২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

‘মাকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, আমাকেও হত্যা করতে পারে’

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৫৪ অপরাহ্ণ, ১৭ মার্চ ২০১৯

বরগুনার আমতলী উপজেলায় বৃদ্ধা বিধবা মনোয়ারা বেগমকে (৬৫) পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় গত এক মাসেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। উল্টো এ ঘটনায় মামলা তুলে নিতে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন বাদী এলিজা বেগম। আসামিদের ভয়ে তিনি ও তার পরিবার পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

নিহত বৃদ্ধার মেয়ে এলিজা বেগম বলেন, ‘আসামিরা পরিকল্পিতভাবে আমার মাকে ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। যেকোনো সময় আমাকেও হত্যা করতে পারে।’

মামলার বাদী আরও বলেন, ‘আমি আদালতে মামলা দায়েরের পরে আসামি সামসুদ্দিন আহম্মেদ ও তার দুই ছেলে মামলা তুলে নিতে আমাকে জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে। আসামিদের ভয়ে রাস্তা ঘাটে চলতে পারছি না। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না।’

নিহত মনোয়ারা বেগমের ছোট ভাই আবদুল রাজ্জাক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার সৎ মামা সাবেক ইউপি সদস্য সামসুদ্দিন আহম্মেদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ কারণে আমার বোনকে হত্যা করেছে, এখন আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করছে। প্রায় রাতেই আমাকে ও আমার ভাগ্নি হত্যার জন্য আমার বাড়িতে আসামিরা লোকজন নিয়ে আসে। আমি ভয়ে দিনযাপন করছি। যেকোনো সময় আমাদের হত্যা করতে পারে।’

তবে মামলার আসামি সামসুদ্দিন আহম্মেদ বাদীকে হত্যার হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার জমিতে ওরা বসবাস করে। আমি কেন ওদের হুমকি দিতে যাব।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক বলেন, ‘এ মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। মামলার বাদীকে স্বাক্ষী নিয়ে আসতে বললেও সে আসছে না। মামলার বাদী নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এলাকার মানুষকে মামলায় জড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।’

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন মিলন বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলা সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামের বিধবা মনোয়ারা বেগম ও তার ছোট ভাই রাজ্জাক খানের সঙ্গে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তাদের সৎ মামা সাবেক ইউপি সদস্য সামসুদ্দিন আহম্মেদের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এটি নিয়ে তাদের মধ্যে একাধিক মামলা হয়েছে।

এদিকে যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল ওই জমিতে বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম একটি খরের ঘর তুলে একা বসবাস করতেন। কিন্তু ওই ঘর থেকে বৃদ্ধাকে উচ্ছেদের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেছেন আসামিরা। উচ্ছেদ করতে না পেরে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই ঘরে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর আগুনে ঘরটি পুড়ে যায় এবং মনোয়ারা বেগম দগ্ধ হয়ে মারা যান-এমন অভিযোগ মামলার বাদী এলিজা বেগমের।

এ ঘটনার পর আমতলী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু গত এক মাস পেড়িয়ে গেলেও এ মামলার কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি পুলিশ। উপায় না দেখে গত ৬ মার্চ নিহত বিধবা মনোয়ারা বেগমের কন্যা এলিজা বেগম বাদী হয়ে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলায় গুলিশাখালী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সামসুদ্দিন আহম্মেদ তার দুই ছেলে লিমন ও শাখাওয়াতকে আসামি করা হয়।

পরে আদালতের বিচারক মো. সাকিব হোসেন মামলাটি আমলে নিয়ে জিআর ২৬/১৯ মামলার সঙ্গে একীভূত করে আমতলী থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।’

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন