতির সহয়তা করেছেন ভোলা এলজিইডির চুক্তিভিত্তিক প্রজেক্ট প্রকৌশলী হুমায়ুন, স্টোর কিপার জসিম ও রোলার ফোরম্যান আইনাল হোসেন।

একাধিক ঠিকাদার জানান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন ভোলায় তিন বছরে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার ‘ঘুষ বাণিজ্য’ করেছেন। সর্বনিম্ন ৩ শতাংশের নিচে তিনি ঘুষ নিতেন না। তিনি ভোলাতে এমন কোনো অপকর্ম নেই যে করেননি। টাকা ছাড়া কোনো ফাইল ছাড়তেন না। টাকা দিলেই সব ঠিক তার কাছে। সরকারি রোলার পেতেও তাকে দিতে হতো আলাদা টাকা। বা বাহিরের রোলার ব্যবহারের অনুমতির জন্য ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা প্রতিটি কাজের জন্য দিতে হতো তাকে।

সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানা যায়, ঘুষখোর এ কর্মকর্তা ব্যক্তিজীবনে ছিলেন ব্যাপক বেপরোয়া! রাতে তার এলজিইডির বাংলো যেন অবৈধ মদ-বিয়ারের পার্টিতে মেতে উঠত সব সময়। তার সাথে তার পরিবার ভোলাতে না থাকায় এলজিইডির বাংলোতে চলত নারীঘটিত অসামাজিক কার্যকালাপ। তিনিও দুপুর ১২টার আগে অফিসে আসতেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি কয়েক মাসেও ভোলা থেকে স্ত্রীর কাছে যেতেন না।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তিনি ঢাকাতে অবস্থান করছেন। তবে যেকোনো মূল্যে যত টাকাই খরচ হোক না কেন, ভোলা থেকে বদলি হতে চায় এ কর্মকর্তা। এ জন্য এলজিইডির প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলীর দ্বারস্থ হয়ে পড়ে আছেন বলে জানা যায়। এ ছাড়াও ভোলার ঠিকাদারদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে ঘুষখোর নির্বাহী প্রকৌশলী তার আগের কর্মস্থল থেকেও বিভিন্ন অপকর্মের কারণে হেলিকপ্টারযোগে পালিয়ে এসেছিলেন।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোবাইলফোনে জানতে চাইলে ভোলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, আমার বিরুদ্ধে রিউমার ছড়ানো হচ্ছে। তবে কবে ভোলাতে ফিরে আসবেন জানাননি তিনি।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন