২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলকেস ছদ্মবেশে বরিশালে ঘুরছিলেন, করেছেন ডাকাতিও!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:২০ অপরাহ্ণ, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলকেস ছদ্মবেশে বরিশালে ঘুরছিলেন, করেছেন ডাকাতিও!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: রাজধানীর মিরপুরে শাহ আলী এলাকার চাঞ্চল্যকর বাসু হত্যা মামলার প্রধান এবং ১২ বছর ধরে পলাতক থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. আলকেসকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। বরিশাল শহর থেকে তাকে শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন।

র‍্যাব জানিয়েছে, গত ১২ বছর ধরে আসামি আলকেস ঠিকানা পরিবর্তন করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামি নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য বারবার পেশা পরিবর্তন করে আসছিলেন। প্রথমদিকে তিনি সাভারের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকের কাজের পাশাপাশি হত্যা, ডাকাতি করতেন। পরবর্তীতে বরিশালে ট্রাকের হেলপার ও পরে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করেন। বেপরোয়াভাবে বাস চালানের সময় সিলেটে তার বাসের নিচে পরে একজন নিহত হয়। এই ঘটনায় সিলেটের ওসমানীনগর থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলে কুয়াকাটা মাছ ধরার ট্রলারে কাজ শুরু করেন।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক এসব কথা বলেন।

র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তার আসামি মো. আলকেস, মামলার বাদী চিনু মিয়া ও নিহত বাসু মিয়া (৪৮) একই এলাকার বাসিন্দা। চিনু মিয়া, বাসু মিয়ার আপন ছোট ভাই। আসামি আলকেস রাজধানীর শাহ আলী থানাধীন চটবাড়ী নবাবেরবাগ এলাকার ২০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি মৎস্যজীবী সমিতির সদস্য। বাসু মিয়া ও চিনু মিয়ার চটবাড়ী এলাকায় ১০ শতাংশের পৈত্রিক সম্পত্তি মৎসজীবী সমিতির কাছে বাৎসরিক ভিত্তিতে লিজ দেওয়া ছিলো। কিন্তু একসময় আসামি আজগর আলী প্রতারণামূলক জাল দলিল করে নিজের নামে নিয়ে নেয় এবং পরবর্তীতে অবৈধভাবে ২০১০ সালে সমিতির নামে হস্তান্তর করে।

তিনি বলেন, এতে জমির মালিকানা নিয়ে চিনু মিয়া ও বাসু মিয়ার সঙ্গে মৎসজীবী সমিতির বিরোধ সৃষ্টি হয়। সমিতির লোকজনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা অর্থাৎ এই মামলার আসামি আলকেসসহ অন্যান্য আসামি আজগর, গিয়াস উদ্দিন, সানু মিয়া, জিন্নাত, রুমা, কদর আলীর নেতৃত্বে সমিতির নামে রাখা জমি জোরপূর্বক দখল করে জায়গাটিতে সীমানা প্রাচীর তৈরি করে ফেলে। চিনু মিয়া ও বাসু মিয়া তখন আদালতে মামলা করেন। প্রায় দুই বছর পর বিজ্ঞ আদালত চিনু মিয়া ও বাসু মিয়ার পক্ষে রায় প্রদান করেন। আদালতের রায় পেয়ে চিনু মিয়া ও বাসু মিয়া উক্ত জমিতে ২০১২ সালের শুরুতে বিল্ডিং নির্মাণ করা শুরু করেন। প্রথম তলার ছাদ পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।

ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক জানান, ঘটনার দিন ২০১২ সালের ১৪ মে বিকাল ৫টায় বাসু নবনির্মিত বিল্ডিংয়ের ছাদে পানি দেওয়ার জন্য একজন কর্মচারী নিয়ে যায়। তখন সমিতির সদস্যরা অর্থাৎ এই মামলার আসামি আলকেস, আজগর, রাজু, খলিল, সেলিম, কদর আলী, লেদুসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জন আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারাল অস্ত্র ও লোহার রড নিয়ে আক্রমণ করে। একপর্যায়ে আলকেস গুলি করলে ঘটনাস্থলেই বাসু মারা যান। এই ঘটনায় ভাই চিনু মিয়া আসামি আলকেসসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জন আসামির বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরীর শাহ আলী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

ডিআইজি বলেন, ঘটনার পর তিন মাসের মধ্যে আলকেসসহ অধিকাংশ আসামিদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করে। পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন আসামি আলকেস নিজেকে সম্পৃক্ত করে অন্যান্য আসামির নাম উল্লেখপূর্বক বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। কিন্তু আসামিরা চার মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেলে অন্যান্য আসামিরা আদালতে হাজিরা দিলেও আলকেস জামিন নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় এবং এই মামলায় আর কখনো হাজিরা দেয়নি।

তিনি বলেন, মামলাটি তদন্ত করে বিজ্ঞ আদালতে এজাহারনামীয় ১৩ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত ১ জনসহ মোট ১৪ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। বিজ্ঞ আদালত পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে বিচারকার্য পরিচালনা করে গত বছরের ১৫ নভেম্বর আসামি মো. আলকেস, আজগর আলী, খলিল, সেলিম ও রাজুসহ মোট ৫ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, আসামি কদর আলী ও লেদুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। জামিনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার আলকেস গংয়ের আসামি আজাহার ও সানুর মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় আলকেসের দ্বারা আজাহার ও সানু নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এই ডবল মার্ডারের মূল আসামিও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলকেস।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় আসামি মো. আলকেসের বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন এবং তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট পেন্ডিং আছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কদর আলী হাজতে থাকা অবস্থায় স্ট্রোক করে মারা যান এবং অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত আসামি নসু, জিন্নাত, গিয়াস, সালেম উদ্দিন এবং রুমাসহ মোট ৫ জনকে খালাস প্রদান করেন।

গ্রেপ্তার আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন