২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

রকেট হামলায় নিহত নৌ প্রকৌশলী হাদিসুরের পরিবারে নেই ঈদের উচ্ছ্বাস

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৫৫ অপরাহ্ণ, ০৩ মে ২০২২

রকেট হামলায় নিহত নৌ প্রকৌশলী হাদিসুরের পরিবারে নেই ঈদের উচ্ছ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: প্রতিবছরের মতো আনন্দ-উচ্ছ্বাস নিয়ে এসেছে ঈদুল ফিতর। কিন্তু ঈদের আনন্দ নেই ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলায় নিহত নৌ প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের পরিবারে। ঈদের আনন্দে সবাই যখন মাতোয়ারা, তখন হাদিসুরের গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগীতে চলছে সন্তান হারানোর আর্তনাদ, আহাজারি। স্বজনদের আহাজারিতে এখনো শোকে স্তব্ধ গোটা বাড়ি।

প্রতিবছর ঈদে আনন্দ-উল্লাসে ভরপুর থাকা বাড়িটি এবারের ঈদে সুনসান নীরব। কারণ এবার আর হাদিসুর নেই। আনন্দের বিপরীতে থেমে থেমে ভেসে আসে আদরের ছেলেহারা মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ-আহাজারি। কিছুতেই থামছে না তার কান্না। দুই মাস আগে মারা যান হাদিস। তবু মাতম কমেনি। বরং ঈদের আগমনে সন্তান হারানোর বেদনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। হাদিসকে ছাড়া যেন কোনো কিছু কল্পনা করা যেত না। আনন্দ-উৎসবে সবকিছুতেই ছিল তার ছোঁয়া। এখন সেই পরিবারে ঈদুল ফিতরে নেই কোনো আনন্দের ছোঁয়া। থেমে থেমে হাদিসুরের বাড়ি থেকে বাতাসে ভেসে আসে হাদিসুরের মা আমেনা বেগমের কান্নার শব্দ।

আমেনা বেগম বলেন, চার বছর আগে হাদিসুরের সাথে সব শেষ ঈদ করেছি। তারপর আর হাদিসুর ছুটি পায়নি। এবার ঈদে ছুটিতে বাড়িতে এসে বাবা-মা ও স্বজনদের সাথে ঈদ করার কথা ছিলো হাদিসুরের। কিন্তু হাদিসুর আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। আমাদের আর ঈদ নেই।

বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে হাদিসুরের বাবা আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার। রাজ্জাক হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন- একটি বেসরকারি মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে চাকরি করে তিন ছেলে ও এক মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে হাদিসুরের পড়ার জন্যই ব্যয় করতে হয়েছে প্রচুর টাকা। স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে বহন করেছেন হাদিসুরের খরচ। সব শেষ জমি বিক্রি করে হাদিসুরের পড়ালেখার সমাপ্তি হয়। পেয়ে যায় চাকরি। যখন হাদিসুর বেতন পেয়ে ধারদেনা শোধ করা শুরু করেন, তখন প্রাণ হারায় হাদিসুর।

হাদিসুরের ছোটো ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স সাংবাদিকদের বলেন, বাবা-মা বারবার কান্না করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা সান্ত্বনা দিতে গিয়েও ব্যর্থ হই। গত ৪ বছর যেনতেন ভাবে ঈদ পালন করেছি আমরা। এবার ঝমকালো আয়োজনে ঈদ পালন করার কথা ছিলো। কিন্তু আমাদের সব শেষ হয়ে গেলো।

তিনি আরও বলেন- ছোটবেলা থেকে বাবা-মা শুধু কষ্টই করেছেন। যখন সুখ এসে বাড়ির দরজায় দাঁড়ালো, তখনই আমার ভাই নিহত হলো। আমাদের কষ্ট রয়েই গেলো। ভাই আমাদের সব খরচ বহন করতো। এখন আমাদের মাথার উপরে কেউ নেই।

নৌ প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে। গত ২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ রকেট হামলার শিকার হলে নিহত হন হাদিসুর রহমান।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, হাদিসুরের বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন