১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

শিরোনাম

রাতে এমপি শম্ভুর চেম্বারে মিন্নির আইনজীবীর বৈঠকে তোলপাড়!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:৩৩ অপরাহ্ণ, ২২ জুলাই ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরগুনা:: বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নাটকীয় মোড় নিচ্ছে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রধান সাক্ষী নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতারের পর থেকেই এ নাটকীয়তা শুরু। রোববার মিন্নির পক্ষে জামিন আবেদনের আগের রাতে তার আইনজীবী স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর চেম্বারে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় এমপি শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথও ছিলেন। এ বৈঠক নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কানাঘোষা চলছে।

মিন্নির পরিবারের দাবি, তাকে (মিন্নি) ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। প্রভাবশালীদের চাপে রয়েছে গোটা পরিবার। বাড়ির আশপাশে অস্ত্রধারীরা ঘুর ঘুর করছে। এমনকি প্রতিপক্ষের হুমকিতে মিন্নির ছোট ভাইবোনের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

গ্রেফতারের পর মিন্নিকে যেদিন আদালতে হাজির করা হয়, সেদিন তার পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি। মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোরের দাবি- তিনি তিনজন আইনজীবী ঠিক করেছিলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের হুমকিতে তারা কেউ মিন্নির পক্ষে দাঁড়াননি।

এদিকে মিন্নি আদালতে রিফাত হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মিন্নির বাবার দাবি, তার মেয়েকে জোর করে আদালতে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে।

মোজাম্মেল হক কিশোর এ হত্যা মামলার এক নম্বর সাক্ষীকে (মিন্নি) আসামি করা ও রিমান্ডে নেয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে দায়ী করে আসছেন। শুক্রবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, ‘সবকিছুই শম্ভু বাবুর খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে রক্ষা করার জন্য আমার মেয়েকে বলি দেয়া হচ্ছে।’

এদিকে মিন্নির পক্ষে জামিন আবেদনের আগে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ল’ চেম্বারে যান। তার সঙ্গে আধা ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে ছিলেন শম্ভুপুত্র সুনাম দেবনাথও। এ নিয়ে শহরে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

পরে রোববার সকালে মিন্নিকে আদালতে তোলা হয়। বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী রোববার শুনানি শেষে তার আবেদন নামঞ্জুর করেন। তবে এদিন ঢাকা ও বরগুনার ১৩ আইনজীবী মিন্নির পক্ষে আদালতে দাঁড়ান।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর এ হত্যা মামলার এক নম্বর সাক্ষীকে (মিন্নি) আসামি করা ও রিমান্ডে নেয়ার জন্য সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে দায়ী করে আসছেন। তার ছেলে সুনামের বিরুদ্ধে কিশোরের অভিযোগ, তার জন্যই এতদিন মিন্নির পক্ষে আদালতে দাঁড়াননি আইনজীবীরা। এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু সমালোচনার পর বরগুনা ও ঢাকার আইনজীবীদের একটি অংশ মিন্নির পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। পরে শনিবার বরগুনা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী আসলামকে মিন্নির আইনজীবী নিয়োগ করেন কিশোর।

সেই আসলাম রাতে বরগুনার উকিলপট্টি সড়কে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ল’ চেম্বারে যান। বরগুনা বারের সভাপতি আবদুর রহমান নান্টুর সঙ্গে ৯টা ৪৫ মিনিটে তার চেম্বারে যান তিনি। তারা চেম্বারের পেছনের কক্ষে ঢোকেন। ওই কক্ষে আগে থেকেই ছিলেন এমপি শম্ভু, ছেলে সুনাম দেবনাথ ও বরগুনার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আক্তারুজ্জামান বাহাদুর। নান্টু-আসলাম কক্ষের ভেতরে ঢোকার পর পরই সুনাম ভেতর থেকে কক্ষের দরজা আটকে দেন।

কক্ষের বাইরে তখন অপেক্ষায় ছিলেন রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ। ৯টা ৫৩ মিনিটে সুনাম কক্ষ থেকে বের হয়ে দুলাল শরীফের সঙ্গে কানে কানে কথা বলেন। এর পর দুলাল শরীফ চেম্বার থেকে দ্রুত বের হয়ে যান। রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর ১০টা ১৫ মিনিটে নান্টু, আসলাম ও আক্তারুজ্জামান ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার দুপুরে আইনজীবী আসলাম বলেন, ‘নান্টু ভাই আমাকে নিয়ে গেছেন। এটি সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল।’ রিফাত হত্যা মামলা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তিনি (শম্ভু) বরগুনা আসলে আমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যাই। এ ছাড়া অন্য কিছু নয়।’ এমপি আপনাদের ডেকেছিলেন, নাকি আপনারা স্বেচ্ছায় তার সঙ্গে দেখা করতে গেছেন এমন জবাবে আসলাম বলেন, ‘এমপি বার সভাপতিকে (নান্টু) ফোন দিয়েছিলেন, তিনি (নান্টু) আমাকে ডেকে নেন।’

জানতে চাইলে আবদুর রহমান নান্টু বলেন, আমার আপন ভাগিনা মান্নান শুক্রবার এমপির সঙ্গে একই বিমানে বরিশাল এসেছেন। সে বিষয় নিয়ে এমপি আলাপ করেছেন। রিফাত হত্যা মামলা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে মিন্নির বাবা কিশোরের মোবাইলে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে ২৬ জুন সকালে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকালে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ পর্যন্ত এজাহারে নাম থাকা ৮ আসামি ও সন্দেহভাজন ৭ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে ১৪ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। এক নম্বর সাক্ষী মিন্নিকে ১৬ জুলাই গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন