শাকিব বিপ্লব ও হাসিবুল ইসলাম:: র‌্যাবের হাতে আটক নরসিংদীর বহুল বিতর্কিত শামীমা নুর পাপিয়ার পদঙ্কই কী অনুসরণ করলেন ঝালকাঠির যুবলীগ নেত্রী নাছিমা কামাল ? একাধিক ধনাঢ্য ব্যক্তির সাথে সখ্যতা মাধ্যমে একপর্যায়ে প্রেম-অভিনয়ে মোবাইল সেক্সর একটি নগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনৈক এক ব্যক্তি পোস্ট করার পর এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বেড়িয়ে আসছে এই যুবলীগ নেত্রী ও কাউন্সিলর নাছিমা কামালের নানা অপকর্মের খবর। মহিলালীগ নেত্রী পাপিয়ার থেকেও নাছিমাও কম নন, তা নগ্ন ছবিতে বলে দেয়। সেই সাথে প্রাপ্ত যে তথ্য উপাত্ত¡ বরিশালটাইমস’র হাতে কার্যালয়ে এসে পৌছেছে তাতে সহজেই অনুমেয় ছোট্ট শহর ঝালকাঠির অন্ধকার জগতে নাছিমা কামাল শক্তপোক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। ওই ছবি ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর আত্মপক্ষ সমর্থনে ফেসবুকে পোস্ট করার অভিযোগে প্রবাসী এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে দাবি করেন কৌশলী এই জনপ্রতিনিধি। কিন্তু নিশ্চিত হওয়া যায়নি আদৌ তিনি মামলা করেছন কী না।

নগ্নতার সত্যতা এবং কী ভাবে এই ছবি ধারণ করা হলো সেই বিষয়ে জানতে নাছিমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন- বিষয়টি সমুলেই ষড়যন্ত্র। আর ছবিটি সুপার এডিটিং করা। কী কারণে ছবি এডিট করে ফেসবুকে ছেড়ে দিতে একজন প্রবাসী যুবকের স্বার্থ কী সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এবং সংবাদকর্মীদের এত বাড়াবাড়ির প্রয়োজনীয়তা কোথায় তা নিয়ে উল্টো প্রশ্ন রাখেন।

ঝালকাঠির একাধিক সূত্র জানায়- পৌরসভার ৬, ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর নাছিমা কামাল জেলা যুবমহিলা লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হওয়ায় তার দাপট কম নয়। তার অনেক কু-কীর্তি ঘুরে-ফিরে আলোচনায় আসলেও এবারই প্রথম ফেসবুকে মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। সূত্রগুলোর দাবি- সুমিষ্টভাষী ও অনিন্দ্য সুন্দরী নাছিমা কামাল যে কোন ব্যক্তিকে সহসাই আপন করে নেওয়ার সক্ষমতা রাখেন। তবে কোন সাধারণ ব্যক্তি নন, ধনাঢ্য বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের টার্গেট করে প্রথমে যোগাযোগ পরবর্তীতে সম্পর্ক গভীরতায় পৌছে যায়। বিনিময়ে বিভিন্ন উপঢৌকন এবং রাজনৈতিকভাবে তদ্বির বাণিজ্য করে বেশ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। কিন্তু ধরা দেন না অদৃশ-দৃশ্যমান সম্পদের পরিমাণ কত। প্রশ্ন উঠেছে- প্রবাসী ওই যুবকের কাছে কী ভাবে এই নেত্রীর নগ্ন ছবি আসলো? ছবির ধরন দেখে অনুমান করা যায় সম্ভবত প্রবাসী যুবকের সাথেও তার গভীর সখ্যতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কোন কারণে সম্পর্কের চ্ছেদ ঘটায় আক্রোশমূলক ছবিটি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। প্রবাসী ওই যুবকের পরিচয় ও ঠিকানা নিশ্চিত হওয়ায় যায়নি।

নাছিমা কামাল বরিশালটাইমসকে জানান- ওই যুবকের বিরুদ্ধে তিনি তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করেছেন। যা সিআইডিতে তদন্তধীন রয়েছে। ওই মামলায় শুধু প্রবাসী যুবক নয়, আরও কয়েক ব্যক্তিকে আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করে।নাছিমা ওই মামলার আসামিদের নাম-পরিচয় নিয়ে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি প্রবাসী ওই যুবককে তিনি চেনেন কী না সেই বিষয়ে এই নেত্রী সঠিক কোন তথ্য প্রকাশ করেননি। এই ঘটনা মাস তিনেক আগের বলে তিনি দাবি করেন। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ওই ছবিটি ফেসবুকে ঘুরে-ফিরে টাইমলাইনের সামনে আসলে বিষয়টি নিয়ে ঝালকাঠির সামাজিক-রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করে। যদিও জেলা আওয়ামী লীগ তাদের অঙ্গ-সংগঠনের এই নেত্রীর বিষয় নিয়ে নিশ্চুপ। সেক্ষেত্রেও ধারণা মেলে জেলা আ’লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে এই নারী নেত্রীর শক্ত যোগাযোগ রয়েছে। তার স্বামী কামাল হোসেন জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। এই যুবদল নেতার সাথেও ক্ষমতাসীন মহলের সাথে উঠবসের কথা শোনা গেছে। নচেৎ এত আলোচনা-সমালোচনা তবুও কেন নিজ সংগঠনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন বিবৃতি বা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, এমন প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সুশীল সমাজ।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির এই নেত্রীর ব্যক্তি চরিত্র নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে বলেন- এনিয়ে কয়েকদফা সালিশ বৈঠক হয়েছে।ওই  বৈঠকে নাছিমা কামাল তার ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী অপর এক নেত্রীর দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন। ওই নেত্রী দৃঢতার সাথে এই অভিযোগ অস্বীকার করলে ওখানেই ক্ষ্যান্ত হয়ে যায় সমস্যার সুরহার সাংগঠনিক উদ্যোগ।

এদিকে নাছিমা কামালও আত্মপক্ষ সমর্থনে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে অনেকটা নিশ্চুপ ছিলেন। এখন মিডিয়া ওই ছবিটি নিয়ে ঘাটাঘাটি করায় এই নারী নেত্রী বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাপ করছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আবার ঝালকঠি মিডিয়াকে ম্যানেজ করার কৌশলও নিয়েছেন বলে তথ্য মিলেছে। কিন্তু ক্ষিপ্ত হচ্ছেন বরিশালের সংবাদকর্মীরা তার কাছে প্রশ্ন রাখায়। তার ভাষ্য, বিষয়টি তার ব্যক্তিগত, সেখানে মিডিয়াকর্মীদের এত বাড়াবাড়ি কেন? মিডিয়াকর্মীরা না কী এই সংবাদ প্রকাশ করার ভয়ভীতি তার কাছে অর্থও  চেয়েছে বলে দাবি করেন। তারা কারা তার উত্তর দিতে না পারায় ধারণা করা হচ্ছে এই নেত্রী  সংবাদকর্মীদের প্রশ্নবান থামাতে এই কৌশলী প্রয়োগ করছেন। যে কারণে নাছিমা কামালের সাথে এ প্রতিবেদকদ্বয়ের সেলফোনে দীর্ঘ আলাপচারিতার রেকর্ড সংরক্ষণ  করেছে। একপর্যায়ে নাছিমা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন- তিনি যদি নষ্ট জগতের একজন হয়ে থাকেন তবে কী ভাবে তিনবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেন। এখানে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথা বারবার উল্লেখ করে নগ্ন ছবি নিয়ে তাকে হেয় করার প্রচেষ্টা চলছে বলে মনে করেন।

ঝালকাঠির সূত্রগুলো বলছে- নাছিমা কামালের আরও অনেক কু-কীর্তি রয়েছে, যা আগামীতে মিডিয়া দপ্তরে পৌছে যাবে। তখন তিনি জনপ্রিয়তা বা ষড়যন্ত্রের বিষয়ে কী ব্যাখ্যা দেবেন। পাপিয়ার পালা শেষ এবার নাছিমাকে নিয়েই এখন ঝালকাঠি শহর ‘টক অব দ্যা টাউনে’ পরিণত হয়েছে।’