২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

মশার যন্ত্রণায় ওষ্ঠাগত বরিশাল শহরবাসী

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:০৪ অপরাহ্ণ, ২০ মার্চ ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল :: মশার যন্ত্রণা ওষ্ঠাগত করে তুলেছে বরিশাল শহরবাসীকে। বিশেষ করে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের অনেক এলাকায় অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে দিনের বেলায় মশার কয়েল ব্যবহার নতুবা মশারি টানাতে হচ্ছে। অথচ মশা নিধনে বিসিসির অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই খাতে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বিসিসির বরাদ্দ দিয়েছে অর্ধকোটি টাকা। কিন্তু কিছুতেই যেন পুরোপুরি নিধন করা সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে কয়েল জ্বালিয়েও মশার কামড় থেকে পরিত্রাণ মিলছে না। ফলে নিধন ওষুধের (কীটনাশক) মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাছাড়া বাজেটে নামমাত্র বরাদ্দ হওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। যদিও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে বাজেট বরাদ্দ বা ওষুধের মানের ক্ষেত্রে খাটতি নেই। অভাব রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতির।

সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, সাবেক সিটি মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের মেয়াদের শেষান্তে অর্থাৎ ২০১৮ সালে মশা নিধন কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এই খাতে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ওই সময় কেনা হয়নি কীটনাশক। পরবর্তীতে একই বছরের শেষ দিকে মেয়র হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ দায়িত্ব নিলে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে অর্ধকোটি টাকা বরাদ্দ রাখেন। মূলত সেই বরাদ্দের অর্থেই তাদের কার্যক্রম এখনও চলামান রয়েছে। এতে মশা নিধন অনেকাংশে সম্ভবও হয়েছে বলে দাবি করছে বিসিসি।’

তবে শহরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে ঘুরে সেখানকার বাসিন্দাদের সাথে আলাপচারিতায় পাওয়া গেছে এক বিপরীত চিত্র। বিশেষ করে নগরীর ১, ২, ৩, ৪, ২৬, ২৭ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ মশার যন্ত্রণায় বেশিমাত্রায় ওষ্ঠাগত।

১ নম্বর ওয়ার্ডের বিসিক এলাকার বাসিন্দা শহীদুল্লাহ সুমন জানিয়েছেন, মশার যন্ত্রণায় দিনের বেলায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকানে বসা কষ্টসাধ্য। এমনকি কয়েল জ্বালিয়েও মশা নিধন থেকে পরিত্রাণ মিলছে না।

একই ভোগান্তির বিষয়টি জানিয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবু সালেহ বলেন, এপ্রিল মাসের শুরুতে তার ছেলের এইচএসসি পরীক্ষা। কিন্তু মশার যন্ত্রণায় ছেলের পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। কয়েল ও ওষুধ স্প্রে করেও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না।

এক্ষেত্রে ৩, ৪, ২৬, ২৭ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের অভিযোগ হচ্ছে, সিটি কর্পোরেশন মাস অন্তর যে ওষুধ দিচ্ছে তা কাজে আসছে না। বরং প্রতিনিয়ত বাজার থেকে মশার কয়েল বা স্পে ব্যবহার করতে হচ্ছে। অনেকে শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কায় বাজারে বিক্রিত কয়েল বা স্প্রে ওষুধগুলো ব্যবহার না করে কষ্টসাধ্য হলেও মশার কামড় খাচ্ছেন।

আবার কেউ কেউ অভিযোগ আকারে বলছেন, সাধারণ মানুষের বাসাবাড়ি বা ডোবায় না দিয়ে কয়েকটি অফিস, প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তি ও রাজনৈতিকদের বাসাবাড়িতে দেয়া হয়। ফলে ৩০টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মশার যন্ত্রণা নিতে হচ্ছে।’

অবশ্য সাধারণ মানুষ যে মশার যন্ত্রণায় রয়েছেন সেই বিষয়টি খোদ ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও স্বীকার করেছেন। সেক্ষেত্রে তাদের ভাষ্য হচ্ছে, বাস্তব চিত্র বিসিসি কর্তৃপক্ষও অবগত। কিন্তু বলা হচ্ছে যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত ওষুধ ছিটানো সম্ভব হচ্ছে না।’

এমন বাস্তবতায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ভেটেরিনারী সার্জন ডা. মো. রবিউল ইসলাম বলছেন, বর্তমানে তাদের একটি ফগার ও ৩টি স্পে মেশিন রয়েছে। সেগুলো দিয়ে প্রতিদিন একটি করে ওয়ার্ডে কাজ করা হচ্ছে। এবং মানসম্পন্ন এসিআই কোম্পানির কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পরিবেশগত কারণে মশা পুরোপুরি নিধন করা সম্ভব হচ্ছে না।

তাছাড়া যন্ত্রপাতির অভাব থাকার বিষয়টি স্বীকার করে এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মশা নিধনের বেশ কয়েকটি আধুনিক নিধন যন্ত্র ক্রয়ে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই মেশিন আসলে মশার উৎপাত পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।’

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন