২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

যমুনা বসু, রবে মনে নিরবে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:৫১ অপরাহ্ণ, ২১ মে ২০১৭

যমুনা বসু। দুটি শব্দের নাম। তবে পদবী বসু শব্দটি মনে করিয়ে দেয় উপমহাদেশের দু’জন ব্যক্তিত্বের কথা। এহলো সুবাস চন্দ্র বসুর ন্যায় সৌম্য চেহারা আর জ্যোতি বসুর ন্যায় ছিলেন কর্মে একনিষ্ঠ। এই দুয়ের সম্মিলনে যমুনা বসু যে অনন্য হয়ে উঠেছিলেন, তার প্রমাণ মেলে স্মরণ সভায় সহযোদ্ধাদের অশ্র“ জলে। তার কর্মক্ষেত্র আমাদের দৃষ্টিতে হয়তো সামান্য বা ছোট পরিসরের বটে, তাবলি এর মধ্যদিয়ে কাউকে বদলে যেতে যে সহায়কের ভূমিকা পালন করেননি, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

জীবনের এক অধ্যায়ে বর্ণিল আর সংসার অধ্যায়ের শুরু থেকেই প্রয়াণ অবধি কি ঝঞ্ঝাবহা কঠোর পরিশ্রম, বোধকরি এমন জীবন নিয়েই বলা যায়-দিলেন বিনিময়ে পেলেন না তেমনই। নোবেল জয়ী বব ডিলান তার গানে জানতে চেয়েছিলেন, কতটা পথ হাঁটলে তারে পথিক বলা যায়, তেমনি কতটা সংগ্রাম আর ন্যায়নিষ্ঠ থাকলে তাকে আদর্শ মানা যায়। এই  প্রশ্নের উত্তরে উপমায় যমুনা বসু উত্রে যান সহজেই।
এক যুগের বেশি সময় ধরে তাকে চিনি। কাছাকাছি কাটিয়েছিনু দুই-তিনটা বছর। তবে শান্ত প্রকৃতির নিভৃতচারী এই মানুষটির সাথে কোন দিন কথা হয়েছে বলে মনে পড়েনা। তবুও তার মৃত্যূ সংবাদ হৃদয় ছুঁয়েছিল বার বার। ক্ষোভ হয়েছিল বিধাতার প্রতি এ তাঁর কেমন হিসাব। যমুনা বসুর ছোট ভাই প্রফেসর বিপ্লব বসুর বর্ণিত তথ্য অনুযায়ী, বাকেরগঞ্জ উপজেলায় এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে তাদের জন্ম বটে। তবে তার পিতাজীকে এলাকার সব্বাই এক নামেই চিনেন। ১৯৮৪ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৮৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর বিয়ে হয় যমুনা বসুর। তার দিদির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, পরিপাটি সুন্দর গহনাগাটি আর সাজগোছ পছন্দ করতেন।

আয়েশী জীবনে ভোরবেলা একটু দেরি করেই  উঠতেন যমুনাদি। আর সেই দিদিকে যখন দেখলাম খুউব সকালে অফিসের পানে ছুটছেন, তখন মনে হলো জীবনের দুই অধ্যায়ে কত ফারাক। বিয়ে হলো, দুই সন্তান হলো। তবে দাদাবাবু যখন কাজে ভালো করতে থাকলেন, তখনই তিনি অসুস্থ হয়ে অবশেষে এখন থেকে ৭ বছর আগে পরলোকগমন করেন।

কন্যা, পুত্র দুই সন্তান নিয়ে যমুনা দিদি আরেক সংগ্রামে অবতীর্ণ হলেন। যে সংগ্রামের বর্ণনায় অধ্যাপিকা টুনু রাণী জানালেন, স্বামীর মৃত্যুর পর যমুনা বসুর হাসি উবে গিয়েছিল। কখনো আর হাসতে দেখিনি, অকাল বৈধব্যের যন্ত্রণা স্পষ্ট ছিল অবয়বে।

সন্তান দুটির পড়ালেখার কথা মনে করেই নিজের ভেতরে যে রোগ বাসা বেঁধে তাকে অবিরত ক্ষয় করে চলছিল, সেদিকে তাকানোর সময় ছিল না হয়তোবা। তারপরও পূজিঁবাদী সমাজে আর্থিক অবস্থার কথাও বিবেচনায় আসবে এখানে সর্বাগ্রে।

এজন্যই এমন হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনাগুলোর বেলায় উত্তর কোরিয়ার জনক গ্রেট লিডার কিমের কথা উপমায় ভর করে। তাহলো এক জেলে মাছ ধরতে গিয়ে গভীর সমুদ্রে আটকা পড়েছিলেন।

তাকে হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার করেছিল রাষ্ট্র। কিমের যুক্তি ছিল হোক সে জেলে বা দরিদ্র, এই নাগরিকের শ্রম রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য কিছু কাজতো করেছেই। এজন্য তার বিপদে রাষ্ট্র পাশে থাকবে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা কবরে এটাই নিয়ম।

আমার দেশে বা বর্তমান বিশ্বে? তাইতো সুরস¤্রাট কমল দাশগুপ্ত অসুস্থ হয়ে পড়লে ফিরোজা বেগম স্বামীকে নিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে  ছুটেছিলেন। চিকিৎসা নিতে ভর্তির জন্য মানদন্ড এটে দিয়েছিলেন, তিনি সরকারী  গেজেটেড কোন কর্মকর্তা কিনা। এমন দেশে যমুনা বসুদের হাল কি হয়, অপরিণত বয়সে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আগাম বিদায় নিতে হয়।

তবে ধন্যবাদ জানাতে হয় তিনি যে সংস্থার জন্মলগ্ন ১৯৯২ সাল থেকে একনিষ্ঠ হয়ে কাজ করেছেন সেই সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন সংস্থার পরিবারকে। তারা যমুনা বসুর কাজের মূল্যায়ন করেছেন। সংস্থার আয়োজনে ১৯ মে স্মরণ সভায় নির্বাহী পরিচালক এবং অন্যরাও প্রতিশ্রুতি দিলেন দুই সন্তানের বেড়ে ওঠায় তারা সহায়কের ভূমিকা পালন করবেন।  যেখানে আমাদের শোকের আয়ু ৩ দিন সেখানে এই প্রতিশ্রুতিকে খাটোকরে দেখার এখতিয়ার নেই।

কারণ কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরতে গিয়ে পথেই যমুনা বসু অসুস্থ হলে শেবাচিম হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে তার প্রিয় সংস্থার সহায়তায় নেওয়া হয় ঢাকাতে। তবে অসুস্থ হওয়ার তিন দিন পর ২৯ এপ্রিল তাকে ইহলোক ত্যাগ করতে হয়।

এই স্মরণ সভায় যমুনা বসুর অনার্সে অধ্যায়নরত কন্যা জয়া বসুর উক্তি ছিল চারজনার সংসারে বাবা যখন চলে যান তখন বলেছিলাম, বাবা তুমি আমাদের সংসারকে ছোট করে দিয়েগেলে। দিন গড়ানোর পর ভাবতে থাকলাম বাবা নেই, মা আছেন পাশে।

সেই মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, এখন আমাদের সংসার বলতে আর কি রইল? এমন প্রশ্ন বুক ছুঁয়েছে সবার, চোখের জল ফেলেছেন অনেকেই।

নিরব ছিল  শোকসভা স্থল। কারণ যমুনা বসুর কন্যা জয়া বসুর প্রশ্নের জবাব অমিমাংসিত যে।”

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন