২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

মন্ত্রী শামীমের দুয়ারে নতুন অতিথি, কিন্তু…

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:০৬ পূর্বাহ্ণ, ২০ জুন ২০১৯

**বরিশাল আওয়ামী লীগের নিষ্ক্রিয় নেতারা আবার সক্রিয় হতে চায়
**পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশ্রয় দেয়ার সায় না দিয়ে কৌশল নিয়েছেন

শাকিব বিপ্লব:: বরিশাল আওয়ামী লীগের রাজনীতির রূপধারার পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে দলীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় অথবা কোনঠাসা আলোচিত ও সমালোচিত বেশ কয়েকজন ডাক সাইডের নেতা ফের মাঠে নামতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সেক্ষেত্রে মজবুত প্লাটফর্ম হিসেবে সদর আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের আনুকূল্য লাভের চেষ্টায় তার সান্নিধ্যে থাকতে চায়। মন্ত্রী বরিশালে অবস্থানকালে প্রায়শ রাতে এই ধারার নেতাদের করীমকুটির এলাকার বাসভবনে অথবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউজে তাদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। মন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের তাদের কেউ কেউ খোশগল্প করলেও আবার ব্যক্তি বিশেষকে পাত্তা দিতে চাচ্ছেন না। তবে তারা মন্ত্রীর সাথে রাজনীতি করার আগ্রহ ব্যক্ত করলেও তিনি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে কৌশলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

একাধিক সূত্রের দাবি, এক সময় প্রয়াত নেতা শওকত হোসেন হিরনের অনুসারি হিসেবে চিহ্নিত এসকল নেতাদের নিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এখনই রাজনীতিতে পথ চলতে নারাজ। আবার তাদের ফিরিয়ে দিতেও চাচ্ছেন না। কৌশলগত ভূমিকা রেখে তাদের সান্নিধ্য দিয়ে নিজের গন্ডির ভেতরেই রাখছেন কিন্তু কোনো সাংগঠনিক কর্মকান্ডে সঙ্গী হিসেবে রাখছেন না। বিশেষ করে এক সময় আলোচিত মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আবুয়াল হোসেন অরুণ ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আনিস, এ্যাড. আফজাল হোসেন, যুবলীগের মোয়াজ্জেম হোসেন চুন্নুসহ ছাত্রলীগ নেতা ও জসিম উদ্দিন আলোচিতদের মধ্যে অন্যতম।

নিয়মিত শুক্র ও শনিবার মন্ত্রী বরিশালে সফরে আসলে অরুন, আনিস ও জসিম এই তিন নেতাকে মন্ত্রী পিছু ছুটতে দেখা যায়। কখনো কখনো গভীর রাত অবধি অপেক্ষমান থাকার পর মন্ত্রীর সাথে তাদের খোলামেলা বৈঠকে অংশ নিতে দেখা গেছে। কেউ কেউ মন্ত্রীর সাথে রাতের সাক্ষাত শেষে দিনের বেলায় থাকছেন দূরত্বে।

আবার এমন বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন, যারা টেলিফোনে জাহিদ ফারুক শামীমের সাথে যোগাযোগ রেখে বরিশাল রাজনীতি সম্পর্কে কমবেশি ধারণা দেয়াসহ তারা প্রকাশ্যে রাজনীতিতে ফিরে আসতে অভিপ্রায় ব্যক্ত করে চলেছেন। তাদের মধ্যে সাবেক বরিশাল আদালতের সাবেক পিপি নূরুল হক ও বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মঈন তুষারের নাম নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই অংশটি চাচ্ছে, আরও বেশ কয়েকজন নেতাকে মন্ত্রীর একাত্ম করে দিতে। মূল উদ্দেশ কোণঠাসা রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে নতুন একটি মেরুকরণ তৈরিতে মন্ত্রীকে নেতা হিসেবে সামনে রাখা।

নির্ভরযোগ্য অপর একটি সূত্র জানায়, সিটি কর্পোরেশনের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরও জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারি হিসেবে রাজনীতি করার আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ রাখছেন। গ্রীণসিগন্যাল পেলেই তাদের মাঠে দেখা যেতে পারে। জনপ্রতিনিধিদের এই অংশটির ক্ষোভ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর হওয়া সত্ত্বেও কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। অথবা মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ তাদের ভালো চোখে দেখছেন না। ধারণা পাওয়া গেছে, মেয়রের কঠোর ভূমিকার কারণে স্বার্থভঙ্গ তথা ঠিকাদারী কাজসহ বিভিন্নভাবে বঞ্চিত হওয়ায় তারা নতুন প্লাটফর্মের সন্ধানে মন্ত্রীর মঞ্চে উঠতে চান। কিন্তু এই চেতনায় বিশ্বাসী কোনো কাউন্সিলরকে এখনো মন্ত্রীর সাথে দেখা যায়নি। সকলেই তারা দূরত্বে থেকে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমে মন্ত্রীর সম্মতি আদায়ে জোরতর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। বেশিমাত্রায় মন্ত্রীর সান্নিধ্য বা আশির্বাদে রাজনীতিতে আগ্রহ প্রকাশে আবুয়াল হোসেন অরুন তৎপর। ছাত্রলীগ নেতা জসিম, ভিপি মঈন তুষার ও জিএস নাহিদ সেরনিয়াবাতও পিছিয়ে নেই। ছাত্রলীগের প্রথমজন মন্ত্রীর সাথে প্রকাশ্যে যোগাযোগ রাখলেও শেষের দুই ছাত্রনেতা পর্দার অন্তরালে থেকে ফিরে আসার প্রশস্ত রাস্তা খুঁজছেন। সেই চান সার্বিক নিরাপত্তা।

অপর একটি সূত্র জানায়, মন্ত্রী বরিশাল সফরে আসলে গত শনিবার রাতে আবুয়াল হোসেন অরুন পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউজে মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে নিজেসহ অপরাপর বেশ কয়েকজন নেতাকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার প্রস্বাব রাখেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এসময় মঈন তুষার অনুসারি পাসপোর্ট সোহাগ বেশ কয়েকজন সহোচর নিয়ে রেস্ট হাউজের অতিথিদের রুমে অবস্থান করছিলেন। মন্ত্রী তাদের সাক্ষাত দেননি। আবার অরুনকেও কোনো সম্মতি দেয়া থেকে বিরত ছিলেন। এসময় অরুনসহ তার পিছু থাকা ছাত্রলীগের ওই নেতাকে বিমর্ষ দেখা গেছে। আরেকটি সূত্রের দাবি, মন্ত্রী তাদের এখনো নিরুৎসাহিত করেননি। সম্ভবত তাদের ধীরে চলা এবং অপেক্ষায় থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। মন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম চাচ্ছেন না এই ধারার নেতাদের নিয়ে রাজনীতিতে অগ্রসর হতে। কারণ আগ্রহী এই নেতারা এক কাতারে সামিল হলে বরিশাল আওয়ামী লীগে দ্বিধা-বিভক্তি দেখা দিতে পারে। তার আকাঙ্খা নতুনদের দিয়ে রাজনীতির আগামীর পথ মসৃন করা এবং নিজেকে বিতর্কের বাইরে রাখা। তবে রাজনীতিতে শেষ বলে যে কথা নেই, তার বাস্তবায়ন ঘটলে জাহিদ ফারুক শামীমের অনুকূলে ফিরে আসা নেতাদের বিরাট মিছিল দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, মন্ত্রীর অনুসারিদের মধ্যে নবাগতদের ঠাঁই দেয়া নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। একাংশ এই সকল নেতাদের নতুন খোলসে ফিরে আসার বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছেন না। তারা মন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়ে বলছেন, স্বার্থ খোঁজায় বিভোর এই সকল নেতারা অনুগত থাকলেও তাদের অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস সুখকর বা ইতিবাচক নয়।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন