১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

রহমতপুরে কে হাসবেন বিজয়ের শেষ হাসি?

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:৫৫ অপরাহ্ণ, ২৭ নভেম্বর ২০২১

রহমতপুরে কে হাসবেন বিজয়ের শেষ হাসি?

আরিফ আহমেদ মুন্না রাত পোহালেই রোববার ২৮ নভেম্বর বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নে ৩ জন এবং স্বতন্ত্র ২ জনসহ মোট ৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে ৫ জন প্রার্থী হলেও ভোটারদের আলোচনায় রয়েছেন ৩ জন। শেষ পর্যন্ত মূল ভোটযুদ্ধ হবে ৩ জন প্রার্থীর মধ্যে-এমনটাই মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। রহমতপুরে ৩ জন হেভিওয়েট প্রার্থীর শেষ মুহূর্তের লড়াই এখন তুঙ্গে। শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত তারা জনসম্মুখে সর্বশেষ প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। উঠান বৈঠক, পথসভা আর গণসংযোগকালে তারা ভোটারদের দিয়েছেন নানান প্রতিশ্রুতি।

২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৃধা মুহঃ আক্তার-উজ-জামান মিলন বলেছেন, ‘জনপ্রতিনিধি না হয়েও বিগত দিনে আমি রহমতপুর ইউনিয়নের নদী ভাঙন প্রতিরোধ এবং বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান ও চাকরি ক্ষেত্রে অবদান রেখেছি। এছাড়াও সরকারি বিভিন্ন ভাতা প্রদান এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুঃস্থ-অসহায় মানুষকে বিভিন্ন ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি বাবুগঞ্জের রহমতপুর ইউনিয়নকে উন্নয়নের একটি মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়তে চাই। আপনারা ২৮ নভেম্বর সারাদিন নৌকায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে একবারের জন্য আমাকে চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ দিন। আমি ওয়াদা দিচ্ছি, এই রহমতপুর হবে বাংলাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন।’ শুক্রবার নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে গণসংযোগসহ সংক্ষিপ্ত পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত প্রার্থী উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক মোঃ শাহিন হোসেন বলেছেন, ‘আমি কোনো ধনীর দুলাল হিসেবে নির্বাচন করতে আসিনি। আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ কৃষক ছিলেন। ছোটবেলায় আমার মা মারা যাবার পরে অনেক কষ্ট করে মাস্টার্স পাস করেছি, মানুষ হয়েছি। তাই সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট আমি বুঝি। আমি জীবনে কখনো কারো সাথে বেয়াদবি করিনি। কখনো কোনো দুর্নীতি কিংবা অন্যায় কাজে জড়িত হইনি। তাই হাতুড়ি মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা আমাকে জয়যুক্ত করলে শরীরের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত আপনাদের পাশে থেকে খেদমত করার ওয়াদা করলাম।’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার রামপট্টি বাজার সংলগ্ন নির্বাচনী উঠান বৈঠকে তিনি এই অঙ্গীকার করেন।

অপরদিকে নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সরোয়ার মাহমুদ বলেছেন, ‘জনগণের ইচ্ছায় তাদের খেদমত করার জন্য আমি দ্বিতীয়বার নির্বাচন করতে এসেছি। গত ৫ বছরে আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি টাকাও লুটপাট করিনি বরং সৎপথে উপার্জিত আমার বড়ছেলের টাকা এনে বিভিন্ন সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের কাজে খরচ করেছি। বিগত দিনে আমি সাধ্যমতো রহমতপুর ইউনিয়নের মানুষকে সেবা দিয়েছি। কারো সাথে কখনো খারাপ আচরণ করিনি। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আবার ভোটের নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে আমাকে আনারস মার্কায় পুনরায় জয়যুক্ত করবে জনগণ।’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লোহালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একমাত্র উঠান বৈঠকে তিনি এমন প্রত্যাশার কথাই ব্যক্ত করেন।

এছাড়াও রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী অপর ২ প্রার্থী হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মাওলানা আবদুল হাকিম এবং রহমতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল শিকদার। মনোনয়নপত্র দাখিলের পরে প্রথম দিকে বেশ জোরেশোরে প্রচার-প্রচারণা চালালেও শেষ দিকে এসে নির্বাচনী দৌড়ে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েন সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল শিকদার। এদিকে ইসলামী আন্দোলনের দলীয় নির্দিষ্ট পরিমান ভোট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে হাতপাখার প্রার্থী মাওলানা আবদুল হাকিমকে-এমনটাই ধারণা নির্বাচন বিশ্লেষকসহ সাধারণ ভোটারদের। তবে তাদের ২ জনের কেউই নির্বাচনী মাঠ ত্যাগ করেননি। হেভিওয়েট প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে তারাও লড়বেন বলে জানিয়েছেন।

রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাঠে উত্তাপ ছড়ানো ৩ হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত কে হাসবেন বিজয়ের শেষ হাসি-সেই উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে ২৮ নভেম্বর রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত। এবারই প্রথমবারের মতো রহমতপুর ইউনিয়নে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটদানের অভিজ্ঞতা লাভ করবেন রহমতপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ২১ হাজার ৫৫৩ জন ভোটার। রহমতপুর ইউনিয়নের ভোটারদের কাছে ইভিএম পদ্ধতি নতুন হওয়ায় অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটারের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা, শঙ্কা এবং অনিশ্চয়তা কাজ করছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনসহ ভোটারদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা এবং নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আমীনুল ইসলাম।

13 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন