২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

রাজাপুরে শিকলে বাঁধা সেই মা এখন হাসপাতালে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:২০ অপরাহ্ণ, ১৩ মে ২০১৯

‘একটু শিকলের বাঁধন খুলে দাও, আমি কোথাও যাবো না। আমাকে এভাবে বেঁধে রেখ না, আমার ভাল লাগে না। কেউ ভাল করে খেতেও দেয় না, তরকারি দেয় না। আমায় একটু মিষ্টি খেতে দাও।’ ভাঙা ভাঙা শব্দে এভাবেই বিলাপ করছিলেন ঝালকাঠির রাজাপুরের উত্তর বারবাকপুর গ্রামের বৃদ্ধা রিজিয়া বেগম।

তার এ দুঃখ দুর্দশা ও দুর্বিসহ জীবনের ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে উপজেলা প্রশাসনের।

সোমবার (১৩ মে) সকাল পৌন ১১টার দিকে ওই উপজেলার উত্তর গ্রামের নুর মোহাম্মদের বাড়ির মসজিদ সংলগ্ন পূর্ব পাশের ইউনুচ মৃধার পরিত্যক্ত ভিটায় অরক্ষিত অবস্থায় থাকা ওই শিকল বন্দি মা রিজিয়া বেগমের কাছে যান ইউএনও সোহাগ হাওলাদার। খুলে দেন তার কোমড়ের শিকল ও তালা।

চার বছরের শিকল বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন ৭৫ বছর বয়সী রিজিয়া বেগম। এরপর তার স্বজনদের ৫শ টাকা গাড়িভাড়া দিয়ে তাকে দুপুরে রাজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি এবং চিকিৎসার পরামর্শ দেন।

কিন্তু যে সন্তানদের তিলে তিলে বড় করে তুলেছেন তারাই তাদের মাকে অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পেরে শিকলবন্দি রেখেছিলেন। রেখে দিয়েছিল একটি জীর্ণ ঘরে। সারাদিনে খাবার জোটে মোটে একবেলা। এভাবেই চার বছর ধরে দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি।

রাজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের টিএইচও ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন বন্দি থাকায় বৃদ্ধ রিজিয়া বেগম দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাকে ভিটামিন ও ঘুমের ঔষধ দেয়া হচ্ছে। তার এখন প্রচুর রেস্ট নেয়া প্রয়োজন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তার মানুষিক পরিস্থিতি বুঝে উন্নত চিকিৎসা দেয়া হবে। সবচেয়ে ভাল হয় বরিশাল, খুলনা বা ঢাকা শেরে বাংলা নগর মানুষিক স্বাস্থ্য ইনিস্টিটিউট চিকিৎসা দিলে ভাল হয়।

জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে স্বামী আব্দুল নিজাম উদ্দিন শেখকে হারান রিজিয়া। তার এক ছেলে আব্দুর রাজ্জাক শেখ পেশায় কামার এবং মেয়ে সালমা বেগম গৃহিণী। সালমার স্বামী উপজেলার রোলা গ্রামের দিনমজুর শুক্কুর হাওলাদার। আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় মেয়ে সালমাও মায়ের তেমন খোঁজখবর নিতে পারেন না। ছেলে রাজ্জাকও কামারের কাজ করে কোনমতে চার সন্তানের পরিবার নিয়ে অতিকষ্টে সংসার চালাচ্ছেন।

চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসা রিজিয়ার পুত্রবধূ নাছিমা বেগম জানান, ইউএনও স্যার ৫শ টাকা দিয়েছে তা দিয়ে তাকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এনে ভর্তি করেছি। আমরা চাই সকলের এ সহযোগীতা অব্যাহত থাকুক এবং তার সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি সুস্থ্য হোক। আমরা সবাই গরীর নিজেরাই খেতে পারি না, তাই তাকে চিকিৎসা করাতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন