২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

মেয়র সাদিক বেজায় ক্ষুব্ধ!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৪৯ অপরাহ্ণ, ০৮ জুলাই ২০১৯

* নিজ ঘরানার অনুসারীদের অপকর্ম-অপরাধের লাগাম টেনে ধরার পরিকল্পনায়
* স্বচ্ছ রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় নতুন উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্তে কঠোর অবস্থান

শাকিব বিপ্লব, বরিশাল:: সম্ভবত দেরিতে হলেও দল ও নিজের ইমেজ রক্ষার্থে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর বোধোদয় ঘটেছে বলে অনুমান করা যাচ্ছে। নিজ ঘরানার অনুসারীদের অপকর্ম-দুর্নীতির কারণে নিজের ইমেজে টান ধরতে পারে, এমন আশংঙ্কায় আলোকে সংগঠনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। আর কোনো ছাড় নয়, এমন কঠোর অবস্থানে উপনীত হয়ে এখনই বেসামাল নেতাকর্মীদের লাগাম টেনে ধরতে চান। সেই সাথে নেতা কর্মীদের মূল ধারার রাজনীতিতে ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। এমনটি আভাস পাওয়া গেছে- একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়াসহ অপরাপর কাউন্সিলরদের দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ডের খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেছেন। চলতি সপ্তাহে কাশিপুর এলাকার নিজ দলীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কালাম মোল্লার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ায় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ প্রশংসিত হওয়ায় তার বর্তমান উদ্যোগ সম্পর্কে কমবেশী আভাস মিলেছে।

একাধিক সূত্রের অভিমত, মহানগর আ.লীগ নেতা মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বিষয়ে তিনি ছিলেন সর্বাধিক সতর্ক। যেকারণে এলাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সুফলও পেতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু বিধিবাম! কাশিপুর এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আ.লীগ নেতা কালাম মোল্লা সিটি কর্পোরেশনের দুই কর্মকর্তাকে নাজেহাল করার ঘটনার মধ্যে দিয়ে বরিশাল নগরীতে অপরাপর কাউন্সিলরদের কেউ না কেউ অপরাধ বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা রাখছে, সে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহও কম সতর্ক নয়। তার ঘনিষ্টদের অভিমত, যুববয়সী এই মেয়র সার্বিক খোঁজখবর রাখার পাশাপাশি আরও কিছু সময় নিতে চেয়েছিলেন অনুসারীদের সংশোধনে। কিন্তু দুর্ধর্ষ কালাম মোল্লা অপরাধ সংগঠনের পারিবারিক ঐতিহ্যের দাপটে কাউকে মানতে নারাজ। যার প্রমাণ খোদ সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন সম্পত্তি দখল করে সেখানের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ শুরু করলে কর্পোরেশনের বাঁধার মুখে পড়ে। যদিও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় সম্মুখের ওই সম্পতির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তার ওপর নকশাবর্হিভুত স্থাপনা নির্মাণ অভিযোগে কর্পোরেশনের দুই সড়ক পরিদর্শক কালাম মোল্লাকে নিবৃত করতে গেলে উভয়কে পিটিয়ে শোরগোল ফেলে দেয়। বরিশালের বাইরে অবস্থানকালে সিটি মেয়র বিষয়টি অবহিত হলে তিনি ক্ষুব্ধ হন। সিটি কর্পোরেশন ওই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করে।

ধারণা করা হচ্ছে- এই আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়ার পেছনে সিটি মেয়রের অবশ্যই সম্মতি রয়েছে।

উল্লেখ্য, কাশীপুর থেকে গড়িয়ারপাড় এলাকায় প্রয়াত আ.লীগ নেতা জলকাদের মোল্লার তিন পুত্রের বেপোরোয়া চলন-বলন, ভূমিদস্যুতা ও পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজির বহুমুখী অভিাযোগ রয়েছে। কালাম মোল্লার সহোদর কাশীপুর ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মোল্লার টেম্পুশ্রমিক ইউনিয়নের নেতা হয়ে বেঘোরে চাঁদাবাজিসহ মাদক জগতের নিয়ন্ত্রক সর্বোপরি শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালানার অভিাযোগ বহু পুরোনো। কিন্তু নিজ দলের এই নেতার বিরুদ্ধে মেয়র সাদিক কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় অনেকেই ভেবেছিল তার আশকারায় সবই ঘটছে। সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বড় ভাই কালাম মোল্লা একাধারে ট্রাক সেক্টরের নিয়ন্ত্রন নেয়ার পাশাপাশি গড়িয়ারপাড় এলাকার কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর শুরু করেন একের পর এক ভূমি দখল। সূত্র জানায়, মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর কাছে সব খবরই জানা ছিল। তিনি সময় নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। আসলেই নয়া এই মেয়র রহস্যময় এক নেতা। কখন তিনি বিদ্রোহে জ্বলে ওঠেন তা বোঝা বড় দায়। কালাম মোল্লা তাদের পারিবারিক লোক হলেও কর্পোরেশনের ইজ্জত এবং সংগঠনের প্রশ্নে ছাড় দিতে নারাজ বিধায় এই কাউন্সিলরের দাপটীয় যুগের ইতি টানতে কার্পণ্য করেননি খোদ তারই নেতা সাদিক আবদুল্লাহ। নচেৎ বরিশালের ইতিহাসে কোনো দাপটীয় আ.লীগ নেতা ও কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে এই প্রথম মামলা দায়ের নজির স্থাপন করলো।

অবশ্য অপর একটি সূত্রের দাবি, আ.লীগ নেতা থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তার অনেক অপকর্মের ফিরিস্তি মেয়রের দুয়ার পর্যন্ত পৌঁছায়নি। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় থানা পুলিশ কালাম মোল্লার পক্ষে অবস্থান নেয়ায় অনেক ঘটনাই আড়ালে ধামাঁচাপা পড়ে যায়। একটি উদাহরণই যথেষ্ট, সিটি কর্পোরেশনের দায়ের করা মামলায় একমাত্র আসামী সত্বেও কালাম মোল্লা এখনও এলাকায় ঘুরছে, এমন তথ্য দিয়ে নিশ্চিত করেছে একাধিক এলাকাবাসী। অথচ পুলিশ বলছে, তিনি পলাতক!

সর্বশেষ জানা গেছে, কালাম মোল্লার এতটাই দুঃসাহস রাখেন যে, মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে একধরণের অঘোষিত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ায় মেয়র ও মহানগর আ.লীগ নেতা নিরব হোসেন টুটুলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে ফেসবুক লাইভে এসে বেফাঁস নানা কথা ছুড়ে তার শক্তি-সামর্থ্যরে প্রমাণ দিতে চাইছেন। কৌশলী কালাম মোল্লা ফেসবুক লাইভে তার চারপাশে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহরই বেশ কয়েকজন অনুসারীকে রেখে বুঝাতে চেয়েছেন তিনি একলা নন, অনেকেই তার পাশে আছেন। ভাইরাল হয়ে যাওয়া ওই ভিডিও দৃশ্যে বরিশালে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এনিয়ে এখনও কানাঘুষা চলছে, আসলে সাদিক আবদুল্লাহর সাথে কালাম মোল্লা লড়াই করার শক্তি সাহস পেলো কোথা থেকে? অপর একটি সূত্রের দাবী, মেয়রের পিতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর রাজনীতির অনুসারী হিসেবে কালাম মোল্লা এখন নিজেকে উপস্থাপন করার চেষ্টার আলোকে শক্তপোক্ত অবস্থান জানান দিতেই এই দুঃসাহস নিয়েছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। চিত্রপট বলে দিচ্ছে, মেয়র সাদিকের পাশ থেকে তার আস্থাভাজন নিরব হোসেন টুটুলকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনায় অগ্রসর হয়েছে।

এক্ষেত্রে মেয়রের কাছ থেকে সুবিধা বঞ্চিত একটি অংশ টুটুলকে দায়ী করে সুযোগ কাজে লাগাতে পরোক্ষভাবে কালাম মোল্লাকে উসকে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সহোচররা জানায়, টুটুল সম্পর্কে শীর্ষ এই নেতাকে ক্ষ্যাপিয়ে তুলতে কালাম মোল্লার পক্ষ থেকে কানভারী করা হচ্ছে। কৌশলী রাজনীতিবিদ সাদিক আবদুল্লাহরও কানে এসব খবর পৌঁছে যাওয়ায় তিনিও অনঢ় অবস্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

আভাস মিলেছে তারই আলোকে শুরু করেছেন, কালাম মোল্লার অনৈতিক আয়ের উৎসমূল বন্ধের পদক্ষেপ। ইতিমধ্যে ট্রাক সেক্টর থেকে চাঁদাবাজি বন্ধের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে লাহারহাট ফেরীঘাটে অভিযান চালিয়ে ট্রাক থেকে অর্থ উত্তোলনকালে দুই যুবককে আটক করে আইনে সোপর্দ করার ঘটনায় প্রমাণ মেলে মেয়র সাদিকের কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত। মেয়র ঘরানার বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল অনুসারী নিশ্চিত করতে চায়, পূর্বের নেতা সাদিক আবদুল্লাহ আর বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ এক নয়। সাংগঠনিক অবকাঠামো সুদৃঢ় করতে সর্বশ্রেণির নেতা ও অনুসারীদের এতোদিন মাথায় হাত দিয়ে রাখলেও অনিয়ম আর ইজ্জতের প্রশ্নে এখন আর কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।

ওই সূত্রগুলো উদাহরণ দিয়ে বলছে, পূর্বের ন্যায় মেয়রের বাসভবনে অনেকের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অনিয়মের অভিযোগ থাকায়। আবার কাউকে তার চারপাশে ভীড়তেও দিচ্ছেন না। আবার কেউ বলছে তিনি এতোদিন অন্ধকারে ছিলেন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নগর ভবনের চেয়ারে বসে খোজঁখবর নিচ্ছেন অথবা পাচ্ছেন তার অনুসারীদের গতিপথ কোনদিকে। বিশেষ করে কালাম মোল্লা তার চোখ খুলে দিয়েছেন। যেকারণে দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। হোক সে দলের অথবা ঘনিষ্ঠ সহোচর। কিন্তু অপরাধ করলে ক্ষমা নেই। ইতিমধ্যে এই সতর্কবার্তা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। মেয়র চাচ্ছেন, স্বচ্ছ রাজনীতির মূল স্রোতধারায় তার অনুসারীদের ধরে রাখতে। বেসামাল দেখলে অথবা শুনলেই জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে প্রয়োজনে কুন্ঠাবোধ করবেন না সংগঠন থেকে বিতাড়িত করার পদক্ষেপ গ্রহনে।

অভিযোগ রয়েছে, তার চারপাশে থাকা অনেক নেতার শেল্টারে ওয়ার্ড পর্যায়ের অনেকে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। এরা মেয়র সমর্থিত হওয়ায় প্রশাসনও পদক্ষেপ নিতে পারছে না। আবার আইনের আওতায় আনতে গেলে মহানগরের অনেক নেতা মেয়রের প্রভাব বিস্তার করে প্রশাসনকে নিবৃত করছে। যা সাদিক আবদুল্লাহর অলক্ষ্যে থেকে যায়। অবশ্য এখন তার কানে অনেক গোপন খবরাখবর আসতে শুরু করেছে।

এ প্রসঙ্গে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করলে কোনো মন্তব্য সঞ্চিত না হলেও যদ্দুর জানা গেছে, এক কালাম মোল্লার কারণে চরম ক্ষুদ্ধ এই নেতা আপোসহীন হিসেবেই নগর পিতার খেতাব ধরে রাখতে চান। গত দুদিন হলো বরিশালে ফিরে আসা সাদিক আবদুল্লাহ এবিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে নিরব কৌশল গ্রহন করায় বুঝে ওঠা যাচ্ছে না, তিনি কীভাবে কালাম মোল্লার দুঃসাহসের পাল্টা জবাব দিবেন। এমন অপেক্ষায় অনেকেই উৎসুক দৃষ্টি রেখেছেন কালীবাড়ি সড়কের তার বাসভবনের দিকে।

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন