১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

শিরোনাম

মেয়াদোত্তীর্ণ হাসপাতালের অনুমোদন, ভুল চিকিৎসায় প্রসুতির মৃত্যু

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:২০ অপরাহ্ণ, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন::: দিনাজপুর শহরের কালিতলায় এইচ কে মাদার কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় এক প্রসুতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই হাসপাতালে রোগীর স্বজনেরা চেয়ার-টেবিল, আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ চিকিৎসক ডা. হযরত আলীর ভুল চিকিৎসার কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

জানা যায়, শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়। নিহত প্রসুতির নাম বিউটি আরা (৩৫)। তিনি দিনাজপুর সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ উত্তর বংশিপুর এলাকার আব্দুল মান্নানের স্ত্রী।

রোগীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার ভোরে প্রসব ব্যাথা উঠলে পরিবারের লোকজন বিউটিকে শহরের এইচ কে মাদার কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভর্তি করান। পরে সকালে ওই প্রসুতির সিজার করান চিকিৎসক ডা. হযরত আলী। সিজারের মাধ্যমে ছেলে সন্তান জন্ম দেন প্রসুতি বিউটি। এরপর সকাল ১১ টার দিকে ইনজেকশন পুশ করার কিছুক্ষণ পরেই ছটফট করতে করতে মারা যায় বিউটি আরা।

এ সময় কি ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে জানতে চাইলে রোগীর স্বজনদের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে ভুল ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ করে পরিবার ও স্বজনরা।

এর আগেও একই হাতপাতালে ভুল চিকিৎসায় অপর এক রোগী মৃত্যু অভিযোগ উঠেছিলো।

রোগীর স্বজনেরা বলেন, ইনজেকশন পুশ করার পরই বিউটি ছটফট করতে করতে মারা যায়। তবে কি এবং কেনো ইনজেকশন পুশ করানো হয়েছিল তা জানায়নি কর্তৃপক্ষ।

নিহতের বড় বোন ফাতেমা বেগম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘আমার বোনকে ভর্তি করার পর অপারেশন করান ডা. হযরত আলী। ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। রোগীর সাথে কথাও বলা হয়, এ পর্যন্ত রোগী ভালো ছিলো। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে রোগীকে একটি ইনজেকশন পুশ করার পরে ছটফট করে মারা যায়।’ ইচ্ছাকৃতভাবে রোগীকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ তার।

নিহতের আরেক বোন বিলকিস বেগম বলেন, ‘ইচ্ছা করেই রোগীকে মেরে ফেলা হয়েছে। ইনজেকশন দেয়ার পরপরই মারা যায় বিউটি। কিন্তু কি ইনজেকশন দেয়া হয়েছে সেটি দেখতে চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানায়নি। রোগীর সাথে থাকা ফাইলটি গায়েব করে দেয়া হয়েছে।’

এ ব্যাপারে ডা. হযরত আলীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনারা যা লেখার লেখেন।’ কি ইনজেকশন পুশ করা হয়েছিলো এবং রোগীর ফাইলপত্র দেয়া হচ্ছে না কেনো এমন প্রশ্ন জবাবও দেননি তিনি।

জানতে চাইলে দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুছ কুদ্দুছ বলেন, এইচ কে মাদার কেয়ার হাসাপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের অনেক আগের অনুমোদন থাকলেও তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। বারবার বলার পরও অনুমোদনের জন্য আবেদন কিংবা নবায়নের জন্য আবেদন করেননি কর্তৃপক্ষ। এর আগেও সেখানে রোগীর মৃত্যু হয়েছিলো এবং এ ব্যাপারে শোকজ করা হলেও কর্তৃপক্ষ সেই জবাবও সমুচিত দেয়নি।

ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসা সেবা নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।

দিনাজপুর কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বজলুর রশিদ বলেন, হাসপাতালে রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভাঙচুরের সংবাদ পাওয়ার পর সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। এ ঘটনায় থানায় এখনও কোনো অভিযোগ দেয়নি রোগীর স্বজনেরা। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে পুলিশ সেখানে যাওয়ায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, অভিযোগ রয়েছে এর আগে গত ২২ অক্টোবর রাতে হযরত আলীর ভুল চিকিৎসায় সদর উপজেলার ৩নং ফাজিলপুর ইউনিয়নের উত্তর হরিরামপুর গ্রামের মুনতাহীনা পারভীন (২৫) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছিলো। শুধু তাই নয়, এই চিকিৎসক কর্তৃক রোগী মৃত্যুর অভিযোগ এবং অপারেশনের সময় কিডনি কেটে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ গর্ভপাত ঘটানোর মামলায় তার ৯ বছর সাজাও হয়েছিল।

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন