২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

ভোলায় যৌতুকের জন্য স্ত্রীর মাথা ফাটিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখলেন স্বামী

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:২৭ অপরাহ্ণ, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯

বার্তা পরিবেশক, ভোলা:: যৌতুকের টাকা না পেয়ে এক গৃহবধূর মাথা ফাটিয়ে বিষয়টি গোপন রাখতে তাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে লিমা বেগম (২৪) নামের ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করেছে। তিনি বর্তমানে দৌলতখান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

লিমাকে উদ্ধারের পর থেকে স্বামী লিটন ও তার পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছেন।

গৃহবধূ লিমার স্বজনরা জানান, ২০১৫ সালের শেষ দিকে উপজেলার উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হারুনের ছেলে লিটনের সঙ্গে একই উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বশির মিঝির মেয়ে লিমা বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের তিন বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। পরিবারের সুখ ও স্বচ্ছলতার আশায় বিয়ের বছর খানেক পরই বিদেশ যাওয়ার সিন্ধান্ত নেন লিটন। সে সময় বাবার বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ধার করে স্বামীকে দুবাই যেতে সহযোগিতা করেন লিমা। কিন্তু দুবাই থেকে ফেরার পর লিটনের চেহারা পাল্টে যায়।

লিমাকে ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন লিটন। নিজের তিন বছরের মেয়ের দিকে তাকিয়ে সেই নির্যাতন সহ্য করে সংসার করতে থাকেন লিমা। অবশেষে নিরুপায় হয়ে মাস ছয়েক আগে ভোলা আদালতে মামলা করেন লিমা। সে সময় অভিযুক্ত লিটন আর নির্যাতন করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুচলেকা দিলে সংসার বাঁচাতে লিমাও স্বামীর ঘরে ফিরে আসেন। কিন্তু কিছুদিন পর আবার নির্যাতন শুরু করেন লিটন।

লিমা বিভিন্ন সময় তার বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতেন। সম্প্রতি লিটন ও তার পরিবারের লোকজন আবার ৭০ হাজার টাকা যৌতুক এনে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এতে লিমা অস্বীকৃতি জানালে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন মিলে গত ১ ডিসেম্বর তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান। এ সময় লাকড়ি দিয়ে আঘাত করে লিমার মাথা ফাটিয়ে ফেলেন লিটন। পরে স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে নিয়ে গিয়ে লিমার মাথায় আটটি সেলাই দিয়ে বাসায় আনা হয়। আর বিষয়টি লিমার পরিবার যাতে জানতে না পারে সে জন্য বাড়ির একটি কক্ষে তিন দিন ধরে তাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়।

পরে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে লিমার মা মেয়েকে দেখতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে সন্তানকে বাঁচাতে চট্রগ্রাম থেকে ছুটে আসেন লিমার দিনমুজুর বাবা। বিভিন্নভাবে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দৌলতখান থানায় লিখিত অভিযোগ দেন তারা। পরে পুলিশ লিমাকে উদ্ধার করে দৌলতখান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলার রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

দৌলতখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সালাম বলেন, ‘ওই গৃহবধূর শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। তবে তার স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে।’

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন