১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

রাজধানীতে আরেক রিফাতকাণ্ড (ভিডিওসহ)

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ, ৩১ মে ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন :: গত বছরের ২৬ জুন সকালে বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে রিফাত শরীফকে তার স্ত্রী মিন্নির সামনেই কুপিয়ে জখম করে একদল লোক। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় খুব দ্রুত; চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে; বিবেকবান প্রতিটি মানুষ স্তম্ভিত হয়ে পড়েন খুনিদের উন্মত্ততা দেখে। সে ঘটনার ভয়াবহতা মানুষের মন থেকে এখনো মুছে যায়নি। এরই মধ্যে ঘটেছে আরেক রিফাতকাণ্ড। এবার খোদ রাজধানীতে, সেই একই রকম পৈশাচিকতায়। ঈদুল ফিতরের আগের দিন বিকালে ঘটে যাওয়া এবারের কাণ্ডের শিকার হতভাগ্য যুবকের নাম মামুন (২৬)। তিনি এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের ২৮ নম্বর বেডে বাঁচার জন্য লড়াই করছেন।

স্রেফ বিরিয়ানি কেনাকে কেন্দ্র করে বাদানুবাদের জেরে স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতিতে জড়িত মাদককারবারি কসাই সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা মামুনের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। অথচ মামুন কিছুই জানতেন না। তর্ক হয়েছিল তার এক বন্ধুর সঙ্গে। সেই বন্ধুকে না পেয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মামুনেরর ওপর হামলা চালানো হয়। হামলার পুরো দৃশ্য ধরা পড়েছে ঘটনাস্থলের পাশেই অবস্থিত একটি ভবনের বাসিন্দার মোবাইল ফোনে। সেই ক্লিপ এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতেও। রাজধানীর পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের ৪ নম্বর সড়কে ঘটেছে ন্যক্কারজনক এ হামলা।

এ ঘটনায় মামুনের বড় ভাই নাসিরউদ্দিন মিলন বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার পল্লবী থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা করেছেন। আসামি করেছেন স্থানীয় সন্ত্রাসী মো. সালাউদ্দিন ওরফে কসাই সালাউদ্দিন, হানিফ, ফয়সাল হোসেন ও রাজুসহ অচেনা ৭ থেকে ৮ জনকে। প্রাপ্ত ভিডিওতে রাস্তায় ফেলে মামুনকে গরু কাটা ছুরি দিয়ে নির্মমভাবে কোপানোর দৃশ্য ভেসে উঠেছে। সেখানে এজাহারভুক্ত ৪ আসামি ছাড়াও অচেনা ১২ থেকে ১৩ যুবকের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে ৬ দিন। কিন্তু গতকাল শনিবার বিকাল পর্যন্ত হামলাকারীদের টিকিটিও ছুঁতে পারেনি পুলিশ। অথচ বাদী বলছেন আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাসায় ঘুমাচ্ছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে পুলিশ তাদের ধরছে না।
এদিকে নিরপরাধ মামুনের ওপর হামলাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে স্থানীয়রা। কসাই সালাউদ্দিনসহ অন্য হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও তাদের শাস্তির দাবিতে গত শুক্রবার বিকালে মিছিল নিয়ে পল্লবী থানার সামনে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলে সেøাগান দিতে দেখা গেছে তাদের।
অন্যদিকে বাদীর অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই মো. আসাদুজ্জামান আসাদ গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, আসামিরা পালিয়ে থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের ধরতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

জানা গেছে, পাঁচ বছর আগেও পল্লবীর মুসলিম বাজার এলাকায় ফুটপাতে বসে বিরিয়ানি ও মাংস বিক্রি করতেন কসাই সালাইউদ্দিন। ধীরে ধীরে জড়িয়ে পরেন স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতিতে। দোকানের আড়ালে মাদকের কারবার চালিয়ে অল্প সময়েই টাকার কুমির বনে যান তিনি। এখন মিরপুরেই সালাউদ্দিনের ৩টি বাড়ি; একাধিক ফ্লাট, ২টি দামি প্রাইভেটকার; রাইস এজেন্সি, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বিরিয়ানির দোকানসহ ১০টিরও বেশি দোকান। ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের কিনে দিয়েছেন দামি মোটরসাইকেলও। থানা পুলিশের সঙ্গেও সালাউদ্দিনের রয়েছে গভীর সখ্য। তাই আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ।

 

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন