২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

মনপুরা নৌ রুটে ফেরি চালু সময়ের দাবি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৫৪ অপরাহ্ণ, ২৪ মে ২০২২

মনপুরা নৌ রুটে ফেরি চালু সময়ের দাবি

সীমান্ত হেলাল, মনপুরা:: সকাল ১০ টায় সী-ট্রাকে চড়ে রওয়ানা হলে বিকেল ৪ টায় জেলা শহরে পৌছা যায়। ততক্ষণে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, অফিস-আদালত, কোর্ট-কাচারি সব বন্ধ হওয়ার পথে। প্রয়োজনীয় কাজ সারতে জেলা শহরে থাকতে হয় আরো একরাত। সময় ও খরচ বেড়ে যায় দ্বিগুন। যেখানে মাত্র ৩০০ টাকায় রাজধানী ঢাকায় পৌছা যায় সেখানে জেলা শহরে যেতে খরচ হয়ে যায় ৫০০ টাকা। যেখানে রাজধানীতে যেতে ব্যবহার হয় একটিমাত্র যানবাহন সেখানে জেলা শহরে যেতে পাল্টাতে হচ্ছে অন্তত ৫ টি যানবাহন। তাছাড়া নদীপথ, স্থলপথ, সী-ট্রাক, রিক্সা, মটরসাইকেল, সিএনজি ও বাসের ঝক্কিঝামেলাতো আছেই।

এমন একটি জনপদের কথা বলছি; যে জনপদটি জেলা শহর থেকে সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত। চারদিকে উত্তাল মেঘনা নদী বেষ্টিত একটি দ্বীপ। হ্যাঁ। বলছি, ভোলা জেলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরার কথা।

৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত উপজেলাটিতে দেড় লক্ষ মানুষের বসবাস। ১৯৮৩ সালে উপজেলায় উন্নিত হওয়ার পর থেকে ভৌগলিক অবস্থানগত কারনে আধুনিক নানাবিধ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছে এই উপজেলার মানুষ।

একবিংশ শতাব্দিতে এসে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুতের আংশিক উন্নতি হলেও এই উপকূলের মানুষ রয়ে গেছে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আধুনিক চাহিদাগুলোর অন্যতম-যোগাযোগ ব্যবস্থা হলেও এই দ্বীপের মানুষের একমাত্র ভরসা নদী পথ। আর সেই নদী পথে স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন।

একটিমাত্র সরকারি সী-ট্রাকই ভরসা এই দ্বীপের সকল পেশার মানুষের। প্রতিদিন একবার এই সী-ট্রাকটি জেলার পার্শ¦বর্তি উপজেলা তজুমদ্দিনের সাথে যাতায়াত করছে। এতে মন চাইলেই মনপুরা থেকে আপনি জেলা শহর, রাজধানী বা অন্য কোন উপজেলায় যেতে পারবেন না। অপেক্ষা করতে হবে সকাল ১০ টায় পারাপার করা জলযানটির জন্য।

পুরনো জংধরা লক্কড়ঝক্কড় সী-ট্রাক দিয়ে নদী পাড়ি দিতে লেগে যায় তিন ঘন্টা। কখনো জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভর করে লেগে যায় ৪ ঘন্টা। ফের ৩ টায় তজুদ্দিন ঘাট থেকে ছেড়ে মনপুরায় এসে পৌছায় সন্ধ্যা ৬ টা অথবা ৭ টায়। এছাড়া স্বশরিরে পারাপারের ব্যবস্থা থাকলেও কোনপ্রকার যানবাহন নিয়ে যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে না। একই জলযানে যাত্রী ও মালামাল দুটোই বহন করতে হচ্ছে।

আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে যানবাহন পারাপারের জন্য মনপুরা থেকে ফেরি চালুর দাবি ছিলো দীর্ঘদিনের। ফেরি সংকট বা অজানা কারনে দ্বীপের মানুষের এই স্বপ্ন-স্বপ্নই রয়ে গেছে।

বরিশালের দপদপিয়া সেতু, পটুয়ালীর লেবুখালী সেতু, সর্বশেষ পদ্মাসেতু নির্মানের মাধ্যমে মনপুরায় ফেরি চালুর সেই স্বপ্ন ধীরে ধীরে আলোর মুখ দেখাচ্ছে। এইসব রুটে অব্যবহৃত ফেরিগুলো হতে পারে মনপুরার মানুষের স্বপ্নের বাহন।

এদিকে মনপুরার সাথে ফেরী যোগাযোগ না থাকায় বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে উপজেলাবাসিকে। সরকারি দপ্তর, অফিস-আদালত, চাকরিজীবি, ব্যবসায়ী ও জনসাধারন নানাবিধ ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। ফেরি যোগাযোগ বা যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের চিঠিপত্রসহ বিভিন্ন প্রয়োজনিয় ফাইল আদানপ্রদানে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

এছাড়াও জেলা শহর বা রাজধানী ঢাকার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকায় বিভিন্ন সমস্যা পোহাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। উপজেলায় দেশের নামিদামি কোম্পানিসহ সকল কোম্পানির পরিবেশক থাকাসত্বেও কোম্পানির নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে পন্য। কোম্পানির গাড়িগুলো সরাসরি মনপুরায় না আসায় পন্য পরিবেশনে অধিক খরচ হচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীরা নিরুপায় হয়ে বেশি দামে পন্য বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে প্রায়সময় ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে নেতিবাচক প্রভাবসহ বাকবিতন্ডায় জড়াতে দেখা যাচ্ছে।

এমতাবস্থায় মনপুরার মেঘনা নৌ রুটে ফেরি চালু করা এখন সময়ের দাবি। এই রুটে ফেরি চালু হলে খুলে যাবে আধুনিক যোগাযোগের দ্বার। উন্মোচিত হবে নতুন স্বপ্নের দিগন্ত। সৃষ্টি হবে জেলা শহর বা রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই অবহেলিত দ্বীপের মানুষের অভূতপূর্ব এক মেলবন্ধন। লাগব হবে পারাপারের বিরক্তিকর এই ঝক্কিঝামেলা। কম সময়ে, কম খরচে জেলা শহর বা ঢাকায় গিয়ে কাজ শেষ করে দিনাদিন শান্তির নীড়ে ফিরে আসতে পারবে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপের বাসিন্দারা।

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন