২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

মেয়ের লাশ আনলে বাবাকেও পোড়ানোর হুমকি দিলেন চেয়ারম্যান

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:০০ অপরাহ্ণ, ২৮ মে ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন :: ‘আমার মেয়ের কোনো করোনা ছিল না, সে ঢাকা থেকে আসার আগে ভালোভাবে কথা বলেছে। করোনার কথা বলে আমার মেয়ের লাশ বাড়ি এনে মাটি দিতে দিলো না গ্রামবাসী ও চেয়ারম্যান। আমার কী অপরাধ? চেয়ারম্যান বলেছে, লাশ আনলে লাশ পুড়াব, তোকেও পুড়াব সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সও পুড়াব।’

একা ঘরে বসে এভাবেই বিলাপ করছেন আর কান্নাকাটি করছেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার উফারমারা গুচ্ছগ্রামের অসহায় গোলাম মোস্তফা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের উফারমরা গুচ্ছাগ্রামের সরকারি ৩০ নম্বর টিনের ঘরে বসে মেয়ে মাহমুদা বেগম মৌসুমির (২১) শোকে কাঁদছেন গোলাম মোস্তফা।

এ প্রতিবেদককে দেখে তিনি বলে ওঠেন, ‘একটি মাত্র মেয়ে আমার। মেয়ের কারণেই বেঁচে আছি। তার বেতনের টাকায় আমাদের বুড়াবুড়ির সংসার চলে। আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। আমি মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।

নিহত পোশাক কর্মী মাহমুদা বেগম মৌসুমি (২১) লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের উফারমারা গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা। দরিদ্র গোলাম মোস্তফা ও সাহেরা বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। বুড়িমারী হাশর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করে অভাবের তাড়নায় ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সংসার চালাতেন। দরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবারটি বর্মতল এলাকায় সরকারি রাস্তার ওপর বসবাস করত। সেখান থেকে ২০১১ সালে উফারমারা গুচ্ছগ্রামে ঠাঁই হয় তাদের।

গোলাম মোস্তফা বলেন, ঢাকা থেকে বাড়ি আসার পথে আমার মেয়ে ট্রাকেই মারা যায়। তার লাশ বাড়ি আনতে চেয়ারম্যানকে ফোন করি। কিন্তু সে ফোনে ধমক দিয়ে বলে ‘লাশ আনলে লাশ পুড়াব, তোকেও পুড়াব সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সও পুড়াব।’ একথা শুনে আমি হতাশ হয়ে কান্না শুরু করি। এরপর আমি লাশ দাফনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গে কথা বলি। সে বলে ৫ হাজার টাকা দিলে মেয়ের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করবে। শেষে নিরুপায় হয়ে লাশ অ্যাম্বুলেন্সে রাখি। পরে ড্রাইভার বলে চাচা আপনি এখানে নেমে বাড়ি যান, আমরা দাফনের ব্যবস্থ্য করব। আমাকে নামিয়ে দিলে আমি গ্রামে বাড়ি চলে আসি। দুইদিন পর আমার মেয়ের লাশ তিস্তা নদীতে পাই।
তিনি আরও বলেন, মেয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি আসবে বলে বুড়িমারীর ট্রাকচালক শফিকুলের কাছে যাই, সে বলে আমি ট্রাক নিয়ে ঢাকা যাব না আমার পরিচিত ট্রাক আছে সেই ট্রাকে আসতে পারবে। এই বলে শফিকুল আমার মেয়ে মোবাইল নম্বর নেয়। এরপর গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় ওই ট্রাকে আমার মেয়ে ওঠে।

জানা গেছে, ট্রাকে গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে ফেরার পথে মারা যায় গার্মেন্টসকর্মী ওই তরুণী। করোনা সন্দেহে মরদেহ দাফনের কথা বলে অ্যাম্বুলেন্সচালক ৫ হাজার টাকা নিয়ে লাশ তিস্তা নদীতে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে আদিতমারী থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে পাটগ্রাম সরকারি কেন্দ্রীয় কবরস্থানে ওই লাশ দাফন করে।

রংপুর তাজহাট থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ মে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশ জানতে পারে রংপুর ক্যাডেট কলেজের সামনের রাস্তায় ঢাকা মেট্রো-ট-২২-২৫৯৮ নম্বরের একটি ট্রাকে মাহমুদা বেগম মৌসুমি নামে (২১) এক গার্মেন্টস কর্মীর মরদেহ আছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই গাড়িটি জব্দ করে চালক আজিজুল ইসলাম ও সহকারী চালক রতনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। লাশ উদ্ধার করে রাতেই ময়নাতদন্ত ও করোনার নমুনা নিয়ে গত ২৩ মে মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

এ বিষয়ে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ নিশাত বলেন, আমি লাশ নিয়ে আসতে এবং দাফনে কোনো বাধা দেইনি। বরং মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করেছিলাম। আমি যে অপরাধী সেটা প্রমাণ করতে পারলে আমার নিজের শাস্তি কামনা করছি এবং সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে গত মঙ্গলবার রাত ৮টায় (২৭ মে) লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় জানিয়েছেন, ট্রাকে মৃত্যু হওয়া ওই গার্মেন্টস কর্মী করোনা নেগেটিভ ছিলেন।

এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মোহন্ত বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। এই ঘটনায় তদন্ত চলছে।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন