২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

মানবিক ওসি, খাদ্যসামগ্রী কিনে নিয়ে গেলেন অসহায়দের বাড়ি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:০১ অপরাহ্ণ, ২৯ মার্চ ২০২০

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সারাদেশের মতো বরিশালেও বন্ধ রয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন। একই সঙ্গে ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। ওষুধের দোকান এবং কাঁচাবাজার ছাড়া বন্ধ সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও। এজন্য বিপুল পরিমাণে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। একই অবস্থা বরিশালের অগৈলঝাড়া উপজেলায়। উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে উপজেলার কয়েক হাজার খেটে খাওয়া মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

তাদের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন। বেতনের টাকা দিয়ে শনিবার রাতে অর্ধশতাধিক কর্মহীন দরিদ্র মানুষের মধ্যে ১০ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, দুই কেজি পেঁয়াজ ও পাঁচ কেজি করে আলু বিতরণ করেছেন তিনি।

barishal1

শনিবার রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল, জবসেন, দাসেরহাট, পূর্ব সুজনকাঠীসহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে দরিদ্র মানুষের হাতে এসব খাবারের ব্যাগ তুলে দেন ওসি।

উপজেলার পূর্ব সুজনকাঠী গ্রামের ভ্যানচালক সিদ্দিক সরদার (৬০)। ভ্যান চালিয়ে উপার্জনের টাকায় তার পরিবারের ছয় সদস্যের খাবার জোটে। গত কয়েকদিনে ভ্যান নিয়ে বের হতে পারেননি তিনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে-পরে কিভাবে বাঁচবেন সে চিন্তায় অস্থির তিনি।

উপজেলার দাসেরহাট গ্রামের রিকশাচালক রতন খলিফা বলেন, শনিবার রাতে হঠাৎ ঘরের দরজায় এসে পুলিশের লোক বলে ডাকাডাকি করতে থাকেন। পরিবারের সদস্যরা ভয় পেয়ে যান। অনেকটা ভয় নিয়ে দরজা খুলে দেখি চাল-ডাল, আলু, পেঁয়াজের ব্যাগ নিয়ে ওসি দাঁড়িয়ে আছেন। তখন আনন্দে চোখে পানি এসে যায়। আমার মতো গরিবের বাড়িতে এসে ওসি চাল-ডাল দেবেন স্বপ্নেও ভাবিনি। এ অনন্দ বলে বোঝাতে পারব না। ওসির জন্য অনেক দোয়া করি।

barishal1

আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত বলেন, ওসি আফজাল হোসেন নিজ উদ্যোগে দিনমজুর-অসহায় মানুষদের চাল-ডাল দিয়ে সাহায্য করছেন। তার এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।

আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের ওসি মো. আফজাল হোসেন বলেন, দেশে এখন করোনাভাইরাসের দুর্যোগ চলছে। ঘরে খাবার নেই গরিব মানুষের। বিধি-নিষেধ মেনে তারা কাজে বের হননি। এমন ১০০ জন খেটে খাওয়া ব্যক্তির তালিকা তৈরি করেছি। এরপর রাতে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবারের ব্যাগ তুলে দিয়েছি। তবে শনিবার রাতে ৬০ জনের বাড়ি যেতে পেরেছি। রোববার রাতে বাকি ৪০ জনের বাড়িতে খাবারের ব্যাগ পৌঁছে দেব।

ওসি মো. আফজাল হোসেন বলেন, ব্যাগ হাতে পাওয়ার পর সবাই খুলে দেখছেন ব্যাগে কি আছে। তাদের চোখে-মুখে যে আনন্দ দেখেছি, সেই অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যাবে না। এ স্মৃতি সারা জীবন মনে থাকবে আমার।

1 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন