২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

মহামারীকালে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির বিপর্যয়!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:১১ অপরাহ্ণ, ১৫ মে ২০২০

এস এম মনিরুজ্জামান, অতিথি প্রতিবেদক:: সমগ্র বিশ্বে মানুষ আজ একই সমস্যায় অবতীর্ণ, তা আর কিছুই নয় শুধু মহামারী করোনা, করোনা এবং করোনা। যত হাহাকার যত মৃত্যুর মিছিল তার মূল কারণ একটাই, সেটা হলো করোনা। যেখানে সমগ্র বিশ্বে প্রায় তিন লাখ মানুষের মৃত্যু। আরও হয়তো অপেক্ষায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে অগণিত, তার সংখ্যা নিরূপণ দুঃসাধ্য। কোথাও হতাশায় নিমজ্জিত কোটি কোটি মানুষ, আবার আশার আলোও দেখতে পাচ্ছে কিছু মানুষ। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকতেই অভ্যস্ত। এ মহামারীর সময়ে বিশ্বের অনেক সম্পদশালী দেশ তাদের নড়বড়ে অবস্থান জানান দিয়েছে চিকিৎসাসহ অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে।

কিন্তু আমরা কেবল মাত্র আমাদের গাফিলতির কারণে যেটুকু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি মাত্র। পূর্ব প্রস্তুতির যথেষ্ট সময়কে কাজে না লাগানোর কারণেই সমস্যা যেটুকু হবার হয়ে গেছে। এখন সে কথা না বলে করোনাকে জয় করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।

পবিত্র রমজান মাসে সকল মানুষের চিন্তা চেতনায় একটি বিষয় কাজ করে তা হলো ঈদুল ফিতর উৎসব। মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এ একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয় এদেশে। কিন্তু এ বছর তার চিত্র অন্য রকম হতে চলছে।

কর্মমুখী মানুষ কাজের জন্য শহরমুখী তাও আবার নানান ঝামেলার মধ্যে দিয়েই যেতে হচ্ছে পেটের তাগিদে। ইতিপূর্বে অনেকেই চাকরিচ্যুত হয়েছেন, কোম্পানি লে-অফ জনিত কারণ, পণ্য সরবরাহের অভাব, ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কারণই বিদ্যমান।

আবার উল্টো চিত্র ও যে দেখা যায় না তাও নয়, কেহ লকডাউনকে উপেক্ষা করে ঘরমুখো হচ্ছে যে কোন উপায়ে। একটা শ্রেণি লকডাউনকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরি করে বসে আছেন। মনুষ্যত্ব বিকিয়ে অমানুষের রূপে নিজেকে উপস্থাপন করছেন। এতটাই আত্মভোলা হয়ে আছেন যে মানুষের কোন কষ্টেই তাদের হৃদয় কাপে না। এ বিপদের সময় মানুষ চায় একটু সহানুভূতি, সহযোগিতা, সহমর্মিতা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার ব্যত্বয় ঘটতে দেখা যায়।
বাঙালীর আত্মসম্মানবোধ জন্মগতভাবে মজ্জায় মিশে আছে। সবাই চায় পেটে ক্ষুধা নিয়ে মরে গেলেও যেন সম্মান বোধটুকু যেন টিকে থাকে। কিন্তু সেটা কি টিকিয়ে রাখতে পারছে?

এ প্রশ্নের জবাবে না শব্দটাই বেশিরভাগ প্রতিয়মাণ। ত্রাণ বিতরণের সময় ছবি না তুললেই কি নয়? দেখা গেছে ছবি তুলতে অপারগতা প্রকাশ করলে চড় থাপ্পর দিতেও দ্বিধা করেনি কিছু মানুষ নামধারী অমানুষ। এরা আবার নিজেদেরকে সমাজের সেবক হিসেবে দাবি করে। আসলে কি এরা সমাজসেবক? এ উত্তর দেবার মত যথেষ্ট সময় সামনে পরে আছে। প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া বা সোস্যাল মিডিয়ার বদৌলতে আমরা প্রতিনিয়ত নতুনত্বকে জানতে পারছি। এ মুহূর্তে সর্বাগ্রে তাদেরকে স্যালুট করা উচিত যারা জনগণের চোখের সামনে সত্যিটা উপস্থাপন করছেন।

বছরের পর বছর নামে বেনামে ভিজিডি কার্ডের সহায়তা প্রাপ্ত ব্যক্তিকে না দিয়ে নিজেরা আত্মসাৎ করেছেন। তাদেরকে ঘৃনা ছাড়া আর কি বা করবার আছে আমাদের মত সাধারণ মানুষের। মৃত্যুর পরে সবাই চায় তার যথাযথ ভাবে যার যার ধর্মমতে শেষকৃত্য শেষ করুক, কিন্তু এ মহামারী প্রক্কালে কি দেখছি?
কারও জানাযা নামাজ ছাড়াই দাফন করা হচ্ছে, কারও আবার মুখাগ্নি করার মত লোকটি পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। এটা কি কোন মানু্ষরে চাওয়া হতে পারে?
মানবিক গুণাবলীর কারনেই মূলত মানুষ শ্রেষ্ঠজীব হিসেবে স্বীকৃত। মহামারীকালে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। দ্বারেদ্বারে ঘুরেও কোন হসপিটালে ভর্তি না করতে পেরে অবশেষে জীবন প্রদীপ নিভে যেতে দেখেছি। অথচ একসময় ভর্তি করতে না চাইলেও দালালদের খপ্পড়ে পরে নাম সর্বস্ব হাসপাতালগুলো ভর্তির জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তো। কোথায় সে মানবিকতা? ব্যবসার নামে জিম্মি করে রোগী আটকে রাখা প্রতিষ্ঠান, যারা অর্থ ছাড়া অন্য কিছু বুঝতে চায় না। আসলে আমাদের প্রত্যাশাটা কি? আর বাস্তবতা কি দেখছি?
মৃত্যুর পরে চল্লিশা কিংবা বিশেষ দিনে বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে ভোজের আয়োজন না হলে যেন কোন কিছু শুদ্ধিই হবে না। এটা আমাদের সমাজের রীতি কিন্তু আজ আমরা মাটি দেয়া কবর খোঁড়ার মতো লোক খুঁজে পাই না।
এটা কি আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম। মহামারী আমাদের নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। আমাদের নিত্য নতুন চাওয়া পাওয়ার মাঝে অনেক পরিবর্তন এনে দিবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
দীর্ঘদিন লকডাউনে জীবন যাপনের ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন পরিলক্ষিত। কতটা সহজে জীবন যাপন করা যায়?
সেটা কিন্তু আমরা বুঝতে পেরেছি। বন্ধু বান্ধব তো দূরের কথা আত্মীয় স্বজন থেকেও যেন কেহ নেই।
অযথা লৌকিক খরচের হিসাব নিকাশেও পরিবর্তন আসবে এটা নিশ্চিত। কারণ আমাদের প্রাপ্তি আর প্রত্যাশা নতুন রূপে আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে মহামারী করোনা।
রাষ্ট্রের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক, কিন্তু আমরা কি সেটা যথাযথভাবে পাচ্ছি? এ প্রশ্নটা সকল সচেতন নাগরিকদের।
এক কথায় এ প্রশ্নের জবাব দেয়া কঠিন। প্রত্যাশা প্রাপ্তির মাঝে দোলাচালে এর উত্তর। কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের দাবি করা কঠিন। সত্যি টা আসলে আমরা জেনেও অদৃশ্য সুতোর টানে প্রকাশ করতে পারছি না। জনগণের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মাঝে বিস্তার ফারাক। কল্যাণমূলক আইনের মাঝেও অপপ্রয়োগ ঘটাতেই আমরা বেশি পটিয়শী।
শীর্ষ পর্যায়ের নীতি নির্ধারণী যেখানে তাদের নির্দেশিত কার্যক্রম বাস্তবায়নে হোঁচট খায় সেখানে আমাদের মতো আমজনতা কি-ই-বা প্রত্যাশা করতে পারি?

—–এস এম মনিরুজ্জামান @ s.moniruzzaman99@gmail.com

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন